‘আমরা বাঁচতে চাই, দেশে ফিরতে চাই’ - দৈনিকশিক্ষা

‘আমরা বাঁচতে চাই, দেশে ফিরতে চাই’

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

চীনে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। ফলে দেশটির হুবেই প্রদেশে আটকেপড়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আতঙ্ক এখন আর্তনাদে পরিণত হচ্ছে। এই প্রদেশে ইচাং সিটির 'চায়না থ্রি জর্জেস ইউনিভার্সিটি'র বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে ভয়ংকর আতঙ্কে। সেখানকার তিনটি হোস্টেলে ১৭১ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আটকা পড়েছেন। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত তারা। দেশে ফেরার আকুতি জানিয়ে হোস্টেলকক্ষে অবরুদ্ধ জীবন, খাবার সংকট, দিনরাত মৃত্যুভয় এবং দুর্বিষহ জীবনযাপনের কথা তুলে ধরছেন তাদের ফেসবুক ওয়ালে। 

দেশে মা-বাবাসহ ঘনিষ্ঠজনের কাছে ফোনে কান্নাকাটি করছেন। দেশে ফেরার ব্যবস্থা করতে অনুরোধ জানাচ্ছেন সরকারের কাছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে ওই ১৭১ জনকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

আটকেপড়া কয়েকজন শিক্ষার্থীরা জানান, হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ২৮৬ কিলোমিটার দূরে ইচাং সিটিতে 'চায়না থ্রি জর্জেস ইউনিভার্সিটি'। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশি ১৮৫ ছাত্রছাত্রী ব্যাচেলর ও মাস্টার্স পড়ছেন, কয়েকজন পিএইডিও করছেন। তবে করোনাভাইরাস ছড়ানোর আগেই শীতকালীন ছুটিতে ১৪ জন দেশে আসেন। 

বর্তমানে ১৭১ জন আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি হোস্টেলে। এগুলো হলো বয়েজ ইন্টারন্যাশনাল হোস্টেল, গার্লস ইন্টারন্যাশনাল হোস্টেল ও পোস্টগ্র্যাজুয়েট হোস্টেল। হোস্টেলগুলোর অবস্থান কাছাকাছি। করোনাভাইরাস ছড়ানোর পর গত ২৩ জানুয়ারি হোস্টেল থেকে তাদের বাইরে বের হওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেই থেকে তারা হোস্টেলকক্ষেই অবরুদ্ধ। সর্বোচ্চ বারান্দা পর্যন্ত আসতে পারেন তারা। এক হোস্টেল থেকে আরেক হোস্টেলে যাওয়ার বিষয়েও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

ইচাং সিটিতে বিমানবন্দর, বাস, ট্রেনসহ সব ধরনের যানবাহন বন্ধ। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা বলছেন, এ অবস্থায় সরকারের সাহায্য ছাড়া বের হওয়ার কোনো উপায় নেই তাদের। তারা উইচেটের মাধ্যমে প্রতিদিন করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা আপডেট চেক করেন। প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃত্যুর তালিকা বড় হচ্ছে। চীনে মৃতের সংখ্যা এরই মধ্যে হাজার ছাড়িয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের একজনও এখনও আক্রান্ত হননি বলে জানান এই শিক্ষার্থীরা।

ফয়সাল বিন আসহাব জোয়ার্দ্দার উৎসব গত ৭ ফেব্রুয়ারি তার ফেসবুক ওয়ালে নিদারুণ কষ্টের কথা লিখেছেন, 'হোস্টেল ক্যান্টিনে খাবারের দাম বেশি। ২ ফেব্রুয়ারি আমি চার কেজি আলু, এক ডজন ডিম ও চাল কেনার অর্ডার করি। তারা আমাকে ৬ ফেব্রুয়ারি ডেলিভারি দিয়েছে ৬টা ডিম ও ৪টা আলু। চাল দেয়নি। ৬টা ডিম আর ৪টা আলু দিয়ে আমি কত দিন বেঁচে থাকব!' 

একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাউফুল ইসলাম রউফের বাড়ি কুষ্টিয়া জেলায়। তিনিও পোস্টগ্র্যাজুয়েট হোস্টেলে থেকে পড়ালেখা করেন।  তিনি বলেন, 'এখানে বর্তমান পরিস্থিতি ভয়াবহ। চারদিক শুধু আতঙ্ক। এরই মধ্যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আমাদের ফিরিয়ে না নিলে আমরা আতঙ্কেই মরে যাব। প্লিজ, আমাদের ফিরিয়ে নেওয়া হোক।'

একই হোস্টেলে আটকেপড়া শিক্ষার্থী আবুল হাসান মোল্লার বাড়ি গোপালগঞ্জে। সোমবার তিনি বলেন, 'প্রায় ১৮ দিন রুমে অবরুদ্ধ। আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে। আমরা যদি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নাও হই, এভাবে অবরুদ্ধ পরিবেশে সুস্থ থাকার সুযোগ নেই বেশিদিন। নানাবিধ মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে যাব। শারীরিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হব। আমরা বাঁচতে চাই। দেশে ফিরতে চাই।'

আরও পড়ুন : চাইলে চীন থেকে ফিরতে পারেন, তবে নিজ দায়িত্বে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

আরও পড়ুন : করোনা ভাইরাস বিশ্বের জন্য হুমকি : ডব্লিউএইচও

আরও পড়ুন : করোনা ভাইরাস বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে হটলাইন চালু

আরও পড়ুন : করোনা ভাইরাস : চিকিৎসা কী?

আরেক শিক্ষার্থী শাওন সমকালকে জানান, তাদের খাবারের মজুদ প্রায় শেষ। সিটি লক ডাউন থাকায় অন্য সিটিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ। এ কারণে এই সিটিতে খাবারের মজুদ কমে এসেছে। যে কারণে হোস্টেল কর্তৃপক্ষ তাদের খাবারের জন্য দোকানের ব্যবস্থা করে দিলেও চাহিদা অনুযায়ী খাবার পাচ্ছেন না। খাবারের দাম কয়েকগুণ বেশি।

বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী শফিকুল ইসলাম ৯ ফেব্রুয়ারি রাতে তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, 'আমাদের খাবার ছিল না। আমরা অর্ডার করছিলাম, তা আসছে চার দিন পর। তাও খুবই সস্তা খাবার। ছয়টি বেগুনের দাম বাংলা টাকায় ৬৫০ টাকা। আমরা খুবই বিপদে আছি, আমাদের সাহায্য করার অনুরোধ রইল।' ফেসবুকে লম্বাকৃতির বেগুনের ছবি পোস্ট করেন তিনি।

আরেক শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন মাসুম গত ৬ ফেব্রুয়ারি তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, 'আমাদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে জেলে রাখুন। বিমান ভাড়া না থাকলে আমরা দেব।'

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে দ্বীন মুহাম্মদ প্রিয় তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, 'মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের ১৭১ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর আকুল আবেদন, দয়া করে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যান। চীনের ইচাং শহরে প্রতিটি মুহূর্ত মৃত্যুভয়ে কাটাচ্ছি। জানি না, কত দিন এখানে সুস্থ থাকতে পারব। দিন দিন মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। এই মৃত্যু-মিছিলের মধ্যে কত দিন বেঁচে থাকব? প্রধানমন্ত্রী ১৭১ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এবং আমাদের পরিবার আপনার দিকে তাকিয়ে আছে। আপনার প্রতি আমাদের অগাধ বিশ্বাস, আপনি আমাদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন। দেশ যতবার সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী আপনি বারবার সেই সমস্যার সমাধান করেছেন। এক রুমের মধ্যে আটকে আছি। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত আমরা।'

রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি - dainik shiksha রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী - dainik shiksha গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ - dainik shiksha আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0057117938995361