হতাশার অন্ধকারে মিলিয়ে গেল আনন্দ - দৈনিকশিক্ষা

হতাশার অন্ধকারে মিলিয়ে গেল আনন্দ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বিসিএসে উত্তীর্ণ সন্তানদের দেশ সেরা অর্জনে পরিবারগুলো একদিন আনন্দে মেতে উঠেছিল। এখন পরিবারগুলোই নিমজ্জিত হতাশার অন্ধকারে, ভুগছে প্রতিবেশী ও স্বজন-বন্ধুদের সন্দেহ-ভ্রুকুটির ছোবলে। সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সুপারিশ করার পরও চূড়ান্ত নিয়োগ হয়নি ৩৯তম বিসিএস উত্তীর্ণ ৫৭ জন চিকিৎসকের। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন বাহরাম খান।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, এমন পরিস্থিতিতে সন্তানের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ চিন্তায় কারো বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে, কারো মা হাইপারটেনশনে আক্রান্ত হয়েছেন। কারোর আটকে আছে পূর্ব নির্ধারিত বিয়ে। কেউবা বিয়ে করেও সংসার শুরু করতে পারছেন না।

প্রথমত, ৩৯তম বিশেষ বিসিএসে চূড়ান্ত উত্তীর্ণদের মধ্যে সাড়ে তিন শ জনের নিয়োগ নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। এর মধ্যে বেশির ভাগ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসংশ্লিষ্ট, তাঁদের সমস্যা সাময়িক সমাধানের পথে রয়েছে বলে জানা গেছে। কিন্তু আটকে গেছেন কোটার বাইরে থাকা উত্তীর্ণ ওই ৫৭ ডাক্তার। কোটার বাইরে থাকা উত্তীর্ণরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে হররোজ ধরনা দিচ্ছেন। এঁদের মধ্যে এমনও একজনকে পাওয়া গেছে, যাঁকে তাঁর শ্বশুরের রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে নিয়োগ দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। বিসিএস উত্তীর্ণ হয়েও নিয়োগ বঞ্চিত এসব প্রার্থীর অনেকেই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেছেন, তবে কেউ নিজের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।

এক নারী ডাক্তার বলেন, ‘পারিবারিকভাবে বিয়ে প্রায় ঠিক অবস্থায় ছিল। কিন্তু নিয়োগ না হওয়ায় ছেলে পক্ষ তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না এখন। অন্যদিকে প্রতিবেশীসহ আত্মীয়রা সন্দেহ করছে, সত্যি সত্যি আমি বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়েছি নাকি মিথ্যা বলেছিলাম।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত এক ডাক্তার জানান, উত্তীর্ণ হয়েও তাঁর নিয়োগ না হওয়ায় হাইপারটেনশনের রোগী বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘সন্তানের সাফল্যে বাবার খুশি এখন কলঙ্কে রূপ নিচ্ছে। অনেকে মনে করছে যে আমরা হয়তো কোনো খারাপ কাজের সঙ্গে যুক্ত। তাই নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। এই যন্ত্রণা বলে বোঝানো যাবে না।’

৩৯তম বিশেষ বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়েছেন স্বামী-স্ত্রী দুজনই। বিবাহিত হওয়ায় যোগাযোগের জন্য শ্বশুরবাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করেছিলেন স্ত্রী। তাঁর শ্বশুর অনেক আগে ইউনিয়ন পর্যায়ে বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আর এ কারণে তাঁকে নিয়োগ দেয়া হয়নি বলে তিনি ধারণা করছেন। তাঁর স্বামী বলেন, ‘আমার বাবা বিএনপির সমর্থক ছিলেন এটা সত্য। কিন্তু এই সামান্য অজুহাতে একজন মানুষের গত ২৮ বছরের অর্জনকে এভাবে আটকে রাখা মানতে পারছি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার বাবা তো নিষিদ্ধ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। এর জন্য আমাকে কেন ভুগতে হবে। এটা তো সংবিধানের লঙ্ঘন।’

অন্য এক প্রার্থী জানান, ভাইভা উত্তীর্ণের পর তাঁর জন্য মেয়ে দেখে বিয়ের কথা প্রায় পাকাপাকি ছিল। কিন্তু নিয়োগসংক্রান্ত জটিলতার প্রভাবে তাঁর বিয়ে এখন মাঝপথে আটকে আছে।

তিনি বলেন, ‘এলাকায় যেতে পারছি না। কী যে একটা অবস্থায় আছি বলে বোঝাতে পারব না। অনেক বন্ধু টিপ্পনী কাটে, আসলে আমি হয়তো বিসিএস পাসের মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিয়ের কাজটা সারতে চেয়েছিলাম।’

২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে ৩৯তম বিশেষ বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। একই বছরের আগস্টে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ৩৭ হাজারের বেশি পরক্ষার্থী অংশ নেন। এর মধ্যে ১৩ হাজার ৭৫০ জন উত্তীর্ণ হন। এরপর মৌখিক পরীক্ষা শেষে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে সরকারি কর্মকমিশনের পক্ষ থেকে চার হাজার ৭৯২ জনকে চাকরিতে নিয়োগ দেয়ার জন্য জনপ্রশাসন চূড়ান্ত সুপারিশ করে। এর ভিত্তিতে গত ১৯ নভেম্বর চার হাজার ৪৪৩ জনকে প্রথম নিয়োগ দেয় সরকার। দ্বিতীয় দফায় গত ৮ ডিসেম্বর আরও ১৬৮ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়। বাকি থাকে ১৮১ জন। এর মধ্যে ১২৪ জন মুক্তিযোদ্ধা কোটার। এই কোটাভুক্তদের প্রাথমিকভাবে চাকরিতে নেয়ার জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। কিন্তু বাকি ৫৭ জন চোখে অন্ধকার দেখছেন এখন। কারণ তাঁদের কিছুই হচ্ছে না।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ পদোন্নতি ও প্রেষণ (এপিডি) অনুবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উল্লিখিত ৫৭ জনের বিষয়ে সরকারের একটি সংস্থার পক্ষ থেকে নেতিবাচক প্রতিবেদন এসেছে। তাই আপাতত তাঁদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। এঁদের বিষয়ে আবারও সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছে নতুনভাবে তথ্য যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হবে।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সবাইকে নিয়োগ দিতে চায় সরকার। তবে কারো বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ থাকলে সেটাও জনস্বার্থে সরকারকেই বিবেচনা করতে হয়।’

শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.007606029510498