করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস, পরীক্ষা, মূল্যায়ন ও ভর্তি কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে, গুণগত মান ইউজিসির দেয়া গাইডলাইন মেনে অনলাইনে ক্লাস ও পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক কাউন্সিল স্ব-স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টি বাস্তবায়ন করবেন। তবে, করোনাকালে সেমিস্টার ফিসহ অন্যান্য ফি আদায়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার্থীদের চাপ প্রয়োগ করতে পারবে না।
বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি), সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
সভায় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাববুব হোসেন, ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ, বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির, ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর, সদস্য অধ্যাপক দীল আফরোজাসহ একাধিক পরিচালক ভিডিও কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেন। ইউজিসি সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সভার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে ইউজিসি সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, শিগগিরই ইউজিসি থেকে অনলাইনে ক্লাস ও পরীক্ষা নেয়ার একটি গাইডলাইন প্রকাশ করা হবে। এছাড়া ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নির্দেশনা দেবে। ইউজিসি এসব গাইডলাইন মেনে ক্লাস ও পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা ছাড়াই সেমিস্টার শেষ করে সার্টিফিকেট দেয়া হলে তা বাতিল করতে বলা হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সেমিস্টার ফিসহ অন্যান্য ফি আদায়ের চাপ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সভায়। এছাড়া যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সক্ষমতা অর্জন করতে পারেননি তাদেরকে দ্রুত সক্ষমতা অর্জনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা অনলাইনে নেয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শস্য একাডেমিক কাউন্সিল সিদ্ধান্ত নেবে বলেও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সভায়।
জানা গেছে, অনলাইনে পরীক্ষা নেয়া হলেও বিশ্ববিদ্যালয় খুললে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করা অথবা অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে নম্বর প্রদান করা, কুইজ আয়োজন, ওপেন বুক পরীক্ষা ও গুণগত মান বজায় রেখে স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাধ্যমে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করার পরামর্শ দেন শিক্ষামন্ত্রী। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে অনলাইন পদ্ধতিতে নতুন ভর্তি শুরুর প্রস্তাব করা হলে আলোচনার বিষয়টি সুরাহা করার পরামর্শ দেন তিনি। আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ইউজিসির নির্দেশনা মেনে সব কার্যক্রম করার নির্দেশ দেন শিক্ষামন্ত্রী। এছাড়া বন্ধের মধ্যে শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত, বেতন কমিয়ে না দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এ সময় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে কতদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হবে তা বলা যাচ্ছে না। এ জন্য দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে অনলাইনের আওতায় ক্লাস কার্যক্রম শুরুর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যাদের সক্ষমতা নেই ইউজিসিরর সহযোগিতায় সেই পরিবেশ তৈরি করতে বলা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও অনলাইন কার্যক্রম চালু রাখতে হবে। ছুটি দীর্ঘায়িত হলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন করে সেশনজটে না পড়তে পরীক্ষা ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের প্রস্তুতি নেয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন দীপু মনি।
করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশের সকল সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনির্ধারিত ছুটি ঘোষণা হওয়ায় নতুন করে সেশনজট সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলমান রাখতে শিক্ষামন্ত্রী, ইউজিসি সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভা করেছেন। বিকেল সোয়া ৪টায় শুরু হয়ে সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় এ সভা শেষ হয়।