ফাইল ছবি
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় বসে দেশের সব সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে নীতিনির্ধারণী জায়গায় পরিবর্তন আনে। এরই ধারাবাহিতকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদের নেতৃত্বে দায়িত্ব নেওয়া নতুন প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়টির নানা উদ্যোগ ও সংস্কারে হাত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও ফ্যাসিস্ট আমলের অসম রীতি-নীতির পরিবর্তন; দুর্নীতিবাজ, অপরাধী ও দুর্বৃত্তায়ণের চর্চাকারী আওয়ামীপন্থি শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ বেশকিছু বিষয়ে বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকে প্রশাসনের ব্যর্থতার দাবি উঠেছে। তারপরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিগত দশ মাসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নানা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে।
অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেসকল উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সেগুলো এ আয়োজনে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।
আবাসিক হলে গণরুম প্রথা বিলুপ্তিকরণ
আবাসিক হলে দীর্ঘকাল ধরে গণরুম প্রথা চলে আসছিলো। মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থী ও ক্ষমতাবান ছাত্রনেতা-নেত্রী কর্তৃক অবৈধভাবে হলের সিট দখল করে রাখার ফলে এক কক্ষে অনেক সময় ৩০-৪০ জনকেও থাকতে হতো। নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নিয়েই সর্বসম্মতিক্রমে গণরুম প্রথা বাতিল করে মেধা ও প্রয়োজনের ভিত্তিতে আসন বণ্টনের নিয়ম চালু করে।
জুলাইয়ে হামলাকারীদের শাস্তিমূলক ব্যবস্থায় অনুসন্ধানী কমিটি গঠন
আন্দোলন চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সহিংসতায় জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার উদ্দেশ্যে একটি সত্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি প্রাথমিক তদন্তে ১২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে হামলায় জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এরপরে হামলায় আরও জড়িতদের চিহ্নিত করার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রমাণ সরবরাহ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।আহতদের চিকিৎসা ব্যবস্থা ও আর্থিক সহায়তা
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আহত ঢাবি শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসার জন্য ৬-সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এই কমিটি আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা কার্যক্রমে সার্বিক বিষয়ে দেখভাল করছে। ইতোমধ্যে অনেক আহত শিক্ষার্থীকে প্রায় কয়েক লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
বিশেষ আপদকালীন আর্থিক সহায়তা
হলে আবাসিক সিট পাওয়ার সকল শর্ত পূরণ করা সত্ত্বেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসকল ছাত্রীকে আসন বরাদ্দ দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে তাদের বিশেষ আপদকালীন আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ন্যায্যতা ও চাহিদার ভিত্তিতে আবেদনকারী ছাত্রীদের মধ্য থেকে নির্বাচিতদের প্রতি মাসে ৩ হাজার টাকা হারে এই সহায়তা প্রদান করা হবে।উচ্চতর গবেষণাকেন্দ্রসমূহে পরিচালক নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ
নতুন প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা উচ্চতর গবেষণা কেন্দ্রসমূহে পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও যোগ্যতাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়েছে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিভিন্ন ইন্সটিটিউটে পরিচালক নিয়োগের লক্ষ্যে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চা
গণতন্ত্র চর্চা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও মানবাধিকার বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি এবং এ সংক্রান্ত মৌলিক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অ্যাপ্লাইড ডেমোক্রেসি ল্যাব। এই ল্যাবে গবেষণার মাধ্যমে মানবাধিকার, সংকট ব্যবস্থাপনা, শান্তি ও সম্প্রীতি, গণতন্ত্র চর্চাসহ বিভিন্ন প্রয়োগিক বিষয়েও শিক্ষার্থীরা দক্ষতা অর্জন করতে পারবে। যা ভবিষ্যতের নেতৃত্ব তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। শিক্ষার্থীদের দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতেও এই ল্যাব কার্যকর অবদান রাখবে বলে আশা করা যাচ্ছে।ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ
অতিদ্রুত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন আয়োজনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনকে চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তাকে সহায়তা করার লক্ষ্যে আরও ৯ জন রিটার্নিং কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন- অধ্যাপক ড. এ এস এম মহিউদ্দিন (মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগ), অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী (সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট), অধ্যাপক ড. কাজী মোস্তাক গাউসুল হক (তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগ), অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম (উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ), অধ্যাপক ড. নাসরিন সুলতানা (স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট), অধ্যাপক ড. মো. শহিদুল ইসলাম (শহীদুল জাহীদ) (ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগ), অধ্যাপক ড. তারিক মনজুর (বাংলা বিভাগ), অধ্যাপক ড. এস এম শামীম রেজা (গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ) ও সহযোগী অধ্যাপক শারমীন কবীর (শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট)। তারা উপাচার্যের সঙ্গে পরামর্শক্রমে নির্বাচন পরিচালনার পরবর্তী কার্যক্রম নির্ধারণ করবেন ও নির্বাচন প্রক্রিয়া এগিয়ে নেবেন।
এর আগে, ডাকসু নির্বাচনে ছয় সদস্যের একটি নির্বাচন কমিশন থাকলেও এবার কমিশনের সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ১০ জন করা হয়েছে। নির্বাচন পরিচালনায় স্বচ্ছতা, গ্রহণযোগ্যতা ও সার্বিক সহায়তা নিশ্চিত করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
শিক্ষাগত উৎকর্ষতা ও গবেষণা কার্যক্রম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে উল্লেখযোগ্য কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে প্রশাসন। পরিবেশ, কৃষি, স্বাস্থ্য, পারমাণবিক বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি চীন, জাপান, এবং ইউরোপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। যেমন: বোস-আইনস্টাইন তত্ত্বের শতবর্ষ উপলক্ষে চারদিনব্যাপী একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়, যাতে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ব্রাজিল, জাপান, হংকং, ভারত, পাকিস্তান ও নেপালের ৩০ জন বিজ্ঞানী অংশ নেন। ৫টি ছাত্রী হলের কম্পিউটার ল্যাব সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কম্পিউটার প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া, ইন্ডাস্ট্রি ও একাডেমিয়ার সম্পর্ক উন্নয়নেও পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত কিউএস এশিয়া ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তাছাড়াও বৈজ্ঞানিক গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশে দেশসেরা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘স্কোপাজ ডাটাবেজ’-এর বিভিন্ন উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সম্প্রতি এ তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের গবেষণা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারী ম্যাগাজিন ‘সায়েন্টিফিক বাংলাদেশ’।
শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদানঅসচ্ছল ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি কার্যক্রম জোরদার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের মানসিক সুস্থতা বজায় রাখার লক্ষ্যে কাউন্সেলিং, কর্মশালা ও বিভিন্ন সেবা প্রদান কর্মসূচির আয়োজন করা হচ্ছে। উন্নত চিকিৎসাসেবা প্রদানের লক্ষ্যে হলভিত্তিক টিকা কার্যক্রম, রক্তদান কর্মসূচি ইত্যাদির আয়োজন করা হয়েছে।
ক্যাম্পাসে শাটল বাস সার্ভিস চালু
শিক্ষার্থীদের অভ্যন্তরীণ চলাচলের সুবিধার্থে প্রথমবারের মতো ক্যাম্পাসে শাটল বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। ৩টি নন এসি মিনিবাস সকাল ৭ টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চক্রাকারে ক্যাম্পাসের ৩টি রুটে চলাচল করছে। এছাড়া গ্রিন ফিউচার ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ যাতায়াতের জন্য আজ সোমবার চালু হয়েছে চারটি গাড়ি। প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত এ সেবা চালু রয়েছে।
পরিবেশ সংরক্ষণ ও সহশিক্ষামূলক কার্যক্রম
বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিচ্ছন্নতা অভিযান, প্লাস্টিক বর্জন কর্মসূচি, বৃক্ষরোপণ মেলা ইত্যাদি ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও, কয়েকটি হলে ‘মব জাস্টিস’ বিরোধী সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। বিভিন্ন রকম সহশিক্ষামূলক কার্যক্রম - যেমন বিতর্ক প্রতিযোগিতা, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, যোগব্যায়াম প্রশিক্ষণ ইত্যাদি আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়ন, গবেষণার নতুন দিগন্ত উন্মোচন, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সম্প্রসারণ এবং পরিবেশ ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়েছে।
একাডেমিক ও গবেষণা অগ্রগতি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গত এক বছরে গবেষণা এবং শিক্ষা খাতে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ গবেষণা ও শিক্ষা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের লিসেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটি, চীনের নানজিং ইউনিভার্সিটি, ইউনান পিকিং ক্যান্সার হাসপাতাল, তুরস্কের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মালদ্বীপের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে একাধিক যৌথ গবেষণা, পিএইচডি প্রোগ্রাম এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থী বিনিময় কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা উচ্চতর গবেষণা কেন্দ্রসমূহে পরিচালক নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়েছে। একইসঙ্গে গবেষক ও শিক্ষকদের জন্য আইকিউএসি কর্তৃক ১৬ দিনব্যাপী ‘গবেষণা পদ্ধতি’ শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে যেখানে প্রায় ৩০০ শিক্ষক-গবেষক অংশগ্রহণ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি জাপান সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি এজেন্সি এবং জাইকা অর্থায়িত প্রায় ১০০ কোটি টাকার আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রকল্পের নেতৃত্ব পাওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। এ গবেষণা প্রকল্পগুলো পরিবেশ, জৈব সম্পদ এবং দুর্যোগ প্রশমন খাতে বাংলাদেশকে বৈশ্বিক গবেষণার অন্যতম অংশীদার করে তুলবে।
গবেষণা ও বুদ্ধিবৃত্তিক অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ প্রায় ৩০০ জন শিক্ষক-গবেষককে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণা সংস্থা কোয়াককোয়ারেলি সায়মন্ডসের (কিউএস) র্যাঙ্কিংয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বের সেরা ৬০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
শিক্ষার্থীবান্ধব উদ্যোগ
সাম্য হত্যাকাণ্ডের পর ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদারে প্রশাসন যেসব কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে- সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেইট বন্ধ করা, দোকান উচ্ছেদ, ছাত্রী হলের সামনে প্রক্টরিয়াল টিম মোতায়েন এবং পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়মিত প্রশাসনিক তদারকি করা হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট, ট্রান্সক্রিপ্ট ও মার্কশীট সম্পর্কিত সেবাকে আরও দ্রুত ও কার্যকর করতে নতুন একটি অভিযোগ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া চালু করেছে। যাতে নির্ধারিত দুই কার্যদিবসের মধ্যে অভিযোগের সুরাহা করা হয়।
অবকাঠামোগত উন্নয়ন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি মেগা প্রকল্প শিগগিরই বাস্তবাঢিয়ত হতে যাচ্ছে, যার মাধ্যমে ৩ হাজার ছাত্রী ও ৫ হাজার ১০০ ছাত্রের জন্য আবাসন ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা। চীন সরকারের অর্থায়নে ‘বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী হল’ নির্মাণ প্রকল্প প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে, যেখানে ১ হাজার ৫০০ ছাত্রী থাকার সুযোগ পাবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬৮টি পুরাতন ভবন সংস্কার ও সংরক্ষণের জন্য ১৫১ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, কলা ভবন ও লেকচার থিয়েটার ভবনের মধ্যবর্তী রাস্তার আরসিসি ঢালাই দিয়ে সংস্কার সম্পন্ন হয়েছে। ‘জুলাই শহিদ স্মৃতি ভবন’-এ ১ হাজার ৮ জন ছাত্রের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহিদদের স্মৃতিকে শ্রদ্ধার সঙ্গে বহন করে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও অংশীদারিত্ব
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় উচ্চশিক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধি ও পরিচ্ছন্নতা ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে। ফ্রান্স, ইরান, তুরস্ক, চীন, মালদ্বীপ এবং স্পেনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম সম্প্রসারিত হয়েছে। চীনা ভাষা কেন্দ্র এবং চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চীনা শিক্ষার্থীদের জন্য আন্তর্জাতিক হলে আলাদা ব্লক নির্মাণ করা হয়েছে ।সাংস্কৃতিক ও স্মৃতি সংরক্ষণ কার্যক্রম
‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান কর্নার’ এবং ‘জুলাই স্মৃতি সংগ্রহশালা’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক চেতনা ও ঐতিহাসিক দায়িত্ববোধের অংশ। শহিদদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র সংরক্ষণে পরিবার সদস্যদের কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় তা গ্রহণ করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও গবেষকদের জন্য এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। একদিকে যেমন একাডেমিক উৎকর্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে, অন্যদিকে অবকাঠামোগত উন্নয়ন শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করেছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেবল বাংলাদেশের নয়, দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে-এ প্রত্যাশা সবার।
প্রশাসনের বিভিন্ন উদ্যোগ ও পদক্ষেপ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমেদ বলেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে পরিচালিত হচ্ছে সেখানে সকল সংগঠন ও শিক্ষার্থীদের মতামত প্রাধান্য পাচ্ছে। আমাদের একেক জনের হয়তো দলীয় পরিচয় থাকতে পারে কিন্তু প্রশাসনিক কোনো কার্যক্রমে এর প্রতিফলন হবে না। বিগত সময়ে দেখা গেছে প্রশাসন একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে তার ক্ষমতাকে স্থায়ী করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ইতিহাস এটাই একমাত্র প্রশাসন যেখানে হলের প্রভোস্টগণ বলে দিতে পারবেন যে, কে কোন রুমে আছে। তিনি আরও বলেন, আমরা ইতোমধ্যে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি। শিক্ষার্থীদের স্বার্থে আরো অনেক পদক্ষেপ নিবো। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের পরিকল্পনা আছে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে নিয়ে আসার। এরকম আমাদের অনেক পরিকল্পনা আছে। এগুলো বাস্তবায়িত হতে হয়তো একটু সময় লাগতে পারে। মোটকথা বলতে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক সংগঠনের হয়ে কাজ করছে না। সকলের অংশগ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এগিয়ে যাচ্ছে।