দক্ষতার অভাবে চাকরি মিলছে না শিক্ষিতদের - দৈনিকশিক্ষা

দক্ষতার অভাবে চাকরি মিলছে না শিক্ষিতদের

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

প্রায় ছয় বছর আগে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে নোয়াখালী সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করেছেন মোশাররফ হোসাইন। স্নাতক শেষের পরপরই সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন, কিন্তু চাকরির আর দেখা পাননি। এদিকে সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সও শেষের পথে। বাধ্য হয়ে এখন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির চেষ্টা করছেন। তবে কম্পিউটার শিক্ষাসহ বিভিন্ন দক্ষতার অভাবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কোথাও চাকরি মিলছে না তাঁর। বুধবার (৮ জুন) আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন রবিউল আলম।

মোশাররফ বলেন, ‘ইংরেজিতে পড়ার সুবাদে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে তথ্য কর্মকর্তা পদসহ বেশ কয়েকটি পদে সিভি দিয়েছি। কিন্তু স্নাতকের পাশাপাশি তারা গ্রাফিকস ডিজাইন, কম্পিউটার চালানোর দক্ষতা ইত্যাদি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। স্নাতকের শিক্ষাক্রমে যদি বাধ্যতামূলক এসব দক্ষতা বাড়ানোর ব্যবস্থা থাকত বা আমি নিজ উদ্যোগেও যদি এগুলো শিখতাম, তাহলে এখন আমাকে চাকরি না পাওয়ার হতাশায় দিন কাটাতে হতো না।’

শুধু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নয়, দেশের প্রথম সারির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া অনেক তরুণ-তরুণীও এসব দক্ষতার অভাবে প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে পিছিয়ে পড়ছেন। 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন মতিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমি দেশে কাজ করা কয়েকটি বিদেশি সংস্থায় চাকরির জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু মাইক্রোসফট এক্সেল, গ্রাফিকস ডিজাইন, ইংরেজি ভাষার দক্ষতা, দ্রুত টাইপিং ইত্যাদি ছোটখাটো বিষয়ে দক্ষতা না থাকায় চাকরি পাচ্ছি না। অন্য দেশের কেউ চাকরিটা নিয়ে গেছেন। এত কষ্ট করে ভালো ফলাফল করেও এসব সফট স্কিলের অভাবে পিছিয়ে পড়ছি।’

শুধু মোশাররফ বা মতিউর নন, ছোটখাটো বিষয়ে দক্ষতার অভাবে চাকরি না পাওয়াদের কাতারে রয়েছে দেশের এমন লাখ লাখ তরুণ। অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে নিয়োজিত মোট ১০০ জন নিয়োগকর্তার ওপর সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ এবং ফ্রেডরিক-এবার্ট-স্টিফটুং পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের প্রায় ৪৬ শতাংশ বেসরকারি নিয়োগকর্তা চাকরির শূন্য পদ পূরণে প্রয়োজন অনুযায়ী দক্ষতাসম্পন্ন প্রার্থী খুঁজে পেতে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। চাকরির শূন্য পদে উপযুক্ত প্রার্থী খুঁজে পেতে নিয়োগকর্তারা প্রধান যে দুটি বাধার সম্মুখীন হন তা হলো, কাজের অভিজ্ঞতা ও প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাব।

নিয়োগকর্তারা প্রার্থী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় তিনটি বিষয়ের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন বলে গবেষণাটিতে উঠে এসেছে। সেগুলো হলো সফট স্কিলস, হার্ড স্কিলস ও কাজের অভিজ্ঞতা। তাঁদের মতে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সফট স্কিলের মধ্যে রয়েছে যোগাযোগ, সময় ব্যবস্থাপনা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা, টিমওয়ার্ক ও নেতৃত্বদানের ক্ষমতা, সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা, নেটওয়ার্কিং ও সৃজনশীলতা। অন্যদিকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হার্ড স্কিল হলো কম্পিউটার চালানোর দক্ষতা, প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান, ইংরেজি ভাষার দক্ষতা, ব্যবসায়িক দক্ষতা, সংখ্যাগত ও গাণিতিক দক্ষতা। নিয়োগকর্তাদের ৪০ শতাংশের মতে, প্রযুক্তিগত অগ্রগতির কারণে কর্মীদের নতুন দক্ষতা উন্নয়নের প্রয়োজন হতে পারে।

স্বাভাবিকভাবেই ছোটবেলা থেকে যাঁরা পড়াশোনার মধ্যে থেকে ইংরেজি ভাষার দক্ষতা ও গাণিতিক দক্ষতাসহ বিভিন্ন দক্ষতা অর্জনের চর্চা করেন, জীবনের পরবর্তী ধাপে তাঁরা এগিয়ে থাকেন। তবে মাধ্যমিকে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী এখনো ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে দক্ষতা অর্জনে পিছিয়ে আছে। মাধ্যমিক স্তরের এক হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ষষ্ঠ, অষ্টম ও দশম শ্রেণির প্রতিটিতে ৩০ হাজার করে শিক্ষার্থীর ওপর গবেষণা চালানো মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) তদারক ও মূল্যায়ন বিভাগের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ষষ্ঠ শ্রেণিতে ইংরেজিতে ৬১ শতাংশ শিক্ষার্থীর এবং গণিতে ৪৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর অবস্থা খারাপ। এর মধ্যে ইংরেজিতে প্রায় ২৯ শতাংশ শিক্ষার্থীর ও গণিতে ১৩ শতাংশের অবস্থা খুবই খারাপ। তবে যত ওপরে উঠছে, পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হচ্ছে। ষষ্ঠ শ্রেণির তুলনায় অষ্টমে উঠে কিছু ভালো এবং দশমে আরও ভালো করছে।

তবে বিদ্যমান শিক্ষাক্রমে লেখা, পড়া, শোনা ও বলা—এই চারটি বিষয়ে জোর দেওয়ার কথা বলা হলেও শিক্ষকেরা শুধু লেখা আর পড়া—এ দুটির ওপর জোর দিচ্ছেন বলে ইংরেজি, বাংলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষার্থীরা ছোটবেলা থেকেই দক্ষতা অর্জনে পিছিয়ে যাচ্ছেন বলে মনে করছেন শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা। তাঁরা বলছেন, বলা ও শোনা—এ দুটি বিষয়ে শিক্ষকেরা গুরুত্বই দিচ্ছেন না। যদিও এর পেছনে দুর্বল অবকাঠামো একটা কারণ। ক্লাসে শিক্ষক শুধু লেকচার দিলেই শিক্ষার্থীদের সফট স্কিল বাড়বে না বরং সৃজনশীল চিন্তাভাবনার জন্য একটা পরিবেশ তৈরি করা শিক্ষকদের দায়িত্ব।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের এমনভাবে গড়ে তোলা উচিত, যাতে তারা পরবর্তী পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। এ দায়িত্ব শিক্ষকদের। তাঁদের উচিত শ্রেণিকক্ষে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা, যাতে শিক্ষার্থীরা পরস্পর আলোচনা করে তাদের সৃজনশীল চিন্তাভাবনাসহ অন্যান্য দক্ষতা অর্জন করতে পারে।

তবে চাকরিদাতাদেরও কিছুটা নমনীয় হওয়া উচিত উল্লেখ করে অধ্যাপক হাফিজুর রহমান বলেন, চাকরিদাতারা যে সবকিছু রেডি পাবেন, এই ভাবনা ঠিক নয়। যে শিক্ষার্থী স্নাতকে ভালো ফল করেছেন, তাঁকে চাকরি দিয়ে একটু সময় দিলেই সে অল্প কয়েক দিনে কম্পিউটার চালানো শিখতে পারবে। সেই সুযোগটাও দেওয়া উচিত। তবে শিক্ষার্থীদেরও উচিত নিজ উদ্যোগে হার্ড স্কিলগুলো অর্জন করা। এগুলো করলে স্বাভাবিকভাবেই সে এগিয়ে থাকবে।

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037851333618164