মাধ্যমিক স্তরে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের এ বছরের প্রথম সাময়িক পরীক্ষা নাও নেওয়া হতে পারে। করোনা মহামারির সংক্রমণ অব্যাহত থাকায় আসছে মার্চের আগে সরাসরি শ্রেণিপাঠদান শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই শিগগিরই ফের শুরু হবে টেলিভিশন ও বেতারের মাধ্যমে নতুন শ্রেণির পাঠদান প্রচার। এ অবস্থায় মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের আগামী এপ্রিল মাস পর্যন্ত যতটুকু পড়ানো হবে, তার ওপর ভিত্তি করে সাতটি বিষয়ে অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হবে। এজন্য এরই মধ্যে কারিকুলাম ম্যাপিং করে এ সাতটি বিষয়ের অ্যাসাইনমেন্ট নির্দেশনা তৈরি করেছে 'জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। শিগগিরই মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে এই অ্যাসাইনমেন্ট তৈরির নির্দেশনা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দেওয়া হবে। সংশ্নিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
যে সাতটি বিষয়ের অ্যাসাইনমেন্ট শিক্ষার্থীদের তৈরি করতে হবে তা হলো- বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, বিজ্ঞান, কৃষিশিক্ষা এবং গার্হস্থ্য বিজ্ঞান।
গত রোববার নিজ দপ্তরে বসে এনসিটিবি চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির কারিকুলাম ও সিলেবাস ম্যাপিং করে সাতটি বিষয়ের প্রণীত সিলেবাস ও অ্যাসাইনমেন্টের হার্ড এবং সফট কপিসহ অ্যাসাইনমেন্ট তৈরির দিক-নির্দেশনা তৈরি করে ১০ জানুয়ারি তা মাউশি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন তারা এগুলো দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষাবর্ষের প্রথম তিন মাসের পাঠদান শেষে চতুর্থ মাসে গিয়ে মাধ্যমিক স্তরের প্রথম সাময়িক পরীক্ষা প্রতি বছর নেওয়া হয়। করোনার কারণে আগামী তিন মাস স্কুল-কলেজ খোলা সম্ভব না হলে এই অ্যাসাইনমেন্টের ভিত্তিতেই শিক্ষার্থীদের শিখনফল মূল্যায়ন করা হবে। সেক্ষত্রে এ বছরের প্রথম সাময়িক পরীক্ষা আর নাও হতে পারে।
এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) প্রফেসর মো. মশিউজ্জামান মঙ্গলবার বলেন, গত বছর যখন করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হয়েছে, তখন শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার মধ্যে রাখতে সরকারের নির্দেশে আমরা কারিকুলাম ম্যাপিং করে বিশেষ অ্যাসাইনমেন্ট তৈরির নির্দেশনা প্রস্তুত করে দিয়েছিলাম। মাউশি আমাদের জানিয়েছে, এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে খুব সাড়া পড়েছে। সারাদেশের শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে এই অ্যাসাইনমেন্টের কাজ শেষ করেছে। তিনি বলেন, এপ্রিলের মাঝামাঝি চৈত্রসংক্রান্তি, পহেলা বৈশাখ ও এরপর রমজানের ছুটি রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। এ কারণে ওই পর্যন্ত সময় ধরে অ্যাসাইনমেন্ট তৈরির কাজ দেওয়া হচ্ছে। প্রথম সাময়িক পরীক্ষা বাতিল হবে কিনা সেটি তিনি বলতে পারছেন না। এনসিটিবি চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কবে খুলছে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তবে এ বন্ধ সময়ের মধ্যে আমরা এপ্রিল পর্যন্ত একটি পাঠ পরিকল্পনা তৈরি করেছি। সেটির ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হচ্ছে। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে শিক্ষকরা এসব অ্যাসাইনমেন্ট গ্রহণ করবেন এবং শিক্ষার্থীর শিখনফলের উন্নতি বা অবনতি তারা মূল্যায়ন করতে পারবেন।
মাউশির সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক-২) দুর্গা রানী সরকার বলেন, অ্যাসাইনমেন্ট সংক্রান্ত এনসিটিবির পাঠানো নথি তারা পেয়েছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলে পরবর্তী কার্যক্রম হাতে নেবেন।
রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম বলেন, শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়ার উদ্যোগটি শুভ। এতে তারা পড়াশোনার মধ্যে থাকবে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া দরকার বলেও তিনি অভিমত দেন।
এনসিটিবি সূত্র জানায়, এপ্রিল পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে মূল্যায়ন নির্দেশনা এবং অ্যাসাইনমেন্ট তৈরির জন্য বেশকিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এনসিটিবি থেকে। শিক্ষার্থীদের নোট-গাইড দেখে অ্যাসাইনমেন্ট লিখতে নিষেধ করা হয়েছে। নোট গাইড দেখে অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করা হলে তা বাতিল করা হবে বলেও জানানো হয়েছে। এক্ষেত্রে আবারও সেই অ্যাসাইনমেন্ট নতুন করে লিখে জমা দিতে হবে। একই সঙ্গে মূল্যায়নের রেকর্ড সংগ্রহ ও সংরক্ষণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে। অনলাইনে বা সামাজিক দূরত্ব মেনে শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া এবং গ্রহণ করতে বলা হয়েছে স্কুল ও মাদ্রাসাগুলোকে। এ সময় শিক্ষার্থীদের কোনো প্রকার পরীক্ষা বা বাড়ির কাজ না দিতেও বলা হয়েছে। অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে দুর্বল শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষে তাদের শিখনফল অর্জনে পদক্ষেপ নিতেও এতে সুপারিশ করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের অতি উত্তম, উত্তম, ভালো ও অগ্রগতি প্রয়োজন ইত্যাদির মাধ্যমে অ্যাসাইনমেন্টগুলোর শাব্দিক মূল্যায়ন করতে বলা হয়েছে শিক্ষকদের।