৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে লুট হওয়া প্রায় ১ হাজার ৪০০ অস্ত্র এবং আড়াই লাখ গোলাবারুদ নয় মাসেও উদ্ধার করা যায়নি। গত ১৪ মে পর্যন্ত পুলিশ সদর দপ্তরের প্রতিবেদন থেকে এ পরিসংখ্যান জানা গেছে।
এসব গোলাবারুদ উদ্ধারে পুলিশ সদর দপ্তরসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট কাজ করছে। থানাসহ বিভিন্ন স্থাপনা থেকে লুট হওয়া অনেক অস্ত্র এখনও চিহ্নিত অপরাধীদের কাছে রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তারা এসব অস্ত্র সন্ত্রাসী কার্যক্রমে ব্যবহার করছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র যতদিন দুষ্কৃতিকারীদের কাছে থাকবে ততদিনই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির শঙ্কা থাকবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যমতে, গেল বছর ১১০৬টি চাইনিজ রাইফেল লুট হয়েছে। তার মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ৯৯১টি। এখনও ১১৫টি উদ্ধার হয়নি। রাইফেল বিডি ১২টি লুট হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে ১১টি। এখনও ১টি উদ্ধার হয়নি। চায়না এসএমজি ২৫১টি লুট হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে ২২১টি। এখনো হদিস নেই ৩০টির। এলএমজি ৩৪টি লুট হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে ৩১টি। এখনও ৩টি উদ্ধার হয়নি।
চায়না পিস্তল লুট হয়েছে ৫৩৯টি। উদ্ধার হয়েছে ৩২৫টি। এখনও ২১৪টি উদ্ধার হয়নি। ৯ পয়েন্ট ১৯ মি.মি পিস্তল ১০৯২টি লুট হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে ৬৩০টি। এখনও ৪৬২টি উদ্ধার হয়নি।এসএমজি লুট হয়েছে ৩৩টি। উদ্ধার হয়েছে ৩৩টি। ১২ বোরের শটগান লুট হয়েছে ২০৭৯টি। উদ্ধার হয়েছে ১৬৭৫টি। এখনও ৪০৪টি উদ্ধার হয়নি।
গ্যাসগান (সিঙ্গেল শর্ট) লুট হয়েছে ৫৮৯টি। উদ্ধার হয়েছে ৪৫৮টি। এখনও ১৩১টির হদিস নেই। গ্যাসলঞ্চার ১৫টি লুট হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে ৮টি। ৭টি এখনও হদিস নেই। সিগন্যাল পিস্তল ৩টি লুট হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে ১টি। এখনও ২টির হদিস নেই। এ নিয়ে সর্বমোট ৫৭৫৩টি অস্ত্র লুট হয়েছে। তার মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ৪৩৮৪টি। এখনও ১৩৬৯টি অস্ত্র উদ্ধার হয়নি।
পুলিশি স্থাপনা থেকে বিভিন্ন বোরের গুলি ৬ লাখ ১২ হাজার ৯৮২টি গুলি লুট হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে ৩৬৮৫৫৫টি। এখনও উদ্ধার হয়নি ২৪৪৪২৮টি।
বিভিন্ন ধরনের টিয়ার গ্যাস লুট হয়েছে ৩১২১২টি। উদ্ধার হয়েছে ১৯ হাজার ৮২১টি। এখনও উদ্ধার হয়নি ১১.৩৯১টি। সাউন্ড গ্রেনেড লুট হয়েছে ৪৭৪৬টি। উদ্ধার হয়েছে ৩৫৭৪টি। এখনও ১১৭২টি, উদ্ধার হয়নি। কালার স্মোক গ্রেনেড লুট হয়েছে ২৭৩টি। উদ্ধার হয়েছে ২৩২টি। এখনও ৪১টি উদ্ধার হয়নি। ব্যাং স্টান গ্রেনেড লুট হয়েছে ৫৫টি।
উদ্ধার হয়েছে ৩৩টি। এখনও ২২টি উদ্ধার হয়নি। ফ্ল্যাশ ব্যাং ৯০০টি লুট হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে ৬১৬টি। এখনও উদ্ধার হয়নি ২৮৪টি। সব মিলিয়ে লুটের তালিকায় ৬৫১৮৩২টি। তার মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ৪ লাখের বেশি।
গণঅভ্যুত্থানে বিতর্কিত ভূমিকার কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে ৫ আগস্ট দেশের বিভিন্ন থানায় হামলা চালায় ছাত্র-জনতা। এই সুযোগে থানায় ঢুকে লুটপাট চালায় দুর্বৃত্তরা। এসব অস্ত্র দিয়ে শুরু হয় ছিনতাই ডাকাতির মতো ঘটনা। অস্ত্র উদ্ধারে ৪ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় যৌথ বাহিনীর অভিযান। অপরাধীদের কাছ থেকে ও পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার হয় চার হাজার ৩৭১টি অস্ত্র ও সাড়ে তিন লাখের বেশি গোলাবারুদ।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, পুলিশের যে অস্ত্রগুলো বাইরে রয়েছে যত দ্রুত সম্ভব সেগুলো উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে। পাশাপাশি এই অস্ত্রগুলো যেনো কোনো ধরনের অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার না হয় সেজন্য গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে।
সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক বলেন, যতদিন সবগুলো অস্ত্র উদ্ধার না হবে ততদিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটা অথবা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়া বা সংঘাত সহিংসতাসহ অন্যান্য যে কোনো অপরাধ সৃষ্টি হওয়ার যথেষ্ট শঙ্কা থেকেই যাবে।