ঢাবির ১০৩৫ কোটি টাকার বাজেটের ৬৩ শতাংশই শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন: অধ্যাপক মামুন | বিশ্ববিদ্যালয় নিউজ

ঢাবির ১০৩৫ কোটি টাকার বাজেটের ৬৩ শতাংশই শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন: অধ্যাপক মামুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ১ হাজার ৩৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকার বাজেটর ৬৩ শতাংশই যাবে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির (ঢাবি) অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন।

#ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় #শিক্ষক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ১ হাজার ৩৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকার বাজেটর ৬৩ শতাংশই যাবে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির (ঢাবি) অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন।

বুধবার (১৮ জুন) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে অধ্যাপক মামুন এ মন্তব্য করেন।

তার পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো—

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ১ হাজার ৩৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গত বছর অর্থাৎ আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ৯৪৫ কোটি ১৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। যতটুকু বৃদ্ধি পেয়েছে সেটা আসলে মুদ্রাস্ফীতির মধ্যেই ঢুকে গেছে। তাই বলা যায় বরাদ্দ প্রকৃত অর্থে বাড়েনি। এই টাকার ৬৩ শতাংশই যাবে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতনে। বাকি অর্থ পণ্য ও সেবা, পেনশন ও অবসরকালীন ভাতা, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সহায়তা, যানবাহন ইত্যাদি বাবদ চলে যাবে।

উল্লেখ্য যে, এইবারের বাজেটে গবেষণায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা আর গতবার দেওয়া হয়েছে ২০ কোটি প্লাস। মুদ্রাস্ফীতি ধরলে এই বৃদ্ধিও আসলে বৃদ্ধিই না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ প্রমাণ করে ৫ আগস্টের কোন প্রতিফলনই এর মধ্যে নাই। ছাত্র-শিক্ষকরা যেই স্বপ্ন নিয়ে এই পরিবর্তন এনেছিল সেই স্বপ্নের ছিটেফোঁটাও এই বরাদ্দে নাই। আমরা দেখতে পাচ্ছি লাখ কোটি টাকা পাচার হয়, লাখ কোটি টাকা ঋণ খেলাপি হয়, লাখ কোটি টাকা দুর্নীতি হয় এবং এইসবে টাকার কোন ঘাটতি আমরা দেখি না। অথচ একটি দেশকে স্বাধীন করতে যেই বিশ্ববিদ্যালয় এত বড় ভূমিকা রেখেছিল, ৫ আগস্টে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষকদের যেই ভূমিকা ছিল সেটা বিচার করলেও শিক্ষায় জিডিপির ৫.৫ শতাংশ বরাদ্দ দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্তত ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া উচিত ছিল।

১৪০০ শিক্ষক আর ৩৫ হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রীর বিশ্ববিদ্যালয়কে কি করে মাত্র ১ হাজার কোটি ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়? ১৪০০ এর বেশি শিক্ষকের জন্য মাত্র ২১ কোটি টাকা গবেষণা বরাদ্দ? Are you kidding? পৃথিবীর অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেখানকার একটি বিভাগের একজন শিক্ষকই এর চেয়ে বেশি গবেষণা বরাদ্দ পায়। পৃথিবীর অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেখানে একজন শিক্ষক নিয়োগ পাওয়া মাত্রই তাকে সিড মানি হিসেবে কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়।

তবে প্রশ্ন থেকেই যায়। গবেষণার এই সামান্য বরাদ্দ আমরা কিভাবে খরচ করি? আমরা কি এর সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারি। আমরা যে পারি না তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো এই গবেষণা বরাদ্দ থেকে সব শিক্ষককে গবেষণা ভাতা হিসেবে ১৫ হাজার টাকা দেওয়া। গবেষণা বরাদ্দ কিভাবে ভাতা হয়? গবেষণা বরাদ্দ কিভাবে সবাইকে সমানভাবে বন্টন করা হয়? গবেষণা বরাদ্দ দিতে হয় যোগ্যতা এবং প্রয়োজনের ওপর ভিত্তি করে। আমাদের এখানেই সমস্যা। আমরা সব শিক্ষককে সমান ভাবি। সব অধ্যাপক সমান। সব অধ্যাপক সমান বেতন পায়। এখানে যদি সত্যেন বোস বা জামাল নজরুল ইসলাম কিংবা প্রিন্সটনের জাহিদ হাসান এসেও নিয়োগ পায় সেও অন্য যেকোন অধ্যাপকের সমান বেতনই পাবে। সবাইকে এক পাল্লায় মাপার মত বড় বৈষম্য আর হতে পারে না। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে তো অবশ্যই না। বিশ্ববিদ্যালয় হলো মেধাবীদের জায়গা। যে যত বেশি মেধাবী তাকে তত বেশি মূল্যায়ন করতে হবে। কেবল তখনই এই দেশে মেধাবী তৈরি হবে।

এই দেশে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যা কিছু ঘটে সব কিছুই অনোমালি। কোন কিছুই ইউনিভার্সাল না। না শিক্ষক নিয়োগ, না শিক্ষক প্রমোশন নীতিমালা, না শিক্ষক মূল্যায়ন। ইউনিভার্সাল না হলে ইউনিভার্সিটি হবে কিভাবে?

#ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় #শিক্ষক