অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগে কাউনিয়া কলেজের অধ্যক্ষ মুসা আহমেদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। রংপুরের কাউনিয়া কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পরীক্ষা না নিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং ডিজির প্রতিনিধিরা বাড়িতে বসে তৈরি করা রেজাল্ট শিট ও নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজে স্বাক্ষর করেন।
পরীক্ষা গ্রহণের নামে কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে মুসা আহমেদকে অধ্যক্ষ হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। এই অভিযোগে তাকে গত বুধবার কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভায় বরখাস্ত করা হয়। এটি নিশ্চিত করেছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও ইউএনও মোছা. উলফৎ আরা বেগম।
এ ব্যাপারে তদন্ত শেষে ১৫ নভেম্বর কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। তদন্ত কমিটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং ডিজির প্রতিনিধি, নিয়োগ কমিটির সভাপতি, সদস্য ও প্রার্থীদের বক্তব্য এবং নিয়োগ সংক্রান্ত সব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে কাউনিয়া কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগে অনিয়ম ও জালিয়াতির সত্যতা পায়।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির তৎকালীন সভাপতি ও বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এমপি মুঠোফোনে জানিয়েছেন, অভিযুক্ত মুসা আহমেদ নিয়োগ কমিটির চারজন সদস্যের স্বাক্ষর করা রেজাল্ট শিট ও রেজুলেশন নিয়ে তার কাছে আসে। নিয়োগ পরীক্ষা যথাযথ নিয়ম অনুযায়ী সম্পূর্ণ হয়েছে বলে রেজাল্ট শিট, রেজুলেশন, নিয়োগপত্রসহ নিয়োগ সংক্রান্ত সব কাগজপত্রে তাকে স্বাক্ষর দিতে অনুরোধ করলে তিনি স্বাক্ষর করেন। এছাড়া শঠিবাড়ী কলেজের উপাধ্যক্ষ ও প্রার্থী হাশেম আলী নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেননি। অথচ ভুয়া খাতা ও উত্তরপত্র তৈরি করে পরীক্ষার ফলাফল শিটে তাকে ৩৩ নম্বর দেয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. উলফৎ আরা বেগম জানান, অধ্যক্ষ নিয়োগে অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মুসা আহমেদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডক্টর শাশ্বত ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দফতরে পাঠানো হয়েছে। তবে মুঠোফোনে অধ্যক্ষ মুসা আহমেদ তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে ডিজির প্রতিনিধি সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর চিন্ময় বাড়ৈর কাছে জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোন কেটে দেন। আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের প্রফেসর ও পরিচালক ডা. গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, তদন্ত কমিটির কাছে দেয়া তার লিখিত বক্তব্যই ঠিক। তবে এ বিষয়ে তিনি বিব্রত।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মনিরুজ্জামান বলেন, নিয়োগ পরীক্ষা না নিয়ে এ সংক্রান্ত কাগজপত্রে স্বাক্ষর দিয়ে সরকারি প্রতিনিধিরাও জালিয়াতি করেছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সার্বিক বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির তৎকালীন সভাপতি ও বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এমপি মুঠোফোনে জানান, রাজনৈতিক ব্যস্ততার কারণে দুই বছর ধরে তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের কোনো সভায় উপস্থিত ছিলেন না। তবে অধ্যক্ষ নিয়োগে অনিয়ম ও জালিয়াতির বিষয়ে জানতে পেরেছেন। বর্তমান সভাপতি ও ইউএনওকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।