অভিনব এমপিও জালিয়াতি: কোড পরিবর্তন চলছে দেদার - দৈনিকশিক্ষা

অভিনব এমপিও জালিয়াতি: কোড পরিবর্তন চলছে দেদার

মুরাদ মজুমদার |

রাজশাহীর তানোর উপজেলার হাতীশাইল উচ্চবিদ্যালয়ের অফিস সহকারী সাদিকুল ইসলামের প্রাপ্য ১৬ কোড। কিন্তু তিনি এক ধাপ উপরের অর্থাৎ ১৫ কোডে এমপিওভুক্ত হয়েছেন এমপিওর সফটওয়্যারে জালিয়াতি করে। এতে সরকারের কোষাগারের টাকার অপচয় হচ্ছে। সরকারি অর্থের এমন অপচয় বা দুর্নীতি যাতে না হতে পারে সেজন্য সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রয়েছেন দুজন পরিচালক ও উপ-পরিচালকসহ অন্যান্যরা। সফটওয়্যার কেনা ও ইএমআইসএস সেল স্থাপন করা হয়েছে কোটি কোটি টাকা খরচ করে।

সাদিকুল কীভাবে এক ধাপের উপরের কোডে বেতন পেলেন তা নিয়ে শিক্ষা বিষয়ক দেশের শিক্ষা বিষয়ক একমাত্র অনলাইন জাতীয় পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকম’র অনুসন্ধান চালায়। গত বছরের নভেম্বর মাসের এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়ায় তক্কে তক্কে থেকে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে ভয়াবহ জালিয়াতির নানা তথ্য।

জানা যায়, সফটওয়্যারে জালিয়াতি করে ইচ্ছেমতো কোডে বেতন নিয়ে যাচ্ছে। চাইলেই যে কোনো শিক্ষক-কর্মচারী তাদের পছন্দমতো কোড নিতে পারেন। কেউ ধরিয়ে দিলেই শুধু ধরা পড়বে, অন্যথায় নয়।

অধিদপ্তরের এমপিওসংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে অকপটে দৈনিক শিক্ষার কাছে স্বীকার করে বলেছেন, “এমপিওর সফটওয়্যারই নিরাপদ নয়।” কেউ কেউ অবশ্য দাবি করেছেন কিছুতেই সম্ভব নয় কোড পরিবর্তন করে বেতন নেয়া। একরম চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন তারা। উদাহরণ জানতে চান দৈনিক শিক্ষার প্রতিবেদকের কাছে। তাদের দাবি, ইএমআইএস সেলের মাধ্যমে কোনো দুর্নীতি করা সম্ভব নয়। তাছাড়া পরিচালক (মাধ্যমিক) স্যার কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ। চ্যালেঞ্জদাতা দুই কর্মকর্তাকে দৈনিক শিক্ষার পক্ষ থেকে দেখানো হয় কোড জালিয়াত রাজশাহীর তানোরের সাদিকুলের উদাহরণ। তবুও দমে যাননি তারা। ওই দুই কর্মকর্তা বলেছেন অমন উদাহরণ একটাই। দ্বিতীয়টি দেখাতে পারবেন না। কিন্তু দৈনিক শিক্ষার এই প্রতিবেদক অধিদপ্তরের দুই কর্মকর্তার সামনে হাজির করেন আরেকটি উদাহরণ। তা-ও আবার সাদিকুলের একই স্কুলের। এমএল এসএস মাজহারুল ইসলামের প্রাপ্য ২০ কোড কিন্তু নিয়েছেন ১৬ কোড। দিব্যি এমপিও পেয়ে যাচ্ছেন তিন ধাপ উপরের স্কেলে।
কর্মকর্তারা স্বীকার করুন আর নাই করুক। প্রতিমা্সই সরকারি কোষাগার থেকে এভাবে কোড পরিবর্তন করে কোটি কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে। ধরা পড়লে বলা হয় ভুল হয়েছে। অমুকে-তমুকে দায়ী।

দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে উঠে আসে অধিদপ্তরের এমপিওভুক্তির মূল দায়িত্বে থাকা মাধ্যমিক শাখার পরিচালকের অদক্ষতার নানা দিক। যদিও এই পরিচালক নিজেকে কম্পিউটার, আইটি ও তথ্য যোগাযোগ বিষয়ে অগাধ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার ‘অধিকারী’ হিসেবে দাবি করে আসছেন বরাবরই।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে মহাপরিচালকের চলতি দায়িত্ব পাওয়ার পর ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসের এমপিওভুক্তির সভায় অলাইন এমপিওভুক্তিতে জালিয়াতি ও প্রায় সব পর্যায়ে ঘুষ-দুর্নীতির বিষয়ে প্রথমবারের মতো কড়া বক্তৃতা দেন মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান। ওই সভায় মহাপরিচালকের মতামতের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক মো: এলিয়াছ হোসেন। এলিয়াছের মতে সবকিছুই হয় সফটওয়ারের মাধ্যমে সুতরাং দুর্নীতি করার কারো কোনো সুযোগই নেই। এলিয়াছের এই বক্তব্যের অকুন্ঠ সমর্থন করেন মাধ্যমিক শাখার উপ-পরিচালক মো: মোস্তফা কামাল। চলতি বছরের ২৫মে অনুষ্ঠিত এমপিওভুক্তির সভায় ফের দুর্নীতি নিয়ে কড়া ভাষায় কথা বলেন মহাপরিচালক। এবারেও মহাপরিচালকের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন উপ-পরিচালক মোস্তফা কামাল। এবং অনলাইনে এমপিওভুক্তি এবং বিকেন্দ্রকরণের পর দুর্নীতি কমেছে মর্মে মত প্রকাশ করেন তিনি।

জানতে চাইলে শিক্ষক সমিতির প্রবীন নেতা অধ্যক্ষ এম এ আউয়াল সিদ্দিকী দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, এমপিওভুক্তি সম্পর্কে কিছুই না জেনেই সুদূর মাগুরার একটি কলেজ থেকে হঠাৎ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালকের দায়িত্ব পেয়ে যান সরকারি কলেজের শিক্ষক এলিয়াছ।
তিনি বলেন, একইভাবে সরকারি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক থেকে মাধ্যমিক শাখার উপ-পরিচালকের পদ বাগান পান মোস্তফা কামাল। প্রায় তিন বছর অনলাইন এমপিও, এমপিও সফটওয়ার ও ডাটাবেজ নিয়ে কাজ করে অর্জিত জ্ঞান নিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারছেন না এই দুই পরিচালক ও উপ-পরিচালক।

জানতে চাইলে উপ-পরিচালক মোস্তফা কামাল বলেন, ‘এমপিও বিকেন্দ্রকরণ ও অনলাইনকরণ যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এর ফলে সর্বক্ষেত্রে এমপিওদুর্নীতি ও জালিয়াতি বন্ধ হয়েছে। তবে, যেটুকু অভিযোগ পাওয়া যায় মাঠ পর্যায় থেকে সে বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
এক প্রশ্নের জবাবে, মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন,  এমপিওভুক্তিতে দুর্নীতির নিয়মিত অভিযোগ পাই। প্রতি সভায় কড়া হুশিয়ারি উচ্চারণ করছি। আপ্রাণ চেষ্টা করছি সরকারি অর্থের অপচয় রোধ করতে। সরকার আামদের এ জন্যই এখানে বসিয়েছে।

আগামীকাল পড়ুন: দ্বিতীয় পর্ব “ইনডেক্স চুরি”

 

ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা - dainik shiksha ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ - dainik shiksha কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036129951477051