কর্মক্ষেত্রে না থেকেও বেতন-ভাতা নিচ্ছেন ৫৫ শিক্ষক | স্কুল নিউজ

কর্মক্ষেত্রে না থেকেও বেতন-ভাতা নিচ্ছেন ৫৫ শিক্ষক

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনের পর আত্মগোপনে রয়েছেন বরিশালের ৫৫ জন শিক্ষক।

#শিক্ষক #স্কুল #কলেজ #শিক্ষার্থী

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনের পর আত্মগোপনে রয়েছেন বরিশালের ৫৫ জন শিক্ষক। এদের মধ্যে ১০ কলেজের ৩৭ জন এবং ১৩ স্কুলের ১৮ জন শিক্ষক। তবে তারা নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় মেঘনা পাড়ের দুর্গম এলাকায় অবস্থিত শেখ হাসিনা সরকারি কলেজের ২২ জন শিক্ষকের মধ্যে ১৯ জনই ৫ আগস্টের পর থেকে অনুপস্থিত রয়েছেন। তারা সবাই সাবেক এমপি পংকজ দেবনাথের অনুসারী।

এ বিষয়ে কলেজটির অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুস কুদ্দুস বলেন, বিনা নোটিশে লাগাতার অনুপস্থিত থাকা যুক্তিসঙ্গত নয়।

বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, অনুপস্থিত শিক্ষকদের মধ্যে বরিশালের তিন কলেজের ২২ জন, ভোলার চার কলেজের ছয়জন, পটুয়াখালীর দুই কলেজের আটজন এবং পিরোজপুরের একটি কলেজের একজন শিক্ষক রয়েছেন। এদের অধিকাংশই বেতনভাতা নিয়মিত তুলছেন। তদন্ত করে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ছাড়া পটুয়াখালীর ৮টি স্কুলের ৮ জন, ভোলার একটি স্কুলের ৩ জন, বরগুনার একটি স্কুলের ২ জন এবং বরিশালের ৫টি স্কুলের ৫ জনসহ মোট ১৮ জন শিক্ষক অনুপস্থিত রয়েছেন। রাজনৈতিক কারণে এরা গা ঢাকা দিয়েছেন।

শিক্ষক নেতারা বলছেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন স্থানে মব জাস্টিসের নামে শিক্ষকরা যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, এই অনুপস্থিতি তারই প্রতিফলন। তারা এ অবস্থার অবসান চেয়েছেন।

এ ব্যাপারে বাকশিসের বরিশাল বিভাগীয় সভাপতি অধ্যাপক মোহসিন উল ইসলাম হাবুল বলেন, বেসরকারি শিক্ষকরা যে কত নির্যাতিত তা কেবল তারাই জানেন।

গভর্নিং ও ম্যানেজিং কমিটি গঠন নিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীদের চক্ষুশূল হতে হয় শিক্ষকদের। ৫ আগস্টের পর বরিশালে এ যন্ত্রণা ভয়াবহ হয়েছে। আমরা এ নিয়ে অনেক কথা বলেছি প্রশাসনের সঙ্গে।

মব জাস্টিসের নামে অবৈধভাবে শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠানে আসতে দেওয়া হচ্ছে না। রীতিমতো চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। এ জন্যই শিক্ষকরা পালিয়েছেন।

শিক্ষকদের দীর্ঘ অনুপস্থিতি শিক্ষার্থীদের পাঠক্রম বিঘ্নিত করবে। এর ভয়াবহ প্রভাব পড়বে পাবলিক পরীক্ষাগুলোর ফলাফলে।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. কালাম বলেন, আমরা এখানে কোনো ক্লাস হতে দেখি না। শিক্ষকরা পালিয়েছে তাও তো দেখি না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন বলেন, শিক্ষকরা পালিয়েছে শুনেছি। হয়তো তারা কোনোভাবে দোষী ছিল। তা না হলে পালাবে কেন! এখানে তো কোনো শিক্ষক দেখি না।

তৎকালীন এমপির ক্ষমতায় এরা কাজ করেছে। এটা শিক্ষকদের পিকনিক স্পট ছিল। ছাত্রছাত্রীদের তো এরা পড়ায়ই না। ওরা ছিল লুটপাটে ব্যস্ত। এমন চললে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা আর হবে না। এদের বাদ দিয়ে আমরা নতুন নিয়োগ চাই।

এ বিষয়ে বরিশাল শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর ইউনুস আলী সিদ্দিকী বলেন, শিক্ষকরা অনুপস্থিত থেকে বেতন তুলছেন। এটা অনিয়ম। সরকারি বেতন নিয়ে রাজনৈতিক কারণে পলাতক রয়েছেন তারা।

বিগত দিনে তারা এমন রাজনীতি করেছেন যে এখন ভয়ে তারা এলাকায় আসতে পারছেন না।

এতে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। তাদের অনুপস্থিতি আমাদের রেজাল্টের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। বাসায় বসে শিক্ষার্থীরা সব পড়া পড়তে পারে না। আসন্ন পরীক্ষা ওরা কীভাবে দেবে?

এবার বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের রেজাল্ট আগের চেয়ে খারাপ হবে। যদি এমন হয় তবে অনুপস্থিত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য যা দরকার তা করা হবে। আমরা একটি কমিটি গঠন করে তদন্ত রিপোর্ট ঊর্ধ্বতনদের পাঠাব।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বরিশাল অঞ্চলের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, কিছু শিক্ষক যারা অতীতে এমন কিছু কর্মকাণ্ড করেছেন যার ফলে তারা নিজেরাই নৈতিক মনোবল হারিয়েছেন।

গত ৫ আগস্ট থেকে তারা প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত আছেন। এটা দুঃখজনক। তারা তাদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষোভের শিকার হতে পারেন। দেশের প্রচলিত আইনেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বরিশাল অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, গত ৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতিতে বরিশাল অঞ্চলের ১০টি কলেজের ৩৭ জন শিক্ষক অনুপস্থিত রয়েছেন রাজনৈতিক কারণে। বারবার বলার পরও তারা প্রতিষ্ঠানে আসছেন না।

কিন্তু নীতিমালার সুযোগে তারা বেতনভাতা গ্রহণ করছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে নির্দেশ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গত ১৪ জানুয়ারি এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয় মন্ত্রণালয় থেকে।

কিন্তু তদন্তকারী নির্দিষ্ট করে না দেওয়ায় কোনো তদন্ত হয়নি। তদন্ত হলেই ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।

#শিক্ষক #স্কুল #কলেজ #শিক্ষার্থী