কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের এবারের উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষায় পাসের হার কম হওয়ার পেছনে নয়টি কারণ রয়েছে বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। বোর্ডের গঠিত চার সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। গত বুধবার বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুল খালেকের কাছে ওই প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
তদন্ত কমিটির পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করা হয়, অন্যান্য কারণের পাশাপাশি মূলত নমুনা উত্তরমালা সরাসরি অনুসরণ, প্রধান পরীক্ষক ও পরীক্ষকদের উত্তরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বোর্ডের দেওয়া নির্দেশনায় দুর্বলতা থাকা এবং প্রশিক্ষণবিহীন পরীক্ষক দ্বারা উত্তরপত্র মূল্যায়ন করায় ফলাফল খারাপ হয়েছে।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক মো. জামাল নাছের ওই প্রতিবেদন জমা দেন। চার পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে ফলাফল ভালো করার জন্য নয়টি সুপারিশ করা হয়। বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রতিবেদন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এ বোর্ডে ২০১৭ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাসের হার ৪৯ দশমিক ৫২। বোর্ডের গড় পাসের হারের চেয়েও ফল খারাপ—এমন কলেজের সংখ্যা ২০১। এসব কলেজের অধ্যক্ষকে ফল বিপর্যয়ের কারণ ব্যাখ্যা এবং ভবিষ্যতে ভালো করার সুপারিশ জানাতে গত ২৫ জুলাই সাত দিনের সময়সীমা বেঁধে দেয় বোর্ড। একই সঙ্গে তদন্ত কমিটিকে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক মো. জামাল নাছের, বোর্ডের উপপরিচালক (হিসাব ও নিরীক্ষা) মোহাম্মদ ছানাউল্যা, উপকলেজ পরিদর্শক বিজন কুমার চক্রবর্তী ও উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (উচ্চমাধ্যমিক) মো. হাবিবুর রহমান ২০১টি কলেজের অধ্যক্ষদের কাছ থেকে প্রাপ্ত জবাব পর্যালোচনা করে ওই প্রতিবেদন দেন।
পর্যালোচনায় ফল বিপর্যয়ের পেছনে পাঠ্যক্রম, পাঠদানের পদ্ধতি, প্রশ্নপদ্ধতি, পরীক্ষাপদ্ধতি, পরীক্ষা ব্যবস্থাপনায় অসামঞ্জস্যসহ নানা কারণ উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে পরীক্ষকেরা বোর্ড প্রদত্ত নমুনা উত্তরপত্র সরাসরি অনুসরণ করেছেন। প্রশিক্ষণবিহীন পরীক্ষক দ্বারা উত্তরপত্র মূল্যায়ন, ইংরেজি বিষয়ে দুর্বলতা, শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেটে আসক্তি, অতিমাত্রায় প্রাইভেট ও কোচিং–নির্ভরতা এবং শিক্ষার্থীদের ক্লাসে উপস্থিতির হার নিম্নগামী বলে উল্লেখ করা হয়।
তদন্ত কমিটি ফল বিপর্যয় ঠেকাতে নয়টি সুপারিশ উল্লেখ করে। এগুলো হচ্ছে ভেন্যু কেন্দ্র (নিজ কলেজের পাশের কোনো প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা নেওয়া) বাদ দেওয়া, ইংরেজি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান, অভিন্ন প্রশ্নপদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহণ, প্রধান পরীক্ষক ও পরীক্ষকদের প্রশিক্ষণ, গুণগত শিক্ষার মানোন্নয়নে সেমিনার ও কর্মশালা করা, পরীক্ষাকেন্দ্রে অহেতুক ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি না করা, অধিক সংখ্যক পরীক্ষক নিয়োগ, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ে শিক্ষকের পদ সৃষ্টি এবং শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষমুখী করা।
জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক মো. জামাল নাছের কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি জানান, ফল বিপর্যয়ের কারণ ও শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন নিয়ে ২২ ও ২৩ আগস্ট সব কলেজের অধ্যক্ষদের নিয়ে সভা হবে।
বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুল খালেক বলেন, প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করা হবে।
বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অধিভুক্ত ৬ জেলার ৩৬৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ১ লাখ ৩৭২ জন এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতকার্য হন ৪৯ হাজার ৭০৪ জন। কিন্তু ফল আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খারাপ হয়। পাসের হার ৪৯ দশমিক ৫২।