একসঙ্গে এসএসসি জয় এতিমখানায় বেড়ে ওঠা ১২ বন্ধুর | এসএসসি/দাখিল নিউজ

একসঙ্গে এসএসসি জয় এতিমখানায় বেড়ে ওঠা ১২ বন্ধুর

সবার স্বপ্ন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর।

ছোটকালেই কেউ হারিয়েছেন বাবাকে। কেউ মাকে। আবার কেউ অবুঝ বয়সেই নিখোঁজ হয়েছিলেন পরিবার থেকে। পরিবারহীন এমন ১২ বন্ধু এবার এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। সবার স্বপ্ন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর।

অনিশ্চিত পথের জীবন থেকে ওঠে আসা এই ১২ জন কিশোর হলো, কবির হোসেন হৃদয়, সাব্বির হোসেন, সফিকুল ইসলাম, পারভেজ রানা, আব্দুল মজিদ, সুজন আলী, রাকিবুল হাসান, বরজুল রহমান বায়েজিদ, তাপস চন্দ্র রায়, জিহাদ মিয়া, আল আমিন ও হৃদয় কুমার।

তারা ছোট থেকে বেড়ে ওঠেছেন পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের জলাপাড়া গ্রামে অবস্থিত ‘আহছানিয়া মিশন শিশু নগরীতে’। এ বছর পঞ্চগড় সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে তারা। এসএসসির সফলতায় তাদের যেন বাধভাঙা উচ্ছ্বাস, চোখে নতুন জীবন সাজানোর স্বপ্ন।

অনাথ, ছিন্নমুল এবং বঞ্চিত ও হারিয়ে যাওয়া পথশিশুদের সুন্দর ভবিষ্যত গড়তে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় আহছানিয়া মিশন শিশু নগরী।

জিপিএ-৪.৯৬ অর্জন করা কবির হোসেন হৃদয় জানায়, খুব ছোটবেলায় বাবা ও মায়ের বিচ্ছেদ হয়। এরপর থেকেই অবহেলার শিকার হয়ে পড়ি। এক পর্যায়ে মাত্র ৫ বছর বয়সে মায়ের সঙ্গে অভিমান করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাই। এসে পথশিশুর পরিচয়ে জীবন শুরু করেন। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে কোনো এক রেলস্টেশন থেকে সমাজকর্মীর মাধ্যমে এই শিশু নগরীতে আসি। আমার বাড়ি ‘নারায়ণগঞ্জ’ শুধু এটুকুই মনে আছে।

জিপিএ-৪.৫৪ পাওয়া আব্দুল মজিদ বলেন, আমার বাড়ি দিনাজপুরে এতটুকু মনে আছে। ছোট বেলায় বাবাকে হারিয়েছি। এরপর ঠাঁই হয় এখানে। এখানে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে, ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হই পাশের বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে অষ্টম শ্রেণি পাস করে কারিগরি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হই এবং এ বছর এসএসসি পাস করি।

জিপিএ-৪.৭৫ পাওয়া সাব্বির হোসেন বলেন, ছোটবেলায় পরিবার থেকে নিখোঁজ হই। আমার জেলার নামও আমি বলতে পারি না। শুধু মনে আছে, বাবার নাম মারুফ, মায়ের নাম ছবি আক্তার।

জিপিএ-৪.৮২ পাওয়া আব্দুল মজিদ বলেন, আমার বাড়ি লালমনিরহাটের কালিগঞ্জের তুষভান্ডারে। বাবা-মা, পরিবার সবই আছে। খুব ছোটবেলায় পরিবার থেকে হারিয়ে গেলে ঠাঁই হয় এখানে। পরবর্তীতে পরিবারের সন্ধান মিললেও এখানেই থেকে যাই। এসএসসি পাস করবো- এটা ছিল স্বপ্নের মতো। পাশ করেছি, এই অনুভূতি বুঝাতে পারবো না।

শিশু নগরীর সমাজকর্মী ইউসুফ বলেন, বিভিন্নভাবে বঞ্চিত শিশুদের এখানে ঠাঁই হয়। তাদেরকে এখানে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। এরপর তারা মাধ্যমিকে স্থানীয় স্কুলে ভর্তি হয়।

শিশু নগরীর কৃষি কর্মকর্তা সেলিম প্রধান বলেন, এখানে শিশুরা নিজের বাড়ির মতোই থাকে, পড়ালেখা করে। এই শিশুদের ১৮ বছর পূর্ণ হলে কর্মমুখী শিক্ষা দিয়ে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে ঢাকা আহছানিয়া মিশন।

আহছানিয়া মিশন শিশু নগরীর সেন্টার ম্যানেজার দিপক কুমার রায় বলেন, অন্ধকারে পা বাড়ানো শিশুদের আলোর পথে নিয়ে আসে আহছানিয়া মিশন। তাদের সু-নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে এই শিশু নগরী প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমানে এখানে বিভিন্ন বয়সি ১৬০ জন শিশু রয়েছে। এ বছর ১২ জন এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিয়োগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।