‘প্যাটের দায়ে আদালতে আইছি, নিয়োগ পাইলে অভাব অনটন দুর অইব’ - দৈনিকশিক্ষা

‘প্যাটের দায়ে আদালতে আইছি, নিয়োগ পাইলে অভাব অনটন দুর অইব’

আমিনুল ইসলাম মল্লিক |

জাহাঙ্গীর আযম। ইতিহাসে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। সপ্ন ছিলো শিক্ষকতা করার্। এজন্য এনটিআরসির অধীনে নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করেছেন। ১০তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। কিন্তু এখনও নিয়োগ পাননি কোন কলেজে। বউ বাচ্চা নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন এই নিবন্ধনধারী।তিনি বলেন, ‘প্যাটের দায়ে আদালতে আইছি, নিয়োগ পাইলে অভাব অনটন দুর অইব’। 

সোমবার (৮ মার্চ) উচ্চ আদালত চত্ত্বরে সাক্ষাৎ হয় তার সঙ্গে। দৈনিক শিক্ষার প্রতিবেদক শুনে আরও কয়েকজন নিবন্ধনধারী ছুটে আসেন। বলেন তাদের দুঃখ দুর্দশা ও অভাব অনটনের কথা। দৈনিক শিক্ষাকে এগুলো বলে তৃপ্তির ঢেকুর তোলেন। ১ম থেকে ১২ তম শিক্ষক নিবন্ধনধারীদের নিয়োগের রায় কার্যকর করতে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এনটিআরসিকে এ রায় বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। এসব নিবন্ধনধারীদের সংখ্যা প্রায় ১৬ হাজার। এর মধ্যে অনেকেই শিক্ষকতা ছেড়ে অন্য চাকুরীতে কাজ শুরু করেছেন। তবে সেই পরিমান কত তা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন।

জাহাঙ্গীর আযম আরও জানান, আমি বিয়ে করেছি। ঘরে বউ বাচ্চা আছে। চাকরি নেই। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। একটি কোম্পানীতে চাকরি করেছি। সে চাকরি চলে গেছে করোনারকালে।চোখে মুখে অন্ধ দেখছি। কি করব বুঝতে পারছি না। আমাদেরকে নিয়োগ দিলে আমরা খুবই খুশি হব। নিয়োগ পেলে কত টাকা বেতন পাবেন? উত্তরে এই নিবন্ধনধারী দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, ২২ হাজার টাকার মতো মাসিক বেতন পাব। চাকরি হলে সংসারটা চলে যাবে। অভাব অনটন কিছুটা হলেও দুর হবে।

১০তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এখনও নিয়োগ পাননি কোন কলেজে।

আদালত প্রাঙ্গনে হাতে কাগজ কলম নিয়ে এদিক সেদিক ছুটোছুটি করছেন আরেকজন নিবন্ধনধারী। ফোন দিচ্ছেন। কথা বলছেন নানা জায়গায়। ব্যস্ত আতিক হাসান এসছেন পাবনা থেকে। তিনি দৈনিক শিক্ষার কথা শুনে এই প্রতিবেদককে অনুরোধ করে বলেন, ‘আমাদের খবরটা ভালো করে ছাপাইয়া দিয়েন’। আতিক বলেন, এই রিট মামলার সার্বিকভাবে খোঁজ খবর নিচ্ছি আমি। আমরা রিট করে রায় পেয়েছি। আশা করছি খুব দ্রুতই নিয়োগ পাব। আমরা ভুক্তভোগী। অনেকদিন হলো বেকার চাকরি বাকরী নেই। নিয়োগ পেলে এক মুঠো ডাল ভাত খাওয়ার সুযোগ পাব। সংসার পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকতে পারব।  

রাজধানী ঢাকা থেকে আদালতে প্রাঙ্গনে এসেছেন ৫ম নিবন্ধনধারী সামিয়া ভরসী। রায়ের খবর শুনে খুশি তিনি। সাক্ষাৎ করেন দৈনিক শিক্ষার আদালত প্রতিদকের সঙ্গে। তিনি বলেন, আদালতের রায়ে নিয়োগ পাব আশা করছি। আমাদের নিয়োগ কার্যদক্রম যেন অনলাইনে না হয়। অনলাইনে নিয়োগ হলে ঝামেলা হতে পারে। তাই সঠিকভাবে নিয়োগ দিতে অনলাইন পরিহার করার অনুরোধ করছি।

রায়ের কথা শুনে এই প্রতিবেদককে ফোন দিয়ে খোঁজ নেন আরেকজন নিবন্ধনধারী। তিনি বলেন, আদালত রায় দিয়েছে। নিয়োগ পাব তো? নিয়োগ পেলে আমি খুব খুশি হব। আমার পরিবারের অনেক উপকার হবে। 

এ রিটের রায় ঘোষণা করা হয়েছে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে। হাজার হাজার শিক্ষক রিট করেন। তাদের সংখ্যা প্রায় ১৬ হাজারের মতো। মোট রিট আবেদন করা হয় ১৬৭টি। রায়ও ঘোষণা করা হয় সবার জন্য। সব রিট একত্রে করে শুনানী করে আদালত। দীর্ঘ শুনানী শেষে ১ম থেকে ১২তম শিক্ষক নিবন্ধনধারীদের নিয়োগ দিতে এনটিআরসির প্রতি ৭ দফা নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট। রায়ের এই ৭ দফা অমান্য করে এনটিআরসি। পরে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে আদালত অবমাননার আবেদন করা হয়। মোট ২০টি আদালত অবমাননার আবেদন করেন রিটকারীরা। ঘটনার বিষয় একই। একই রায়। আদালত অবমাননার আবেদেনও একই। আদালত আজ আদেশ দেয়ার সময় বলেন, আদেশটি সবার জন্যই। সবাইকে এ আদেশের অন্তভৃক্ত হবেন।

আদালতে রায় ঘোষণার সময় আইনজীবী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুরশীদ আলম খান। ব্যারিস্টার মহিউদ্দিন মোহাম্মাদ হানিফ (ফরহাদ) ও মোহাম্মাদ সিদ্দিক উল্লাহ মিয়া। পরে আদালত থেকে বেরিয়ে বিস্তারিত জানান খুরশীদ আলম খান। তিনি বলেন, প্রায় ১৬ হাজার নিয়োগপ্রত্যাশীকে ১৫ দিনের মধ্যে এমপিও পদে নিয়োগের সুপারিশ করতে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। তারা সবাই ১ম থেকে ১২তম নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ।

মোহাম্মাদ সিদ্দিক উল্লাহ মিয়া দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, আমাদের একটি আবেদন ছিল। আদালত অবমাননার আবেদন। আমাদের আবেদনসহ মোট ২০টি আবেদন শুনে আদালত আদেশ দিয়েছেন। এতে করে ১ম থেকে ১২ তম শিক্ষক নিবন্ধনধারীদের নিয়োগের যে সুপারিশ ছিল সেটি বাস্তবায়ন করতে বলা হলো।

প্রথমে মোট সংক্ষুব্ধের সংখ্যা ছিলো ১৭ হাজার। তাদের মধ্যে কয়েকজন নিয়োগ পেয়েছেন। যারা বঞ্চিত তারা আদালত অবমাননার অভিয়োগ এনেছে ফের আদালতের স্মরণাপন্ন হয়েছেন।  বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠতি বেঞ্চ সোমবার (৮ মার্চ) এ আদেশ দেন। বিষয়টি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী মহিউদ্দিন হানিফ। সোমবারের আদেশ সম্পর্কে এখনও কিছু জানে না এনটিআরসিএর সংশ্লিষট কর্মকর্তারা।

স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? - dainik shiksha শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ - dainik shiksha অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে - dainik shiksha সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033180713653564