কর্মবিরতিতে প্রাথমিকের চার লাখ শিক্ষক | সমিতি সংবাদ নিউজ

কর্মবিরতিতে প্রাথমিকের চার লাখ শিক্ষক

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, আদালতের নির্দেশে প্রধান শিক্ষকদের বেতন গ্রেড এক ধাপ উন্নীত হয়েছে।

#প্রাথমিক বিদ্যালয় #শিক্ষক #শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

বেতন বৃদ্ধির দাবি পূরণ না হওয়ায় আজ সোমবার থেকে সারাদেশে সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক ঘণ্টার কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন শিক্ষকরা। এর আগে গতকাল রোববার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন তারা। তাদের দাবি ১১তম গ্রেড কিন্তু সরকার দেবে ১২তম গ্রেড।কর্মবিরতিতে প্রাথমিকের চার লাখ শিক্ষক

সহকারী শিক্ষকরা ১০ম গ্রেডে বেতন চেয়ে আগে থেকে আন্দোলন করছেন। এখন তাদের বক্তব্য, অন্তত শুরুতে ১১তম গ্রেডে বেতন দিতে হবে। এ ছাড়া চাকরিতে ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার জটিলতা নিরসন এবং প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতি দিতে হবে।

এ তিন দাবিতে এক ঘণ্টা কর্মবিরতি চলবে ১৫ মে পর্যন্ত। ১৬ থেকে ২০ মে পর্যন্ত দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি করবেন শিক্ষকরা। ২১ থেকে ২৫ মে পর্যন্ত অর্ধদিবস কর্মবিরতি করবেন। ২৬ মে থেকে দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত পূর্ণদিবস কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন তারা।কর্মবিরতিতে শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীরাকর্মবিরতিতে শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীরা

এর আগে গত ১৩ মার্চ উচ্চ আদালত এক রায়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩০ হাজার প্রধান শিক্ষককে দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তার মর্যাদা দেন। সেইসঙ্গে তাদের বেতন ১০ম গ্রেডে নির্ধারণের নির্দেশ দেন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, আদালতের নির্দেশে প্রধান শিক্ষকদের বেতন গ্রেড এক ধাপ উন্নীত হয়েছে। এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড এক ধাপ উন্নীত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ব্যাপারে সরকার গঠিত কমিটির প্রতিবেদনেও সুপারিশ রয়েছে। পরামর্শক কমিটি নামের কমিটি নানা সুপারিশ করলেও শিক্ষকদের বড় অংশ তা প্রত্যাখান করেছেন।

শিক্ষকদের কর্মবিরতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মোহম্মদ মাসুদ রানা গতকাল কোনো মন্তব্য করেননি।

জানতে চাইলে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজের সভাপতি শাহিনুর আল-আমীন দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, এই মুহূর্তে সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে (শুরুর পদ) বেতন দিতে হবে। পরে স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করতে হবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, পরামর্শক কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেড বাস্তবায়ন করতে গেলে আলাদা বেতন কাঠামো প্রয়োজন। এখনই সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেড দেওয়া সম্ভব নয়।কর্মবিরতিতে প্রাথমিকের চার লাখ শিক্ষক

তিনি বলেন, বর্তমান বেতন কাঠামোতে সহকারী শিক্ষকদের যখন নিয়োগ হবে, তখন তারা ১২তম গ্রেডে নিয়োগ পাবেন। চার বছর পর সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে ১১তম গ্রেডে পদোন্নতি পাবেন। প্রধান শিক্ষকরা পাবেন দশম গ্রেড। উপদেষ্টা জানান, মন্ত্রণালয় পরামর্শক কমিটির সুপারিশ সমর্থন করে এবং তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে।

সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন সর্বশেষ ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে বাড়ানো হয়েছিল। তখন প্রশিক্ষণ পাওয়া ও প্রশিক্ষণবিহীন– দুই ধরনের প্রধান শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১১তম করা হয়। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণবিহীন সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড করা হয় ১৩তম।

২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা ঘোষণা করা হয়েছিল। তা দীর্ঘদিনেও বাস্তবায়ন হয়নি। প্রধান শিক্ষকরা ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নে আদালতের শরণাপন্ন হন। সর্বোচ্চ আদালত প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড পদমর্যাদাসহ ১০ম গ্রেডের রায় ঘোষণা করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সারাদেশে ৬৫ হাজার ৬২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে পৌনে ৪ লাখের মতো শিক্ষক আছেন। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষকদের বর্তমান বেতন ১১তম গ্রেড। আর সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১৩তম গ্রেড।

এদিকে দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষককে দশম গ্রেডে উন্নীত করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান।

ফরিদপুরের সদরপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে এক মতবিনিময় সভায় শনিবার (৩ মে) তিনি এ ঘোষণা দেন। এই ঘোষণা শিক্ষকদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। সকাল ১০টার দিকে সদরপুর উপজেলা পরিষদ হলরুমে এই সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবু নূর মো. শামসুজ্জামান আরও বলেন, চরাঞ্চলের মতো দুর্গম এলাকায় কর্মরত শিক্ষকদের জন্য বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি,তাদের রাত্রি যাপনের সুবিধার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এছাড়াও, তিনি শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দেন। তিনি জানান, আগামী এক বছরের মধ্যেই শিক্ষকদের বদলির ব্যবস্থা করা হবে। যা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকদের একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি ছিল।

#প্রাথমিক বিদ্যালয় #শিক্ষক #শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান