৭৭ শতাংশ আবাসন ফাঁকা রেখেই নির্মান হচ্ছে আরো নতুন ভবন | বিশ্ববিদ্যালয় নিউজ

৭৭ শতাংশ আবাসন ফাঁকা রেখেই নির্মান হচ্ছে আরো নতুন ভবন

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য নির্মিত আবাসিক ভবনগুলোর ৭৭ শতাংশ বাসাই ফাঁকা পড়ে আছে।

#শিক্ষক #ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় #শিক্ষার্থী

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য নির্মিত আবাসিক ভবনগুলোর ৭৭ শতাংশ বাসাই ফাঁকা পড়ে আছে।

আবাসিক বাসায় অতিরিক্ত ভাড়া, নিরাপত্তাহীনতা ও পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা না থাকায় এসব বাসা ফাঁকা পড়ে রয়েছে বলে জানা যায়। এদিকে এসব ভবন খালি থাকা সত্ত্বেও শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য আরও দুটি নতুন ভবন নির্মাণ করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট ও প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য মোট দশটি আবাসিক ভবন রয়েছে। ভবনের ৯৯টি ফ্লাটের মধ্যে ৭৮টি বাসা ফাঁকা পড়ে আছে। এছাড়া তিনটি ভবনের পুরোটিই খালি রয়েছে। এসব ভবনে মানুষ না থাকায় ভবনগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।

শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই বছর আগেও বাসাগুলো পরিপূর্ণ ছিল। কিন্তু ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারিতে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী কোয়ার্টারে সরকারি রেটে ভাড়া কাটার সিদ্ধান্ত হয়।

নীতিমালা অনুযায়ী প্রভাষক ও কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে মূল বেতনের ৪০ শতাংশ এবং অধ্যাপক ক্যাটাগরির শিক্ষকদের ৩৫ শতাংশ হিসেবে ভাড়া দিতে হয়। এতে একেকজন শিক্ষক-কর্মকর্তার গড়ে ভাড়া দাঁড়ায় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। এদিকে কুষ্টিয়া বা ঝিনাইদহে এর চেয়ে কম ভাড়ায় ভালো মানের বাসা পাওয়ায় অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মকর্তারা আবাসিক বাসা ছেড়ে শহরে বাসা ভাড়া নেন।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ভবনগুলো দীর্ঘদিন ধরেই ফাঁকা থাকার ফলে ভবনগুলোর চার পাশে ঝোপ-ঝাড়ে ভরে গেছে। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ ও ভবনের গায়ে শ্যাওলা জমে যাওয়ায় এগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।

ভবনে নিরাপত্তা না থাকায় কক্ষের জানালা, দরজা, বাতি ও টয়লেট ফিটিংসসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র রাতের আধারে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে আশেপাশের মানুষ। ফলে অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল্যবান সম্পদ।

তবে গত বছরের ২৮ অক্টোবর এসব ভবনের ভাড়া পুনঃনির্ধারণের জন্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুুল হান্নান শেখকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেই কমিটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দুই মাস পার হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানান কমিটির আহ্বায়ক ড. আব্দুুল হান্নান শেখ।

তিনি বলেন, আমরা ঢাকার বাহিরের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রতি স্কয়ার ফিটের ভাড়া ৬ টাকা নির্ধারণ করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। যদি এটা কার্যকর হয় তাহলে এই ভবনগুলো থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বছরে ৮০ লাখ টাকা উদ্বৃত্ত থাকবে। সেই সাথে কোটি টাকার ভবনগুলো নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে।

এ দিকে পুরাতন ভবনগুলো খালি পড়ে থাকলেও নতুন করে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য নির্মিত হচ্ছে দুটি ভবন। শিক্ষক কর্মকর্তাদের জন্য ১০০০ স্কয়ার ফিটের ৩৬টি ফ্লাট এবং কর্মচারীদের জন্য ৬০০ স্কয়ার ফিটের ৩৬টি ফ্লাট তৈরি করা হচ্ছে।

তবে এসব ভবনের নিরাপত্তা জোরদার, ভাড়া কমানো, ভবনগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং ক্যাম্পাস এলাকায় বাচ্চাদের শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করা হলে আবাসিক ভবনের পরিবেশ পূর্বের মতো হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী এ.কে.এম শরীফ উদ্দিন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার ফলে ভবনগুলোর অবকাঠামো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা চাহিদার আলোকে সংস্কার করে থাকি।

বর্তমানে কোনো চাহিদা না থাকায় কোয়ার্টারগুলো সংস্কার করা হচ্ছে না। ভবনগুলো এখন সংস্কার না করা হলে আর কিছুদিন পরে সেগুলো আর ব্যবহার করা যাবে না।

বাসা বরাদ্দ কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এম. এয়াকুব আলী বলেন, গত সরকারের সময়ে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী ক্যাম্পাসের কোয়ার্টারে সরকারি রেটে ভাড়া কাটার সিদ্ধান্ত হয়।

কেউ বাড়তি ভাড়া দিয়ে এই বাসায় থাকতে চায় না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সংশোধিত কমিটিকে জানিয়েছি তারা যেন এই পুরাতন বাসাগুলোকে সাবস্টেন্টেড ঘোষণা করে একটা ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়।

তাহলে শিক্ষক-কর্মকর্তারা থাকতে পারতো। কিন্তু বর্তমানে সরকারের পক্ষ থেকে এরকম কোন উদ্যোগ না নেওয়ার ফলে বাসাগুলো ফাঁকা পড়ে আছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, ইউজিসি আমাদের কাছে একটা প্রস্তাবনা চেয়েছিল যে বাসাগুলো কেন ফাঁকা পড়ে আছে। আমরা প্রস্তাবনা পাঠিয়ে দিয়েছি। কিন্তু ইউজিসি এখন পর্যন্ত কোন নির্দেশনা দেয়নি।

#শিক্ষক #ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় #শিক্ষার্থী