অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান দ্রুত নামতে শুরু করার পেছনের কারিগর ৭৩ এর অধ্যাদেশ বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন।
শুক্রবার (১৬ মে) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে অধ্যাপক মামুন এ কথা বলেন।
তার পোস্টটি দৈনিক শিক্ষাডটকমের পাঠকদের জন্য হুবুহু তুলে ধরা হলো-
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান দ্রুত নামতে শুরু করার পেছনের কারিগর হলো ৭৩ এর অধ্যাদেশ। ৭৩ এর অধ্যাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো এই অধ্যাদেশই বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় রাজনীতি ইঞ্জেক্ট করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। প্রশাসনিক পদ ভিসি এমনকি একাডেমিক পদ ডিনও নির্বাচনের মাধ্যমে পূরণের ব্যবস্থা হয় এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে। পৃথিবীর কোন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন পদ্ধতি আছে? ভিসি, ডিন ইত্যাদি পদ কোন জনপ্রতিনিধি না যে ভোটারকে খুশি করতে হবে। ভোটার খুশি করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব জার্নাল প্রকাশ করা শুরু করলো যাতে তার ভোটারদের প্রমোশন পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় গবেষণা প্রবন্ধ সেখানেই প্রকাশ করে পদোন্নতি পেতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৮টির বেশি জার্নাল প্রকাশিত হয়। এর ৯৫% আর্টিকেল পৃথিবীর কেউ কোনদিন পড়ে দেখবে না কেউ সাইট করবে না। অর্থ ও মেধার কি সাংঘাতিক অপচয়। নির্বাচনের কারণে দিন যত যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ততই নামছে।
এই অধ্যাদেশকে অনেকে বাংলাদেশের সংবিধানের মত মান্য করে। অনেক জায়গায় এর সমালোচনা করতে গিয়ে আমার সহকর্মীদের বিরভাজন হয়েছি। অথচ অধ্যাদেশ কিংবা সংবিধান শুধু না পৃথিবীর সব কিছুই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে পরিবর্তন হওয়া উচিত। পরিবর্তন না করলে সেটা দুর্গন্ধ ছড়াবেই। পৃথিবীর দেশে দেশে গণতন্ত্র এখন আর কাজ করছে না। আগে মেধাবী ও সৎ মানুষেরা নির্বাচনের মাধ্যমে জিততে পারতো। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর ছাত্র সংসদ নির্বাচন আসলে সকল দল ভালো ছাত্রদের খুঁজে খুঁজে এনে মনোনয়ন দিত কারণ সাধারণ ছাত্ররা ভালো ছাত্রদেরকেই কেবল ভোট দিত। সময়ের সাথে সাথে খারাপ মানুষেরা নির্বাচনে নির্বাচিত হওয়ার ফর্মুলা বুঝে গেছে। খারাপ মানুষেরা এখন একত্রিত হয়ে ভালোদের বিতাড়িত করার সহজ পথ হিসাবে গণতন্ত্রকেই বেঁচে নিয়েছে। ফলে সর্বত্র এখন খারাপরাই নেতৃত্বে চলে যাচ্ছে। এইটা হউক ভিসি নির্বাচন, হউক ডিন নির্বাচন, হউক এমপি নির্বাচন আর হউক ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচন। খারাপ মানুষেরা একত্রিত হওয়ার মূল মন্ত্র হলো খারাপ মানুষেরা ক্ষমতা পেলে তারা খারাপদের অনৈতিক ফেভার দেয় ভালোরা দেয় না।
বিশ্ববিদ্যালয়ে কি করে শিক্ষকরা দলীয় রাজনীতির প্রত্যক্ষ কর্মী হয়? বিশেষ করে পাবলিকের টাকায় যাদের বেতন হয় তারা কি এইভাবে লেখাপড়া ও গবেষণা বাদ দিয়ে প্রত্যক্ষ্য রাজনীতিতে বেশি মনোযোগ দিতে পারে? আমাদের দেখা উচিত সফল হয়েছে এমন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কি নিয়ম ফলো ভিসি নিয়োগ দেয়। আমাদেরকেও সেই প্রমাণিত নিয়মেই ভিসি নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। একইসাথে ভিসির একছত্র ক্ষমতাকেও কমাতে হবে। এত ক্ষমতা এক জায়গায় থাকলে সেখানে তাকে ঘিরে তোষামোদকারীদের ভিড় জমবেই।
৭৩ এর অধ্যাদেশের মাধ্যমে শিক্ষকদের স্বাধীনতা দিতে গিয়ে এত বেশি স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে যা দিলে শিক্ষার মান ধরে রাখা সম্ভব না। পৃথিবীর কোন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ ও প্রোমোশনের সকল বিভাগের নিয়োগ বোর্ডে ভিসি বা প্রোভিসি থাকে। একটা উদাহরণ দেন। উদাহরণ যদি না থাকে আমরা কেন এই নিয়ম আবিষ্কার করলাম? শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে ভিসি নিয়োগ পর্যন্ত সব নিয়োগে প্রার্থীর কাছ থেকে সেই পদে নিয়োগ পেলে সে কি করবে, কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণাকে এগিয়ে নিবে তার টার্গেট ফিক্সড করতে বলা হয়। নির্দিষ্ট একটা সময় পরে পরীক্ষা করে দেখা হয় সেই টার্গেট কতটা পূরণ হয়েছে। ব্যর্থ হলে তাকে জবাদিহির আওতায় আনা হয় এবং এক পর্যায়ে তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতিও দেওয়া হয়।
আমাদের ভিসিদের কি নিয়োগের দুই বছর পর তার কর্মকান্ড পরখ করে দেখার ব্যবস্থা আছে? সে যত খারাপই করুক তার কোন জবাবদিহিতা নাই। ৭৩ এর অধ্যাদেশে এই ব্যবস্থা নাই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে তাদের প্রমোশন নীতিমালা, ডিন ও ভিসি প্রোভিসি নিয়োগ ইত্যাদির আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। শুরুটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিয়েই শুরু করতে হবে কারণ সারা দেশের অন্যান্য সব বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেই অনুসরণ করে।
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিয়োগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।