বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল। ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি যেকোনো সময়েই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। বিএনপি নির্বাচনের দল, অলওয়েজ রেডি ফর ইলেকশন। নির্বাচন করেই বিএনপি ক্ষমতায় যেতে চায়।
তিনি বলেন, ‘আমরা তো বলেছি, আপনি যদি ইলেকশন কালকে করতে পারেন, আমরা কালকেই রেডি।’
আজ মঙ্গলবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় মির্জা ফখরুল দলের এই প্রস্তুতির কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিষ্কার কথা, আমরা কোনো বিপ্লবী দল নই, নির্বাচন করেই জনগণের ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে চাই। যখন সবাই চাইবে একমত হবে তখন নির্বাচন হবে অসুবিধা নেই।’
থাইল্যান্ডে চোখের সফল অস্ত্রোপচার শেষে ঈদের আগের রাতে দেশে ফেরেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরেরদিন ঈদ নামাজ শেষে তিনি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন।
সাংবাদিকদের সঙ্গে ঈদের পরে শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য গুলশানে চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে আসেন বিএনপি মহাসচিব। রাজনীতি, নির্বাচন, লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সাথে তারেক রহমানের বৈঠক, নির্বাচনের শরিকদের সাথে আসন সমঝোতা, অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ড, সংস্কার কমিশনসহ নানা বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের খোলামেলা জবাব দেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘সজ্জন ব্যক্তি’ হিসেবে পরিচিত মির্জা ফখরুল।
ডিসেম্বরেই নির্বাচন সম্ভব উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের দল বলেছে যে, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব এবং এটা খুবই সম্ভব। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহেব বলেছেন এই কথা। আমি বিশ্বাস করি, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হওয়া সম্ভব।’
জামায়াতে ইসলামী বলেছে এপ্রিলে নির্বাচন হতে পারে, তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নিয়ে বিএনপির বক্তব্য কি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একটা কথা আমাদের মনে রাখতে হবে ডেমোক্রেসির মূল কথা হচ্ছে, আপনি আমার সাথে ভিন্নমত পোষণ করবেন, আমি আপনার সাথে ভিন্নমত পোষণ করব। কিন্তু তাই বলে আমি মনে করব না যে, আপনি আমার শত্রু, আমি মনে করব না যে, আপনি দেশদ্রোহী হয়ে গেছেন, আপনি গণতন্ত্র বিরোধী হয়ে গেছেন। আমি মনে করব, এটাই গণতন্ত্রের বিউটি।’
এপ্রিলে নির্বাচন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সময়টা (এপ্রিল) তো ঠিক না। আমি প্রথম দিন বলেছি, টাইম ইজ নট গুড ফর ইলেকশন। এপ্রিল মাস রোজার মাস, রোজা শেষে হবে ঈদ। এর কয়েকদিন পরে নির্বাচন। আপনি ভাবেন রোজার মাসটায় প্রার্থীদের কী অবস্থা হবে-রাজনৈতিক কর্মীদের কী অবস্থা হবে? আমি নিজেই এখন চিন্তিত যে, প্রত্যেকদিন আমাকে ইফতার পার্টি করতে হবে। প্রার্থীদের ব্যয় দ্বিগুণ হয়ে যাবে এবং এই ক্ষেত্রে আমরা চিৎকার করি অর্থ ব্যয় কমাতে হবে, ওই সময় হলে তো ব্যয় বাড়বে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে বেশিরভাগ সময়ে ডিসেম্বর-নভেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হয়েছে। দুইবার বোধহয় হয়েছে ভিন্ন সময়ে দুই ইলেকশনেই ঝামেলা ছিল।’
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে তারেক রহমানের বৈঠক প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে ,অনেক সুযোগ তৈরি হতে পারে। নতুন একটা দিগন্তের উন্মোচন হতে পারে।’
সরকারের আন্তরিকতার অভাব নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'একটা বিশেষ মুহূর্তে এসে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নিয়েছেন, তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক দিক থেকে তাদের অভিজ্ঞতা যথেষ্ট নয়।’
মহাসচিব বলেন, ‘গত ১৫ বছরের একটা ফ্যাসিস্ট শাসক আওয়ামী লীগ সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। সেই ইনস্টিটিউশনগুলোকে নতুন করে বিল্ড আপ করা একটা ছেলে খেলা নয়। আমি এই কথাটা বার বার বলার চেষ্টা করি, এটা একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ জাতির জন্য।’
তিনি বলেন, এই সময়টা গণতন্ত্র উত্তরণের যে কালটা, এটাতে সকলের আমাদের দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। প্রত্যেকটা কথা আমাদের সাবধানে বলা উচিত। একটা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার যে যাত্রা এটা যেন বিঘ্নিত না হয়, ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এই ক্ষেত্রে জাতীয় ঐক্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
মির্জা ফখরুল বলেন, বাস্তবতা হচ্ছে, বিএনপি ইজ এ রিয়েলিটি। বিএনপি এমন একটা দল একে যত কিছুই বলুক তাকে সহজেই শেষ করা যায় না, কখনই যায়নি।
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে ‘জাতিকে বিভক্ত’ না করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটা বিষয় জাতি ইউনাইটেড যে, আমরা গণতন্ত্র চাই, আমার ভোটটা আমি দিতে চাই, ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচন করতে চাই। সংস্কার চাই।’
শরিকদেরকে বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা আগে থেকে কমিটেড যে, নির্বাচনের পর একটা জাতীয় সরকার করবো।
আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির বিষয়ে দলের অবস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আপনারা যে পার্টিগুলোর কথা বলছেন সেগুলোর সাথে সবচেয়ে বড় বিরোধ বিএনপির। আওয়ামী লীগের সবচেয়ে অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়ন, ফ্যাসিবাদের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী বিএনপি। একই ভাবে জাতীয় পার্টির কাছেও আমরা ৯ বছর (এরশাদের শাসনামলে) নির্যাতিত-নিপীড়িত হয়েছি। আমরা যেটা বিশ্বাস করি, গণতন্ত্রকে গণতন্ত্রের মতো চলতে দেয়া উচিত।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তারেক সাহেব নিশ্চয় দেশে ফিরবেন, অবশ্যই দেশে ফিরবেন।’ কবে ফিরবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শিগগিরই ফিরবেন।’
সূত্র : বাসস