এবার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয়া-নাইটগার্ড নিয়োগও ডিসিদের হাতে | স্কুল নিউজ

এবার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয়া-নাইটগার্ড নিয়োগও ডিসিদের হাতে

এবার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয়া-নাইটগার্ড নিয়োগও ডিসিদের হাতে

#নিয়োগ #ডিসি #আয়া #নাইটগার্ড #শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

শিক্ষাবিদ ও অংশীজনদের দাবি উপেক্ষা করেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় আরো একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নতুন সিদ্ধান্তে খায়েশ পূরণ হয়েছে একটি বিশেষ ক্যাডারের আমলাদের।

অন্যদিকে এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষকরা। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন থেকে জেলা প্রশাসকরাই নিয়ন্ত্রণ করবেন এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অশিক্ষক কর্মচারী (অফিস সহকারী, হিসাব সহকারী, নৈশ প্রহরী, আয়া ইত্যাদি) নিয়োগ।

বৃহস্পতিবার (২২ মে) শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ডিসিদের হাতে নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়ার পক্ষে জোরালো ভূমিকা রেখেছেনে এনটিআরসিএতে কর্মরত একজন অতিরিক্ত সচিব।

বিকেল নাগাদ এ খবর ছড়িয়ে পড়লে নেতিবাচক মন্তব্য শুরু করেন সাধারণ শিক্ষকরা। তারা চেয়েছিলেন এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক নিয়োগের মতোই কর্মচারী নিয়োগের প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষমতাও এনটিআরসিএকে দেওয়া হোক। অথবা শিক্ষা অধিদপ্তরগুলোকে।

বহু বছর যাবত এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী নিয়োগেও জনপ্রতি ৪ থেকে দশ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়ে আসছে।

এই ঘুষের টাকার বাটোয়ারা এতদিন বেসরকারি পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা কমিটির হাতে ছিলো। যেগুলোর নিয়ন্ত্রণ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের হাতে।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডিসির নেতৃত্বাধীন কমিটি এই কর্মচারী নিয়োগ নিয়ন্ত্রণ করবেন। কমিটিতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা এবং পুরনো সরকারি কলেজের অধ্যক্ষও থাকবেন।

শিক্ষক নেতারা বলেন, বহুদিন ধরে জোরালো দাবি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়োগও এনটিআরসিএর হাতে দেওয়ার। ৫ আগস্টের পর এই দাবি জোরালো হয়ে উঠতে উঠতে এখন তুঙ্গে।

এ বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে গত কয়েকমাস ধরে। কিন্তু এনটিআরসিএর একজন অতিরিক্ত সচিব এর বিরোধীতা করে আসছিলেন।

এছাড়া গত ২৮ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক মো. সাইফুল ইসলাম শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়েরকে এক প্রস্তাব পাঠান।

প্রস্তাবে বলা হয়, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রধান ও সহকারি প্রধান, সুপারিনটেনডেন্ট, সহকারি সুপার এবং অশিক্ষক কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে এনটিআরসিএ থেকে প্রার্থী নির্বাচন ও সুপারিশ সংক্রান্ত প্রস্তাব বিবেচনার জন্য পাঠানো হলো।’

এতে এনটিআরসিএ আইন সংশোধন ও একটি নতুন ধারা ও উপধারা সংযোজন এবং প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সহকারি প্রধান এবং অশিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণ বিধিমালা প্রণয়নের কথাও বলা হয়েছে।

সংসদ কার্যকর না থাকায় অর্ডিন্যান্স জারির কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু সেপথে হাঁটেনি প্রশাসন ক্যাডার নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

হতাশা প্রকাশ করে বরগুনার পাথরঘাটার শিক্ষক মিজানুর রহমান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগও ডিসির কন্ট্রোলে।

প্রশ্নফাঁস, ঘুষ লেনদেন ও তদবিরসহ এমন কিছু নেই যে হয় না। ডিসির হাতে দেওয়া এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী নিয়োগেও এমন ঘটনা ঘটবে না তার কোনো গ্যারান্টি আছে?

তিনি বলেন, ডিসিদের ওপর আস্থা আছে অনেকেরই কিন্তু রাজনৈতিক নেতার প্রভাব সামলানোর দক্ষতা কি সব ডিসির থাকবে? নিয়োগে রাজনৈতিক প্র্রভাব বিস্তারের সম্ভাবনা ৯৯ শতাংশ মনে করেন এমপিওভুক্ত এই শিক্ষক।

বর্তমানে এনটিআরসিএ শুধু এন্ট্রি লেভেলে (সহকারি শিক্ষক, প্রভাষক ইত্যাদি) নিয়োগের জন্য প্রার্থী বাছাই ও সুপারিশ করে। ফলে নিয়োগ বাণিজ্য প্রায় বন্ধ হয়েছে।

প্রশাসনিক ও অশিক্ষক পদের প্রার্থী বাছাই ও সুপারিশের দায়িত্ব এনটিআরসিএর হাতে না থাকায় কোটি কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য, মামলা ও হামলার ঘটনা ঘটছে।

এসব পদ এনটিআরসিএর হাতে গেলে দুর্নীতি, হানাহানি ও মামলার উৎপত্তি বন্ধ হবে। অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটিতে আসতে চাওয়া ব্যক্তিরা নিরুৎসাহিত হবেন।

২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবরে প্রকাশিত গেজেট অনুযায়ী এন্ট্রি লেভেলে (প্রভাষক, সহকারী শিক্ষক) শিক্ষক নিয়োগের প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্ব এনটিআরসিএর।

আর অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান ও কর্মচারীদের নিয়োগ এখনও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনা কমিটির/পর্ষদের হাতে। এসব নিয়োগে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ বিস্তর।

বর্তমানে সারাদেশে ৩২ হাজারের বেশি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাড়ে পাঁচ লাখের বেশি শিক্ষক-কর্মচারীকে সরকারি কোষাগার থেকে বেতন-ভাতা দেওয়া হয়।

যার আমলাতান্ত্রিক নাম এমপিও। এছাড়াও কয়েকলাখ শিক্ষক আছেন ননএমপিও প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। আবার এমপিওভু্ক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতেও খণ্ডকালীন নামে হাজার হাজার ননএমপিও শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন।

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিয়োগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

#নিয়োগ #ডিসি #আয়া #নাইটগার্ড #শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান