৩৬তম বিসিএসের নন-ক্যাডারের শূন্য পদে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদের ছড়াছড়ি। কিন্তু চাকরিপ্রার্থীরা এই পদে নিয়োগ নিতে অনীহা প্রকাশ করছেন। তাঁরা এই পদকে দশম গ্রেডে উন্নীত না করে এতে নিয়োগ নিতে চান না।
বাংলাদেশ কর্মকমিশন (পিএসসি) সূত্র জানায়, ৩৬তম বিসিএসে ২ হাজার ৩২৩ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। এর বাইরে এই বিসিএসে উত্তীর্ণ ৩ হাজার ৩০৮ জন পরীক্ষার্থীকে পদ শূন্য থাকা সাপেক্ষে নন-ক্যাডার হিসেবে রাখা হয়েছে।
পিএসসি সূত্র জানায়, ৩৬তম নন-ক্যাডারদের নিয়োগ দিতে তাঁরা বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে শূন্য পদের চাহিদা চাইছে। এর মধ্যে তাঁরা প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রধান শিক্ষক পদে ৪ হাজার ৩২০টি শূন্য পদের চাহিদা পেয়েছে। এখন এখান থেকে নন-ক্যাডারদের একটি অংশকে নিয়োগ দেওয়া হবে। অর্থাৎ, প্রার্থীর চেয়েও এখানে পদের সংখ্যা বেশি।
কিন্তু প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা অনেকেই এই পদে নিয়োগ পেতে চান না। এর একটি বড় কারণ হচ্ছে, এই পদটি ১২তম গ্রেডের। তাঁদের দাবি, পিএসসি নন-ক্যাডারে নবম ও দশম গ্রেড ছাড়া নিয়োগ দিতে পারে না।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ৩৪তম বিসিএসে নন-ক্যাডার থেকে পিএসপির সুপারিশ করা ৮৯৮ জনের মধ্যে প্রায় ৫০০ জন প্রধান শিক্ষকের পদে যোগদান করেছেন। চাকরিতে যোগ দেননি প্রায় ৪০০ জন। যাঁরা যোগ দেননি, তাঁরা এই পদে আগ্রহী নয় বলেই ধারণা মন্ত্রণালয়ের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রার্থী বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের পদটি ২০১৪ সালে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করেছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু তখন মন্ত্রণালয় কৌশলে প্রধান শিক্ষকদের বেতন নির্ধারণ করে ১১তম (প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত) ও ১২তম গ্রেডে (প্রশিক্ষণবিহীন)। এখন বিসিএসে উত্তীর্ণদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম বাস্তবায়ন করতে চাইছে। অথচ নন-ক্যাডার পদে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন পদে যাঁরা নিয়োগ পেয়েছেন বা পেতে যাচ্ছেন, তাঁরা সবাই দশম গ্রেডে যোগ দিয়েছেন বা দিচ্ছেন।
এ প্রার্থী বলেন, ‘একই বিসিএসে কিছুসংখ্যক এক ধরনের সুবিধা পাবেন আর আমরা বঞ্চিত থাকব কেন?’
৩৬তম বিসিএসে নন-ক্যাডারে থাকা একাধিক প্রার্থী বলেন, প্রধান শিক্ষকের পদ ১২তম গ্রেডের চাকরি। পিএসসির নিয়ম অনুযায়ী নবম ও দশম গ্রেড ছাড়া সুপারিশ করতে পারে না। তারা তীব্র প্রতিযোগিতার পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ১৩০০ নম্বরের পরীক্ষা দিয়ে যদি ১২তম গ্রেড এ নিয়োগের সুপারিশ পান, তাহলে বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।
প্রার্থীদের গ্রেড জটিলতার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পিএসসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক বলেন, ‘৩৬তম নন-ক্যাডার থেকে যদি সবার চাকরি নিশ্চিত করতে হয় তাহলে প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকের পদে নিয়োগ দিতেই হবে। আর চাকরি নিশ্চিত করতে সেটি আমরা করবই। তাদের গ্রেড জটিলতা সমাধানের বিষয়ে আমাদের কিছু করণীয় নেই। এটা মন্ত্রণালয়ের হাতে।’
প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকের গ্রেড জটিলতার বিষয়ে সমাধান কী জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমাদের মন্ত্রণালয় যথেষ্ট চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে বিষয়টি।’ তারা সম্মতি দিলেই এই পদ দশম গ্রেড হবে বলে জানান তিনি।
সূত্র: প্রথম আলো