৪০ বিশ্ববিদ্যালয়কে আরও এক বছরের সময়সীমা - Dainikshiksha

৪০ বিশ্ববিদ্যালয়কে আরও এক বছরের সময়সীমা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

pubunনিজস্ব জমিতে স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা ও আইন অনুযায়ী যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য এক বছরের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে সরকার ৪০ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে চূড়ান্ত নোটিশ করেছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এ নির্দেশ পালনে ব্যর্থ হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ১৯ জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই কঠোর হুঁশিয়ারি সংবলিত পত্র পাঠানো শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে ২৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ পত্র পাঠানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকি ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়কেও পত্র পাঠানো হবে। এ নিয়ে নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা না-করা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চতুর্থবারের মতো সময় দেওয়া হলো। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, ‘এবার চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হলো। এরপর আর কোনোক্রমেই সময় বাড়ানো হবে না।’

দেশে এ মুহূর্তে মোট ৯১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়েছে ৮৫টিতে। বাকিগুলো নতুন অনুমোদন পেয়েছে। শিক্ষা কার্যক্রম চালু থাকা ৮৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে পাঁচ বছরের বেশি সময় অতিক্রম হয়েছে ৫২টির। এই ৫২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে দেরিতে হলেও ১২টি নিজস্ব জমিতে স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। বাকি ৪০টি পারেনি। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর রেজিস্ট্রার বরাবর চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সংবলিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) লায়লা আরজুমান্দ বানু স্বাক্ষরিত পত্র পাঠানো শুরু হয়েছে।

অন্যদিকে, যেসব বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা করেছে তাদেরও ধন্যবাদ জ্ঞাপন পত্র পাঠানো হয়েছে। তবে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অননুমোদিত আউটার ক্যাম্পাস থাকলে তা বন্ধ করে অবিলম্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসিকে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-১৯৯২ (সংশোধিত ২০১০)-এর আওতায় প্রত্যেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পাঁচ বছরের মধ্যে পাঁচ একর জমিতে নিজস্ব অবকাঠামো নির্মাণ করে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার শর্তেই সাময়িক অনুমতি পেয়েছিল। কিন্তু ১৫, ১৬, ১৮ বছরেও অনেকেই এ শর্ত পূরণ করেনি। তাই তাদের নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য গ্রহণযোগ্য একটি সময়সীমা বেঁদে দেওয়া হলো। এরপর আর কোনো অজুহাত গ্রহণযোগ্য ও যুক্তিযুক্ত হবে না।’

ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার জন্য এসব বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমান সময় থেকে অতিরিক্ত আরও এক বছর সময় পাবে বলে তিনি জানান।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ আরও বলেন, ‘সরকার সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য করে না; কিন্তু আমরা চাই, শিক্ষার্থীরা যেন সুষ্ঠু শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিতে পারে। তাই এসব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে শর্ত পূরণ করতেই হবে।’ তিনি অভিযোগ করেন, কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকায় ব্যস্ত সড়কের পাশে বিপণিবিতান, হোটেল-রেস্তোরাঁ এবং সিএনজি স্টেশনের পাশে স্বল্প পরিসরে ভাড়া বাড়িতে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। শিক্ষার মান নিশ্চিতে এসব বিশ্ববিদ্যালয়কে অবশ্যই আইনের শর্ত পূরণ করতে হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, ‘জায়গা কিনে ভবন নির্মাণ কিছুটা সময়সাধ্য ব্যাপার। তবে সদিচ্ছা থাকলে সবই সম্ভব।’ তিনি বলেন, ‘আইনের শর্ত পূরণ করতে না-পারা ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তবে এ সময়ের মধ্যে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় এ শর্ত পূরণ করতে পারবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সরকারি সিদ্ধান্তসংবলিত নোটিশে বলা হয়েছে, আগামী ২০১৭ সালের ১৯ জানুয়ারির মধ্যে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারবে না, তাদের কোনো বর্ধিত, অতিরিক্ত ক্যাম্পাস এবং ইনস্টিটিউট পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হবে না। এ ছাড়া নতুন কোনো অনুষদ, বিভাগ এবং প্রোগ্রাম চালুরও অনুমোদন দেওয়া হবে না। তাদের বর্তমান সুযোগ-সুবিধার মধ্যেই নির্ধারিত সময় পর্যন্ত কার্যক্রম চালাতে হবে।

এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় উইং থেকে জানা গেছে, এর আগে সরকারের সাময়িক অনুমতি বাতিল হওয়া তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় এখন আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এগুলো হলো_ আমেরিকা-বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, কুইন্স ইউনিভার্সিটি ও সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি।

শর্ত পূরণ করেছে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় :এখন পর্যন্ত মাত্র ১২টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার শর্ত পূরণ করেছে। এগুলো হলো_ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামের ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলোজি, চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, আহ্ছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস, এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলোজি, বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি, ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, গণবিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি।

এর মধ্যে জমি কিনেছে এবং অবকাঠামো নির্মাণ শেষের পথে এমন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটি, সিটি ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, দি ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল উইনিভার্সিটি, শান্তা মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলোজি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ ও ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যেগুলোর নিজস্ব ভবন থাকলেও আইন অনুযায়ী তা নির্ধারিত পরিমাণ জমিতে নয়। তবে ইউজিসির তথ্যমতে, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগই নতুন জমি কিনে বৃহত্তর পরিসরে ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। কোনো কোনোটি নকশা অনুমোদনের জন্য রাজউকে জমা দিয়েছে। এগুলো হলো দি পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, স্টেট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি সিলেট, নর্দান ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

এ ছাড়া কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আইন না-মানার ভিন্ন ভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। নিজস্ব ক্যাম্পাস গড়তে ব্যর্থ হওয়ার পাশাপাশি মালিকানা নিয়ে ট্রাস্টি বোর্ডের মধ্যে দ্বন্দ্ব, সনদ বাণিজ্য, অবৈধ আউটার ক্যাম্পাস পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে এমন কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় হলো দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়, লিডিং ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি এবং ইবাইস ইউনিভার্সিটি।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ অনুসারে, প্রতিষ্ঠার সাত বছরের মধ্যে নিজস্ব ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম স্থানান্তরিত হওয়ার কথা। ১৯৯২ সালের পুরনো আইনে তা পাঁচ বছর ছিল। ইতিমধ্যেই এগুলোর কোনো কোনোটি সর্বোচ্চ ২০ বছর এবং সর্বনিম্ন নয় বছর অতিক্রম করেছে; কিন্তু এখনও স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি। এ অবস্থায় সরকার ব্যর্থ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিজস্ব ক্যাম্পাস গড়তে আরও এক বছর সময় দিল।

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033359527587891