এত বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে কী হবে - Dainikshiksha

শিক্ষা ও কর্মসংস্থানএত বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে কী হবে

প্রতীক বর্ধন |

চাকরির বাজারে প্রয়োজনীয় দক্ষতাসম্পন্ন তরুণ পাওয়া যাচ্ছে না—এ কথা এখন সবাই জানেন। এর জন্য মূলত শিক্ষাব্যবস্থাকেই দায়ী করা হয় এবং এটা অস্বীকার করার জো নেই। অনেক অর্থনীতিবিদই বলছেন, এখন বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই তরুণদের কর্মবাজারের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা শিখে আসা উচিত। তাই এখন প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা কী শুধু কর্মবাজারের জন্য দক্ষতাসম্পন্ন স্নাতক তৈরি করা? যদি তা–ই হয়, তাহলে এই দক্ষতা অর্জন করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার প্রয়োজনীয়তা আদৌ আছে কি না?

যে শিক্ষার সঙ্গে বাস্তবতার যোগ নেই, সেই শিক্ষা স্বাভাবিকভাবেই অচল হয়ে যাবে। বাস্তবতাবর্জিত শিক্ষার পতন কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা কী হবে, তা নিয়ে আরও চিন্তার সুযোগ আছে বলেই বোধ হয়। পাশ্চাত্যের দেশগুলোতেও বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে শিল্পের (ইন্ডাস্ট্রি) যোগ অত্যন্ত নিবিড়। ওসব দেশে শিল্প ও একাডেমিয়া পরস্পরের পরিপূরক হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। কিন্তু একই সঙ্গে এ কথাও বলতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল যে কাজ অর্থাৎ জ্ঞান উৎপাদন, পাশ্চাত্যের বিশ্ববিদ্যালয় সেই জায়গা ছেড়ে দেয়নি।

আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মের সঙ্গে রাজনৈতিক যোগ আছে। তবে সেটা মূল সমস্যা নয়, মূল সমস্যাটা হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা আমাদের কাছে চিরকালই বড় চাকরি পাওয়া ও মান-মর্যাদার ব্যাপার। অনেকটা সাহেব হওয়ার ব্যাপার। তাই একসময় শিশুদের শেখানো হতো বা এখনো হয়: ‘পড়াশোনা করে যে গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে’। অর্থাৎ পড়াশোনা করলে গাড়ি–ঘোড়ায় চড়া যায়। এর সঙ্গে জ্ঞানের সম্পর্ক নেই।

অবশ্য আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জ্ঞানের সম্পর্ক কখনোই তেমন একটা ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতে বরাদ্দের পরিমাণ দেখলেই তা পরিষ্কার বোঝা যায়। বিশ্ববিদ্যালয় বরাবরই একরকম কর্মবাজারের জোগান দিয়ে এসেছে। কিন্তু এখন সমস্যা হয়েছে যে আমাদের অর্থনীতি বিকশিত হচ্ছে, বিশ্ববাজারের সঙ্গে আমরা সংযুক্ত হচ্ছি, তাই পুরোনো ধাঁচের পড়াশোনা নতুন বাস্তবতার চাহিদা মেটাতে পারছে না। সে জন্য দাবি উঠছে, শিক্ষাকে বাস্তবমুখী করতে হবে।

মোদ্দা কথা হলো, আমাদের কর্মবাজারের জন্য যে দক্ষতা দরকার, তার জন্য এত এত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজন নেই। এর জন্য কারিগরি স্কুল ও কলেজ/ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা দরকার। এই মুহূর্তে দেশে সরকারি, বেসরকারি, আন্তর্জাতিক মিলিয়ে শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন সাংবাদিকতা পড়ানো হচ্ছে, যার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। এর সঙ্গে আছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, যাদের কাজ ঘরে ঘরে স্নাতক তৈরি করা। স্নাতক পাস করা অধিকাংশ মানুষের কাছে মানসম্মানের ব্যাপার। কিন্তু এতে যে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা সৃষ্টি হচ্ছে না, তা আমরা ভাবছি না। কথা হচ্ছে, এত এত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে আমাদের কী উপকার হচ্ছে, তা নিয়ে এখন গবেষণা হওয়া দরকার। এসবের কস্ট-বেনিফিট অ্যানালিসিস দরকার।

উচ্চশিক্ষা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আমরা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার দিকে নজর দিই না। অথচ বাস্তবতা হলো, আমাদের গড়পড়তা স্নাতকেরা বিশ্ববিদ্যালয় পাস করে যা শেখেন, তা যুক্তরাষ্ট্র বা পাশ্চাত্যের মানুষেরা স্কুল পাস করেই শেখেন। নিয়োগকর্তাদের অভিযোগ, স্নাতক পাস করে আসা চাকরিপ্রার্থীরা শুদ্ধভাবে দুই লাইন ইংরেজি লিখতে পারেন না। তাঁদের বাংলা জ্ঞানও দুর্বল। আর দৈনন্দিন কাজ করার জন্য গণিতের যে ব্যবহারিক জ্ঞান থাকা দরকার, সেটাও সিংহভাগ তরুণ-তরুণীর নেই। অথচ এসব দক্ষতা থাকলে তঁাদের পক্ষে কাজ জুটিয়ে নেওয়া কঠিন হতো না। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার প্রতি প্রধান গুরুত্ব থাকলে কর্মসংস্থান সমস্যার অনেকটাই সমাধান হতে পারত। এ দেশের একটি প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠন দাবি করে, জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় করতে হবে। এত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে তারা কী অভীষ্ট অর্জন করতে চায়, তা বোঝা সত্যিই কঠিন।

দেশের শিক্ষাব্যবস্থা টপ হেভি; অর্থাৎ মাথাভারী। দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার ভিত্তি তৈরি হওয়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হয়েছে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ এই ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল। এই ব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল দেশীয় শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে ফেলে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন। কিন্তু সে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কোথা থেকে পাওয়া যাবে, তা নিয়ে শাসকশ্রেণির মাথাব্যথা ছিল না। প্রয়োজনীয়সংখ্যক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় গড়ে না তুলেই ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী ‘ভদ্রলোক’ কেরানি শ্রেণি গড়ে তুলতে তৎপর হয়। পড়াশোনা করার সঙ্গে গাড়ি–ঘোড়ায় চড়ার যোগটা সম্ভবত এখানেই। সেই ধারাবাহিকতায় সরকারের মনোযোগ মূলত উচ্চশিক্ষার দিকেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ানো যেন কৃতিত্বের ব্যাপার। সারা দুনিয়ায় উচ্চশিক্ষা সীমিত; কিন্তু এ অভাগা দেশে সেটাই সবচেয়ে সহজলভ্য। অথচ উচ্চশিক্ষা বিশেষায়িত হওয়া দরকার, যা সবার জন্য প্রয়োজনীয় নয়। তা না হলে এর উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়।

লেখক: প্রথম আলোর সহ-সম্পাদক

সূত্র: প্রথম আলো

শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0087378025054932