ঘুষের রেট বেড়েছে ঢাকা শিক্ষা অফিসে | বিবিধ নিউজ

ঘুষের রেট বেড়েছে ঢাকা শিক্ষা অফিসে

তিনি বলেন, ‘ঘুষের রেট বেড়েই চলছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ঢাকা আঞ্চলিক কার্যালয়ে। জালিয়াতি ও গোঁজামিল করে এমপিওভুক্তিতেই সবচাইতে বেশি ঘুষ লেনদেন হয়। এর পরে রয়েছে অবৈধ বিএড কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএড সনদধারীদের স্কেল দেওয়া ও উচ্চতর স্কেলের অনুমোদনের বিষয়।’

#এমপিও #শিক্ষাডটকম #শিক্ষা ভবন

রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার মেহেরুন্নেসা গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের জীববিজ্ঞানের শিক্ষক ফয়সাল এমপিওভুক্ত হতে পারছেন না। তার সমস্যা ছিলো প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞান শাখার অনুমোদন না থাকা। এমপিওভুক্তির জন্য নিজ প্রতিষ্ঠান, থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে ম্যানেজ করেছিলেন। তবে, এমপিওর আবেদনটা ঢাকা আঞ্চলিক উপপরিচালকের দরবারে আটকে দেওয়ার পরপরই তার মোবাইলে ফোন আসে। বেনামী নম্বর দিয়ে এমপিওপ্রত্যাশী ফয়সালকে ফোন দেন হিসাবরক্ষক নাসির। এই সেই নাসির যিনি বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ডিবির হাতে ঘুষের টাকাসহ গ্রেফতার হয়েছিলেন। নাসির তখনকার শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের খাস লোক হিসেবে সংযুক্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চমান সহকারি পদে ছিলেন। নাসিরের ফোন পেয়েও যোগাযোগ না করায় মেহেরুন্নেসা গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের এমপিওপ্রত্যাশী শিক্ষক ফয়সালকে ফোন দেন ডিডি অফিসের আরেক কর্মচারী সালমা। আর সার্বিক সহযোগীতায় ছিলেন আনোয়ার ও রাবেয়া। এভাবে সিন্ডিকেট করেই চলছে মাধ্যমিক শিক্ষার ঢাকার আঞ্চলিক অফিস। মিরপুরের সরকারি বাঙলা কলেজ সংলগ্ন এলাকায় যার অবস্থান। একই ভবনে ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিস ও পরিচালকের অফিস।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার একজন প্রধান শিক্ষক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, নতুন ডিডি মোস্তাফিজ স্যার মানুষ ভালো, কিন্তু সরকারি স্কুল শিক্ষক হওয়ায় এমপিওর সমস্যার মারপ্যাচ বুঝতে পারেন না। আর এই সুযোগে নাসির, সালমা, আনোয়ার গং ঘুষ বাণিজ্যের রেট বাড়িয়ে দিয়েছেন।

মিরপুরের আরেক প্রধান শিক্ষক বলেন, এনটিআরসিএর মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষককেও ঘুষ দিয়ে এমপিওভুক্ত হতে হয়। নতুন ডিডি সাহেব নিয়মকানুন কম জানায় আবেদন আটকে রাখেন। আর সেই বিষয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন নাসির ও সালমা গং।

তিনি বলেন, ‘ঘুষের রেট বেড়েই চলছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ঢাকা আঞ্চলিক কার্যালয়ে। জালিয়াতি ও গোঁজামিল করে এমপিওভুক্তিতেই সবচাইতে বেশি ঘুষ লেনদেন হয়। এর পরে রয়েছে অবৈধ বিএড কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএড সনদধারীদের স্কেল দেওয়া ও উচ্চতর স্কেলের অনুমোদনের বিষয়।’

‘একলাখের নিচে এখন ঢাকার ডিডি অফিসে কোনো কাজ হয়না। ছয়মাস আগেও যেটা ৫০/৬০ হাজারে হতো,’ যোগ করেন তিনি।

এমপিওর বিষয়াদি না বোঝার অভিযোগের বিষয়ে ডিডি মোস্তাফিজুর রহমানকে মোবাইলে কল করেও পাওয়া যায়নি। সরাসরি সাক্ষাৎ করতে গেলে তার কর্মচারীরা জানান, ‘স্যার এখন ব্যস্ত’ । তাই তার মতামত জানা যায়নি।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, তিন বছর আগে নানা অভিযোগের পর তদন্ত করে প্রমাণ মেলায় ঢাকার ডিডি অফিসের সালমাকে ঢাকার মধ্যেই একটা স্কুলে বদলি করা হয়েছিলো। কিন্তু ৫ আগস্টের পর মাউশি অধিদপ্তরের একজন উপপরিচালকের বদান্যতায় ডিডি অফিসে বদলি হয়ে এসে ফের ঘুষের রাজত্ব কায়েম করেছেন সালমা। গত আট বছর ওই ডিডি সাহেব রাজধানীর সরকারি বিজ্ঞান কলেজে আওয়ামীপন্থী হিসেবে দাপটের সঙ্গে কর্মরত ছিলেন। কুখ্যাত শাহেদুল খবির গংদের ল্যাপেন্সার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এক প্যানেলে নির্বাচন করেছেন শিক্ষা ক্যাডার সমিতিতে। গত বছরের ৫ আগস্টের পরপরই তিনি বদলি হয়ে মাউশি অধিদপ্তরে আসেন। এরপরই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। বসদেরও পাত্তা দেননা বলে সারাদেশে শিক্ষা ক্যাডারের মধ্যে খবর ছড়িয়ে পড়েছে। আরো অভিযোগ রয়েছে, শাহেদুল খবিরের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আসলে তা ফেলে দেন। শাহেদুলকে রক্ষায় মরিয়া তিনি।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, ঘুষের রেট বাড়ানোর কৃতিত্বের অন্যতম দাবিদার ঢাকা আঞ্চলিক অফিসের হিসাব রক্ষক সেই নাসির। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে ঘুষের টাকাসহ গ্রেফতার হয়েছিলেন নাসির। তখন তিনি প্রেষণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গ্রহণ ও বিতরণ শাখার উচ্চমান সহকারী পদে কর্মরত ছিলেন। সে সময় নাসির উদ্দিনের প্রেষণ বাতিল করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে (মাউশি) নির্দেশনা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

নাসির উদ্দিন কীভাবে এই পদে ফিরে এলেন তা জানতে চাইলে ঢাকার আঞ্চলিক অফিসের কেউ কোনো মন্তব্য করতে রাজি নন। তবে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও আওয়ামী লীগের নেতা মোহাম্মদ হানিফের আশ্রয়ে টিকে ছিলো নাসির।’

ডিবির হাতে গ্রেফতার নাসির কীভাবে ঢাকার আঞ্চলিক অফিসে? তার মামলাগুলোর কি খবর? এসব বিষয় জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখার একজন কর্মকর্তা জানান, যতদূর মনে পড়ে সাবেক মহাপরিচালক সৈয়দ গোলাম ফারুকের সময়ে নাসির ঢাকায় পুনর্বহাল হন।

অভিযোগ উঠেছে, বিএনপিপন্থী সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক নেতাদের সুপারিশে টিকে আছেন নাসির।

২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ২২ জানুয়ারি দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মচারী [নাসির ও মোতালেব] ও লেকহেড স্কুলের মালিককে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল। [inside-ad1]

সে সময় গ্রেফতারের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চমান সহকারী নাসির ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের পিও মোতালেবের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ তুলেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। মোতালেবও মন্ত্রণালয়ে বহাল তবিয়তে।

সে সময় যুগান্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চমান সহকারী মো. নাসির উদ্দিনকে এক লাখ ৩০ হাজার টাকাসহ গুলশান এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার সঙ্গে যোগাযোগের সূত্র ধরে মোতালেব হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, উচ্চমান সহকারী নাসির এবং সাবেক মন্ত্রী নাহিদের পিও মোতালেব হোসেন এমপিও, বদলি, পদোন্নতি ও নিয়োগবাণিজ্যসহ নানা সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাদের সঙ্গে ক্যাডার কর্মকর্তাসহ অনেক রাঘববোয়ালও জড়িত। এ সিন্ডিকেটের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে এসব অনিয়ম-দুর্নীতি করে আসছিলেন। এর মাধ্যমে তারা মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেন।

#এমপিও #শিক্ষাডটকম #শিক্ষা ভবন