ভর্তি বাণিজ্য ও নানা অনিয়ম, দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সোমবার ঢাকায় কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে দুদকের সহকারী পরিচালক আতাউর রহমান সরকার ও উপসহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
অধ্যক্ষ শাহান আরাকে সোমবার বিকেল পৌনে ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যক্ষ বলেন, তার বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও হয়রানিমূলক অভিযোগ আনা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কোনো অনিয়ম, দুর্নীতি দুদক প্রমাণ করতে পারবে না।
এর আগে ৮ নভেম্বর অধ্যক্ষ শাহান আরার কাছে নোটিশ পাঠিয়ে তাকে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়। তিনিসহ প্রতিষ্ঠানটির সংশ্নিষ্ট কয়েকজনের বিরুদ্ধে ভর্তি বাণিজ্য, পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ, প্রতিষ্ঠানের তহবিল তছরুপসহ বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। অভিযোগটির সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে সোমবার অধ্যক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি পরীক্ষা, শিক্ষার্থী ভর্তি ও আয়-ব্যয়ের নথি চেয়ে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষের কাছে ১৩ সেপ্টেম্বর চিঠি দেওয়া হয়। অনুসন্ধান কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে এরই মধ্যে কিছু নথি পাঠানো হয়েছে। বাকি নথিগুলো দেওয়া হবে বলে দুদককে জানানো হয়েছে।
ড. শাহান আরার বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে জানা যায়, গত বছরের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ২০১৯ সালের আগস্টে শিক্ষার্থীদের টেস্ট পরীক্ষা নেওয়া হয়। এ পরীক্ষায় অকৃতকার্যদের মধ্য থেকে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের রিটেস্ট পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরে এসব শিক্ষার্থীকে কৃতকার্য দেখিয়ে চূড়ান্ত পরীক্ষা অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া হয়। ওই সময় অধ্যক্ষের বিশেষ বিবেচনায়ও কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থীকে উত্তীর্ণ দেখানো হয়। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ওই শিক্ষার্থীদের পাস দেখিয়ে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়। অকৃতকার্য প্রতি বিষয়ের বিপরীতে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে বলে তথ্য রয়েছে দুদকের কাছে।
অধ্যক্ষের কাছে দুদক যেসব নথি চেয়েছে সেগুলো হলো- গত বছরের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত টেস্ট পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের নামের তালিকা, অনুত্তীর্ণদের মধ্যে অধ্যক্ষের বিশেষ বিবেচনায় উত্তীর্ণ দেখিয়ে ফরম পূরণকারীদের তালিকা, প্রথম ও দ্বিতীয় রিটেস্ট পরীক্ষার মাধ্যমে উত্তীর্ণ দেখিয়ে ফরম পূরণে সুযোগ দেওয়া শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের নাম-ঠিকানা, মোবাইল নম্বর।
এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরম পূরণ বাবদ নেওয়া টাকার পরিমাণ-সংক্রান্ত তথ্য, টেস্ট পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের প্রথম ও দ্বিতীয় বার রিটেস্ট পরীক্ষা গ্রহণের সপক্ষে শিক্ষা বোর্ড অনুমোদিত নীতিমালার ফটোকপি চাওয়া হয়েছে। আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের তিনটি শাখার ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরের বিভিন্ন খাতের আয়-ব্যয়ের রেকর্ডপত্রও চাওয়া হয়েছে।
আইডিয়াল স্কুলের বনশ্রী শাখার প্রধান শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধেও ফরম পূরণ, ভর্তি বাণিজ্য ও বিভিন্ন দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে দুদকে।
জানা গেছে, রাজধানীর নামি ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভর্তি বাণিজ্যের অভিযোগে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে সম্প্রতি একাধিক শাখায় অভিযান চালায় দুদক। ওই অভিযানের সময় ভর্তি ও ভর্তি পরীক্ষায় দুর্নীতি, জালিয়াতির কিছু প্রমাণ পাওয়া যায়। ওই অভিযানের সূত্র ধরে এবার অভিযোগটির ব্যাপকভিত্তিক অনুসন্ধান শুরু করা হয়েছে।