দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। কিন্তু বিদেশে দক্ষ কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো অনেক পিছিয়ে। দেশে বিদেশগামীদের দক্ষ করতে টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (টিটিসি) থাকলেও কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি নেই। বরং টিটিসির অধ্যক্ষ, চিফ ইন্সট্রাক্টরের বিরুদ্ধে বিদেশগামী কর্মীদের কাছে সার্টিফিকেট বাণিজ্য ও অর্থ আত্মসাৎ করার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এমন অভিযোগে দিনাজপুর খানসামা টিটিসির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিমাই কুমার দত্তকে সাময়িক বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
শুধু নিমাই কুমার দত্তের বিরুদ্ধেই নয়, নানা কৌশলে সরকারি টাকা আত্মসাৎ এবং বিদেশগামী কর্মীদের কাছে তিন দিনের প্রাক-ট্রেনিং করার নামে সার্টিফিকেট বাণিজ্য করা, অনিয়ম দুর্নীতসহ নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে দিনাজপুর টিটিসির সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাসুদ রানা, ইন্সট্রাকটর শেখ রাকিবুল হাসানসহ একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে বিভাগীয় মামলার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশন থেকেও তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত চলমান রয়েছে।
জানতে চাইলে দিনাজপুর খানাসামা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিমাই কুমার দত্ত বলেন, আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাই আমি এখন অফিস করছি না। তবে যেসব অভিযোগের কারণে আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছিল, আমি সেটির জবাব কর্তৃপক্ষের কাছে দিয়েছি। এক প্রশ্নের উত্তরে নিমাই কুমার দত্ত বলেন, আমার বিরুদ্ধে দিনাজপুর টিটিসিতে কর্মরত থাকার সময় অভিযোগ দেয়া হয়েছিল। এ নিয়ে বিভাগীয় মামলা দায়ের হওয়ার পর প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে আমি যথাযথ জবাব দিয়েছি। তবে এখন পর্যন্ত মন্ত্রণালয় আমার ব্যাপারে চূড়ান্ত রেজাল্ট দেননি।
এ দিকে গত ৩০ জুন দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের কাছে নিমাই কুমার দত্তের অনিয়ম দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরে তার অপসারণ ও শাস্তি দাবির পাশাপাশি সেই প্রতিষ্ঠানে একজন কর্মঠ, সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ার জন্য দিনাজপুরের এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, নিমাই কুমার দত্তের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় মন্ত্রণালয় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন। একইভাবে খানসামা টিটিসিতে আসার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাচ্ছে। এরপরও তিনি বেআইনিভাবে প্রশাসনিক সব কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। যেমন এনএইচআরডিএফ-এর অতিথি প্রশিক্ষক পরীক্ষা গত ২৪ জুন তারিখে সম্পন্ন করেন এবং নিয়মিত কোর্সের এসেসমেন্টের নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেন। যথাসময়ে প্রশিক্ষণে কাঁচামাল সরবরাহ করেন না। এসেট প্রকল্পে নিয়ম বহির্ভূতভাবে অতিথি প্রশিক্ষক নিয়োগ এবং খানসামা টিটিসিতে প্রাক-বহির্গমন ওরিয়েন্টেশন (পিডিও) কোর্সের সার্টিফিকেট বাণিজ্য করেছেন মর্মে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলমান আছে। একইভাবে দিনাজপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রাক্তন অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত মাসুদ রানা, তার প্রধান সহযোগী নিমাই কুমার দত্ত, চিফ ইন্সট্রাক্টর (কম্পিউটার) শেখ রাকিবুল হাসান, চিফ ইন্সট্রাক্টর (ইলেকট্রিক্যাল) সহ অন্য সহযোগীদের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে উচ্চতর তদন্তপূর্বক লোপাটকৃত সরকারি অর্থ এক কোটি এক লাখ ২৭ হাজার ৭০০ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। খানসামা টিটিসির একাডেমিক ভবনের অটোমেটিক ও মেশিন টুলস ট্রেডের আর্কিটেকচার ডিজাইনের পরিবর্তন করে সরকারের অতিরিক্ত অর্থ অপচয় করছেন।
এর আগে গত ৯ এপ্রিল প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সালাউদ্দিন আহাম্মদ স্বাক্ষরিত বিভাগীয় মামলা তদন্তকালে তদন্ত বোর্ডের নিকট উপস্থিত হয়ে তথ্য প্রদান বিষয়ের এক চিঠিতে বলা হয়েছিলো, খানসামা টিটিসির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিমাই কুমার দত্তের বিরুদ্ধে রুজুকৃত বিভাগীয় মামলার ১ম ও ২য় তদন্ত শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রেকর্ড পর্যালোচনায় দেখা যায়, ওই টিটিসিতে প্রাক বহির্গমন ওরিয়েন্টেশন (পিডিও) কোর্সে প্রশিক্ষণার্থী ভর্তিসংক্রান্ত বিষয়ে আপনি প্রাথমিক তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট লিখিত বক্তব্য তথ্য প্রদান করেছেন। এ তথ্য প্রদানসংক্রান্ত বিষয়ে অধিকতর তদন্ত শুনানির জন্য আপনাকে ১৬ এপ্রিল মন্ত্রণালয়ে তদন্ত বোর্ডের আহবায়ক উপসচিব পরিকল্পনার অফিসে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা হলো। এরপরই গত মাসে কর্তৃপক্ষ তাকে বরখাস্ত করে। অভিযোগ রয়েছে, এসব কর্মকর্তাদের নেপথ্যে থেকে জনশক্তি ব্যুরোর একাধিক কর্মকর্তা মদদ দেয়ায় তারা আরো বেপোরোয়া আচরণ করছেন।