মাত্র ৯৭ ডলার সেমিস্টার ফিতে জার্মানিতে ডাক্তারি পড়লেন মার্কিন ছাত্রী | মেডিক্যাল নিউজ

মাত্র ৯৭ ডলার সেমিস্টার ফিতে জার্মানিতে ডাক্তারি পড়লেন মার্কিন ছাত্রী

মেডিক্যালে পড়াশোনায় লাখ লাখ টাকা খরচ হয়। তবে জার্মানিতে এমন এক সুযোগ রয়েছে, যেখানে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল পড়াশোনার সেমিস্টার ফি মাত্র ৯৭ ডলার বা বাংলাদেশি টাকায় ১১ হাজার ৮০০ টাকার মতো (১ ডলারের মান ধরা হয়েছে ১২২ দশমিক ২ টাকা)। এই সুযোগ কাজে লাগাতে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে জার্মানিতে পাড়ি জমিয়েছিলেন ২৭ বছর বয়সী মার্কিন নাগরিক এরিকা রবার্টস। এখন সেখানে কাটছে তাঁর জীবনের প্রায় আট বছর। পড়ালেখার খরচের পাশাপাশি তাঁর জীবনযাপনের ব্যয়ও অন্যান্য উন্নত দেশের চেয়ে কম।

#শিক্ষার্থী #বিদেশি শিক্ষার্থী #মেডিক্যাল

বিশ্বের অনেক দেশে উচ্চশিক্ষার খরচ বাড়ছে। বিশেষ করে মেডিক্যালে পড়াশোনায় লাখ লাখ টাকা খরচ হয়। তবে জার্মানিতে এমন এক সুযোগ রয়েছে, যেখানে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল পড়াশোনার সেমিস্টার ফি মাত্র ৯৭ ডলার বা বাংলাদেশি টাকায় ১১ হাজার ৮০০ টাকার মতো (১ ডলারের মান ধরা হয়েছে ১২২ দশমিক ২ টাকা)। এই সুযোগ কাজে লাগাতে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে জার্মানিতে পাড়ি জমিয়েছিলেন ২৭ বছর বয়সী মার্কিন নাগরিক এরিকা রবার্টস। এখন সেখানে কাটছে তাঁর জীবনের প্রায় আট বছর। পড়ালেখার খরচের পাশাপাশি তাঁর জীবনযাপনের ব্যয়ও অন্যান্য উন্নত দেশের চেয়ে কম।

এরিকা বলনে, ‘আমি এখানে থাকতে পেরে সত্যিই খুশি।’

যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার উপকণ্ঠে বড় হওয়া এরিকা কৈশোরে একটি দুই সপ্তাহের এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন মিউনিখে। সেখানকার অভিজ্ঞতা তার মনে গেঁথে যায়। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে ম্যাসাচুসেটসের এক কলেজে বায়োকেমিস্ট্রি নিয়ে পড়ার সময় যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয়বহুল ও চাপযুক্ত শিক্ষাব্যবস্থায় একসময় হাঁপিয়ে ওঠেন তিনি।

ভালো রেজাল্ট (জিপিএ ৩.৯) থাকা সত্ত্বেও পড়াশোনায় মন বসছিল না। মনে হচ্ছিল, ভবিষ্যৎ তাকে খুব একটা টানছে না। তিনি বলেন, ‘সব জায়গা বলেছিল বৈচিত্র্য, কমিউনিটি, আত্মোন্নয়ন থাকবে—তবে বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। আমি নতুন চ্যালেঞ্জ চাইছিলাম, নিজেকে খুঁজে পেতে।’ তাই তিনি বিকল্প কিছু খুঁজতে থাকেন।

জার্মানির শিক্ষাব্যবস্থা তখন তাঁর সামনে নতুন পথ খুলে দেয়। দেশটিতে মেডিক্যাল স্কুলে ভর্তি হতে ব্যাচেলর ডিগ্রি লাগে না। বরং ছয় বছর মেয়াদি একটি ধাপে ধাপে পরীক্ষাভিত্তিক প্রোগ্রামে ভর্তি হয় শিক্ষার্থীরা।

যুক্তরাষ্ট্রে যেখানে মেডিক্যাল স্কুলে পড়াশোনার জন্য লাখ লাখ ডলার খরচ হয়, জার্মানির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রায় ফ্রি বা অত্যন্ত কম খরচে এই সুযোগ দেয়। এরিকার ক্ষেত্রে টিউশন ফি সেমিস্টারে মাত্র ৮৫ ইউরো—মার্কিন ডলারে ৯৭ ডলার।

তবে শুরুটা সহজ ছিল না। বাবা প্রথমে রাজি হননি মেয়েকে বিদেশে পড়তে পাঠাতে। তবে এরিকার একাডেমিক ফলাফল দেখে অবশেষে মত বদলান।

২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে এরিকা একটি ভাষা স্কুলে ভর্তি হন এবং সেখানকার ডরমিটরিতে ওঠেন। এরপর এক বান্ধবীর পরিবারের সঙ্গে, পরে শেয়ার অ্যাপার্টমেন্টে দুই রুমমেটের সঙ্গে এক বছর।

সবশেষে পাঁচ বছর কাটিয়েছেন রুমমেটদের সঙ্গে একটি অ্যাপার্টমেন্টে। শুরুতে ভাড়া ছিল ৫৬৫ ইউরো (৬৪৮ ডলার), পরে বেড়ে দাঁড়ায় ৬৫৯ ইউরো (৭৫১ ডলার)। এখন একা থাকেন, তবে বর্তমান ভাড়া প্রকাশ করতে চাননি।

জার্মানিতে এরিকার জীবনযাপনে ব্যয়ও কম। বাসাভাড়া ছাড়া মাসিক খরচ ৭৪৯ ইউরো (৮৫৯ ডলার), যার মধ্যে রয়েছে—

বাজার খরচ: ২৩০ ইউরো (২৬২ ডলার)

স্বাস্থ্যবিমা: ১৪৪ ইউরো (১৬৪ ডলার)

জিম: ২৪ ইউরো (২৭ ডলার)

মোবাইল বিল: ২৮ ইউরো (৩২ ডলার)

যাতায়াত: ৩৮ ইউরো (৪৩ ডলার)

মেডিক্যাল স্কুলের ফি: ৮৫ ইউরো (৯৭ ডলার)

খাওয়া-দাওয়া বা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা: ২০০ ইউরো (২২৮ ডলার)

এরিকা বলেন, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ট্যাক্সপেয়ারদের অর্থে চলে, তাই কাজ শুরু করার পর আমি আমার অংশের অবদান ফিরিয়ে দিতে পারব।’

জার্মানিতে এসে এরিকার জীবনে এসেছে বড় পরিবর্তন। তাঁদের জীবনযাপন আরও গোছানো, খাবার স্বাস্থ্যকর, আর আগের মতো অযথা চিন্তা করেন না।

তিনি বলেন, ‘ফিলাডেলফিয়ার আমি ছিলাম খুবই ইন্ডিভিজুয়ালিস্টিক। এখানে এসে অন্যরকম চিন্তা শিখেছি। কেমন করে সমাজে চলতে হয়, সেটা বুঝতে শিখেছি। আমাকে কী হতে হবে, সেটা বাইরের কেউ বলে দেয় না—আমি নিজেই খুঁজে নিচ্ছি।’

জার্মানিতে কাটানো এই আট বছর তাঁকে অনেকটাই গড়ে তুলেছে, শিখিয়েছে টিকে থাকতে হলে নতুন পরিবেশে কীভাবে মানিয়ে নিতে হয়।

পরিবার এখনো যুক্তরাষ্ট্রে থাকলেও আপাতত দেশে ফেরার কোনো পরিকল্পনা নেই এরিকার। তবে ভবিষ্যৎ নিয়ে নিশ্চিত কিছু বলতে চান না।

এরিকা বলেন, ‘১০ বছর আগেও ভাবিনি আমি এত দিন জার্মানিতে থাকব। আর ১০ বছর পর কী হবে, তাও জানি না। কিন্তু এখন আমি এখানে অনেক সুখে আছি, আর এখানেই থাকার কথা ভাবছি।’

তথ্যসূত্র: সিএনবিসি

#শিক্ষার্থী #বিদেশি শিক্ষার্থী #মেডিক্যাল