ছাত্রমেসে ইবি শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ, অপপ্রচার দাবি অভিযুক্তদের | বিশ্ববিদ্যালয় নিউজ

ছাত্রমেসে ইবি শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ, অপপ্রচার দাবি অভিযুক্তদের

ঘটনার দিন সকালে ভুক্তভোগী তার মেসের ‘সিট নিয়ে বৈষম্য করা হচ্ছে’ বলে অভিযোগ করেন মেসের পরিচালকের কাছে। পরে পরিচালক বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে অলিককে ডাকেন।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী অলিক কুমার সিকদারকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে আইসিটি বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। ‘ইসলামীক ইউনিভার্সিটি, কুষ্টিয়া’ নামক একটি পেজের এক পোস্টে এই দাবি করা হয়।

তবে একই পেজে দেওয়া একটি বক্তব্যে মানসিক নির্যাতনের বিষয়টি বললেও ভুক্তভোগী শারীরিক নির্যাতনের কথা বলেননি। এদিকে এই ঘটনাকে অপপ্রচার দাবি করেছেন মেস পরিচালকসহ মেসের অন্য শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি অভিযোগকারী আগে থেকেই প্যানিক অ্যাটাকের রোগী ছিলো। এছাড়া রোগের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যালের উপপ্রধান অফিসার ডা. পারভেজ হাসান নিশ্চিত করেছেন।

গত ১৭ মে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শবর্তী হোয়াইট হাউজ ছাত্রাবাসে এই ঘটনা ঘটে। পরে ভুক্তভোগীকে ইবি মেডিক্যালে নেয়া হয়। এরপর সোমবার (১৮ মে) পুনরায় তাকে ঝিনাইদহ মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়।

মেসের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঘটনার দিন সকালে ভুক্তভোগী তার মেসের ‘সিট নিয়ে বৈষম্য করা হচ্ছে’ বলে অভিযোগ করেন মেসের পরিচালকের কাছে। পরে পরিচালক বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে অলিককে ডাকেন। ওই সময় ভুক্তভোগীর সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান কয়েকজন শিক্ষার্থী (অধিকাংশ আইসিটি বিভাগের)। পরে ভুক্তভোগী রুমে ফিরে গেলে প্যানিক অ্যাটাকে আক্রান্ত হন। পরবর্তীতে মেসে থাকা শিক্ষার্থীরা অলিককে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যালে নিয়ে যান। চিকিৎসার পরে রাতে কিছুটা সুস্থ হলেও পরদিন (১৮ মে) আবারও প্যানিক অ্যাটাক হয় এবং দুপুরে তাকে ঝিনাইদহ মেডিক্যালে নেওয়া হয়।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর রুমমেট জয়দেব জানান, গতকাল কয়েকজন দাদাকে (অলিক) ডেকে নিয়ে যায়। ফিরে এসে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। পরে দাদা আমার কাছে পানি চাইলে আমি দেই। এরপর তিনি বাথরুমে যান। সেখানেই অসুস্থ বোধ করলে মাথায় পানি দেওয়া হয়। পরে প্যানিক অ্যাটাক হলে তাকে মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে আগে থেকে প্যানিক অ্যাটাকে ভুগতেন কিনা তা জানি না। চিকিৎসার পর কিছুটা স্বাভাবিক হন। তবে তিনি রাতেই কয়েকজন বন্ধুকে কল দিয়ে ঝিনাইদহ মেডিক্যালে যাওয়ার কথা জানিয়ে রাখছিলেন।

অভিযোগের বিষয়ে আইসিটি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ইকবাল হোসেন বলেন, সিট নিয়ে তর্কাতর্কি হয়েছিল। ভুক্তভোগী অভিযোগ করছে, তাকে হলে যেতে বাধ্য করেছে আইসিটি বিভাগের একটি সিন্ডিকেট যা আসলে ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে বলা। মেডিক্যালে গিয়ে সে জানায়, প্রথম বর্ষে র‍্যাগিংয়ের পর থেকেই মাঝে মাঝে প্যানিক অ্যাটাক হতো। বিষয়টি আমরা আগে জানতাম না, ডাক্তারই প্রথম জানায়। ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া’ নামের একটি ফেসবুক পেজে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে ঘটনাটি ভাইরাল করা হয়েছে। আমরা ওই পেজের বিরুদ্ধে মামলা করব। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ প্রমাণ করতে হবে।

ছাত্রাবাসের পরিচালক আইসিটি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের সোলাইমান হোসেন বলেন, সে (ভুক্তভোগী) সিট নিয়ে বৈষম্য হচ্ছে বলে অভিযোগ করলে তাকে ডেকে সমাধান করার চেষ্টা করছিলাম। তখন উভয়পক্ষের মধ্যে কিছুটা তর্কাতর্কির সৃষ্টি হয়। তাকে রুমে পাঠিয়ে দিলাম। পরে শুনেছি প্যানিক অ্যাটাক হয়েছে। আমরা সবাই মিলে তাকে মেডিক্যালে নিয়ে যায়। মেসের সিট নিয়ে ব্যক্তিগত আক্রোশে এমনটা প্রচারণা চালাচ্ছে। এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। শুনেছি সে আগে থেকেই প্যানিক অ্যাটাকের রোগী।

এ দিকে ভুক্তভোগীর সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যালের উপপ্রধান অফিসার ডা. পারভেজ হাসান বলেন, ওই শিক্ষার্থী আগেও ৪-৫ বার চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন। তার প্যানিক অ্যাটাকের সমস্যা আগে থেকেই ছিল। গতরাতে বারবার জিজ্ঞেস করলেও প্রথমে কিছু বলেনি। পরে জানায়, প্রথম বর্ষে র‍্যাগিংয়ের পর থেকে মাঝে মাঝে এমন হয়। আমি তাকে স্থায়ী সমাধানের জন্য সাইকিয়াট্রিস্ট দেখানোর পরামর্শ দিয়েছি। তিনি কোন ডাক্তার দেখাননি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আমরা অবগত হয়েছি। সার্বিক বিষয়ে খতিয়ে দেখার জন্য আমরা প্রক্টরিয়াল বডি আলোচনায় বসবো।