জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আমিনুলের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ | বিশ্ববিদ্যালয় নিউজ

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আমিনুলের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

ভিসির সঙ্গে দেখা করতে চাইলে পিএসএর ভূমিকা পালন না করে বেয়াদবি করার অভিযোগ রয়েছে। ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকার পর আমিনুল জানিয়ে দেন ভিসি স্যার আজকে দেখা করতে পারবেন না। বাস্তবে দেখা যায় সম্মানিত শিক্ষকরা যে ভিসির সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন সেই তথ্যটিই ভিসিকে জানাননি আমিনুল।

#জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় #শিক্ষার্থী #ভিসি

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পিএস তথা সচিব আমিনুল আক্তারের বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেন এবং রাজনৈতিক নেতা ও শিক্ষকদের সঙ্গে খারাপ আচরণের অভিযোগ পুরনো। তবে, ফ্যাসিস্ট আমলের তৈরি উদ্ভট পদ সচিব পদে থেকে নিজেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সিনিয়র সচিব মনে করেন বলে অভিযোগ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েরই অনেকের। নানা দরকারে ভিসির দপ্তরে প্রবীণ শিক্ষক, রাজনৈতিক নেতা ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা আসেন কিন্তু আমিনুল তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন না। ভিসির সঙ্গে দেখা করতে চাইলে পিএসএর ভূমিকা পালন না করার অভিযোগ রয়েছে। ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকার পর আমিনুল জানিয়ে দেন ভিসি স্যার আজকে দেখা দিতে পারবেন না। বাস্তবে দেখা গেছে সম্মানিত শিক্ষকরা যে ভিসির সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন, বসে আছেন অনেক্ষণ সেই তথ্যটিই ভিসিকে জানাননি আমিনুল। কারণ তিনি সচিব!

অভিযেোগ রয়েছে, নিজেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রদল নেতা পরিচয়ে দাপট দেখালেও কোনো কলেজে পরিচালনা কমিটিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতার সুপারিশ মানেন না। টাকার বিনিময়ে অন্যদের দিয়ে দেন। ভিসির কাছে বিএনপি নেতারা সুপারিশ করলেও টাকার বিনিময়ে আমিনুল অন্যদের নাম দিয়ে দেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। গত ১০ মাসে এমন অনেক ঘটনা রয়েছে যে টাকার বিনিময়ে সকালে একজনকে আবার বিকেলে আরেকজনকে পরিচালনা কমিটিতে দিয়ে আদেশ জারি করেছেন। এক কলেজে তিনজনকেও দিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তজার্তিক বিষয়ক একজন নেতার একটা সামান্য অনুরোধ ছিলো ভিসি স্যারের কাছে। ভিসি স্যার সেই সুপারিশ মোতাবেক কাজ করার নির্দেশ দিলেও আমিনুল টাকার বিনিময়ে ‍বুয়েটের একজনকে দিয়েছেন সেই কলেজের পরিচালনা পর্ষদে।

তিনি বলেন, কলেজের কমিটি নিয়ে যত মামলা ও ভিসি স্যার বিব্রত প্রায় সবগুলো অঘটনের পেছনে আমিনুল রয়েছে।

সিটি কলেজ থেকে ৫০ লাখ টাকা ঘুষের অভিযোগ বিষয়ে আমিনুলের মতামত জানতে চেষ্টা করলে তিনি বারবার একটা ভূইফোঁড় ও ফ্যাসিস্ট মালিকানাধীন একটা অনলাইনের একটা লিংক দেখতে বলেন। আর একটা ফেসবুকের লিংক পাঠিয়ে দেন। যেখানে অভিযুক্ত আমিনুলের কোনো বক্তব্য নেই। ভিসির বক্তব্য রয়েছে।

ঘুষের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আমিনুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার প্রায় ৪৮ ঘন্টা পার হলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ শাখা থেকে কোনো বিবৃতি বা প্রতিবাদ পাঠানো হয়নি। এটাও রহস্যজনক বলে মনে করছেন অনেকেই।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে, উপরেজিস্ট্রার থেকে উপাচার্যের সচিব হওয়ার রেওয়াজ থাকলেও তৎকালীন আমিনুল আক্তার হয়েছিলেন সহকারী রেজিস্ট্রার থেকে। সরকার পতনের পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হন অধ্যাপক আমানুল্লাহ। তিনি গত বছরের ২৬ আগস্ট দায়িত্ব নিতে ক্যাম্পাসে যেতেই নিজেকে উপাচার্যের সচিব পরিচয় দিয়ে সবার আগে এগিয়ে যান আমিনুল। ধীরে ধীরে উপাচার্যের বিশ্বস্ত হতে শুরু করেন। এ সুযোগে সিন্ডিকেটের জাল বিছিয়ে দেন। উপাচার্যকে কবজায় নিয়ে তার বাসভবন ও অফিসে কে কে আসবেন, কারা দেখা করতে পারবেন, তা নির্ধারণ করেন আমিনুল আক্তার। পুরস্কার স্বরূপ তিনি এখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার।

সূত্র বলছে, গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর আব্দুল হাই সিদ্দিক সরকারকে ভারপ্রাপ্ত কলেজ পরিদর্শক করা হয়; কিন্তু তাকে পুতুল করে রেখেছে আমিনুল সিন্ডিকেট। এ দপ্তরের সব কাজ আমিনুল আক্তারের নির্দেশে করে কলেজ পরিদর্শন শাখার উচ্চমান সহকারী মাহমুদুল হাসান ওরফে সনেট।

অভিযোগ রয়েছে, উপাচার্য যেখানে যান, সিন্ডিকেটের সদস্যরা সেখানেই চলে যান। এমনকি সম্প্রতি উপাচার্য ভারত ভ্রমণে গিয়েছিলেন। সেখানেও সিন্ডিকেটের কয়েকজন সদস্য গিয়েছিলেন। গাজীপুরে মূল ক্যাম্পাসে উপাচার্যের দপ্তর এবং ঢাকা অফিসের বাসভবনে সার্বক্ষণিক সিন্ডিকেটের সদস্যরা থাকেন। সম্প্রতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস ও নগর অফিসে ঘুরে এ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।

আমিনুল আক্তার প্রথমে ৮ আগস্টে বদলির বিষয়টি তার জানা নেই বলে এড়িয়ে যেতে চান। নথিপত্র আছে জানালে বলেন, ৮ আগস্ট তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের অনেকেরও বদলি হয়েছে এবং এই বদলি যথা নিয়মেই হয়েছে। সহকারী থেকে সরাসরি উপাচার্যের সচিব হননি বলে দাবি তার। উপাচার্যের দপ্তরে কে কোন কলেজের বিষয়ে আসে, সেটিও জানেন না বলে দাবি করেছেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র বলছে, শক্তিশালী এই সিন্ডিকেট সক্রিয় থাকলেও উপাচার্য কিছুই করছেন না। সিন্ডিকেট ভাঙার বিষয়ে বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও সেই সিন্ডিকেটেই আবদ্ধ হয়ে থাকায় তিনি কার্যত অসহায় হয়ে পড়েছেন। এমন পরিস্থিতিতেও সিন্ডিকেট ভাঙার বিষয়ে বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এস এম আমানুল্লাহ। তিনি বলেন, আমরা আশপাশে দুয়েকটা (কয়েকজন) চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। তাদের সরিয়ে দেওয়া হবে। তবে সময় দিতে হবে। সামান্যতম প্রমাণ পেলে একটি লোকও রাখব না। তবে আমিনুলের বিরুদ্ধে একটি গ্রুপ লেগেছে। অনেকের অনুরোধ না রাখায় এমনটি হয়েছে, বলেন তিনি।

#জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় #শিক্ষার্থী #ভিসি