স্থায়ী ক্যাম্পাস না থাকায় ১৮ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নির্দেশনা পেয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা পর্যালোচনা করছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) মাসিক সভা থেকে সেই সিদ্ধান্ত আসবে। সূত্র: ইউএনবি
বলা হচ্ছে, ১৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কেউ কারও ১২, ১৫, ১৮, ২০ বছরের বেশি হয়েছে, এখানে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যায়নি।
এ বিষয়ে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে থাকা সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন জানান, ওই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সীমা ছাড়িয়ে গেছে। কোনোটির ১২ বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেছে, কোনো কোনোটির ১৫, ১৮, এমনকি ২০ বছর হয়ে গেছে, এখনও স্থায়ী ক্যাম্পাসে যায়নি।
ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়া ব্যাপারে বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও যায়নি। এ বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়, সে ব্যাপারে তিন মাস আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখেছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ১৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে একটা নির্দেশনা দিয়েছে। তবে এই সংখ্যা হবে ১৮টি।শিক্ষা মন্ত্রণালয় সুত্রে জানা যায়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে পাঠানো চিঠিতে ইউজিসি চেয়ারম্যানকে বলা হয়, ১৬ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাময়িক অনুমতির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও শিক্ষা কার্যক্রম স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করেনি।
ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০-এর ধারা ১২ (১) অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে কী নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে ইউজিসির এই সদস্য বলেন, এটি বলা যাবে না। তবে চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে মাসিক সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
খুব দ্রুতই মাসিক সভা হবে। সেখানে ১২ বছরের উপরে হয়ে গেছে, কিন্তু স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি- এমন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কী কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যেতে পারলে অনুমোদন বাতিলসহ অনেক বিকল্প আছে। তবে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক না কেন, চেয়ারম্যানের নির্দেশেই তা বাস্তবায়ন করা হবে।
এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আর কতদিন সময় দেবেন জানতে চাইলে ইউজিসির এই সদস্য বলেন, ২/৩ মাসে তো আর যেতে পারবে না। সময় দিলেও স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে ৩/৪ বছর সময় লাগবে।
তিনি বলেন, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২, ১৫, ২০ বছর হয়ে গেছে, এখনও স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এসব ক্ষেত্রে ইউজিসির মাসিক সভায় বহু ধরনের সিদ্ধান্ত আসবে। কাউকে সতর্ক, কাউকে সময় দেওয়াসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত আসবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১১৭ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বেশিরভাগেরই স্থায়ী ক্যাম্পাস নেই। স্থায়ী ক্যাম্পাস সংখ্যা অনেক কম। তারপরও তাদের সময় দেওয়া হচ্ছে।
এর আগে, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারিতে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য ১৮ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দিয়েছিল ইউজিসি। ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে না পারায় চার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ, দুটির অস্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ভর্তিতে নিষেধাজ্ঞা এবং বাকি ১২ বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে আলাদা সময় দেওয়া হয়েছিল।
স্থায়ী ক্যাম্পাস না থাকায় যে ১৮ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এর মধ্যে ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ই রাজধানী ঢাকায়।বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো ঢাকার সাতমসজিদ রোডের ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, সিদ্ধেশ্বরীর স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ।
রাজারবাগের দ্য মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি, মোহাম্মদপুরের দ্য পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, গুলশানের প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, বনানীর প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটি, শ্যামলীর আশা ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ।
পান্থপথের সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি, মিরপুরের বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেস, সিলেটের নর্থ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ, কিশোরগঞ্জের ঈশা খাঁ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
খুলনার নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, ফেনীর ফেনী ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রামের পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও চিটাগং ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি এবং কুমিল্লার ব্রিটানিয়া ইউনিভার্সিটি।