২০২৫-২৬ অর্থ বছরে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য বাজেটে বরাদ্দ থাকছে ১২ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ১১ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা। সে হিসেবে এবার বাজেট বরাদ্দ বেড়েছে ৮৯৫ কোটি টাকা।
সোমবার অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এ বাজেট প্রস্তাব ঘোষণা করেন। সংসদ না থাকায় এবারের ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেট রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে প্রচার করা হয়।
জানা গেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মাদরাসাগুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে, তাই এ খাতে বাজেটও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রাক-প্রাথমিকসহ প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৯১ জন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মাদরাসা শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬২ লাখ ১৬ হাজার ১১১ জন।
অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মাদরাসাগুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে, তাই এ খাতে বাজেটও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪৭ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ প্রস্তাব করেছেন। যা ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ছিলো ৪৪ হাজার ১০৮ কোটি টাকা।
এ ছাড়াও ২০২৫- ২৬ অর্থ বছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষায় বাজেট বরাদ্দ ৩৫ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা। যা আগের চেয়ে ৩ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা কম। গত অর্থ বছরে এই বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছিলো ৩৮ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা।
এ ছাড়াও কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষায় বাজেট বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ১২ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা। গত অর্থ বছরে এই বাজেট ছিলো ১১ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা।
বাজেটে স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের জন্য সুখবর, প্রাথমিকে দুঃসংবাদ
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। তবে কমানো হয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা খাতে।
প্রস্তাবিত বাজেটে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায় ৩ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা এবং কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষায় ৮৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৫ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
গত অর্থবছরে (২০২৪-২৫) এ খাতে প্রস্তাবিত বরাদ্দ ছিল ৩৮ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে বরাদ্দ কমেছে ৩ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা।
দেশের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা খাতে বড় অঙ্কের বরাদ্দ কমানো হয়েছে। এতে প্রাথমিক শিক্ষায় আর্থিক টানাপোড়েন সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর বিষয়টি চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়াবে।
প্রাথমিকে স্কুল ফিডিংয়ে ২ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা বরাদ্দ
দেশের সাড়ে ৬৫ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফিডিং কর্মসূচির জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত দুই হাজার ১৬৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এতে খুব শিগগির প্রাথমিকের শতভাগ শিশু শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে গিয়ে খাবার পাবে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়েছে, যার মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের জন্য পড়াশোনার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি ও মানসম্পন্ন শিক্ষা দেওয়া। প্রাথমিক শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে চলতি অর্থবছরে সারাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ৫ হাজার ৯৪৬টি শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ, ১৭ হাজার ১৬৪টি ওয়াশব্লক নির্মাণ, ৪ হাজার ৪৫০টি টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৯ কোটি ১৯ লক্ষ ৫০ হাজার ৪৯২টি বই বিতরণ করা হয়েছে। প্রাথমিক স্তরে শতভাগ শিক্ষার্থীকে ইএফটির মাধ্যমে উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষার গুরুত্ব বিবেচনায় আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এ খাতে ৩৫ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।
কমবে বলপয়েন্ট কলমের দাম
দেশে বর্তমানে ম্যাটাডর, অলিম্পিক, ইকোনো, আরএফএল, মেঘনাসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানি বলপয়েন্ট কলম উৎপাদন করে। প্রতিষ্ঠানগুলো বলপয়েন্ট কলমের জন্য কালি আমদানি করে থাকে।
বলপয়েন্ট কলমের কালি আমদানির ক্ষেত্রে কাস্টমস শুল্ক দিতে হয় ১০ শতাংশ হারে। এছাড়া উৎসে কর ৫ শতাংশ এবং অগ্রিম কর দিতে হয় ৫ শতাংশ। সবমিলিয়ে ২০ শতাংশ শুল্ক ও কর রয়েছে বলপয়েন্ট কলেমের ওপর।
জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বলপয়েন্ট কলমের উৎপাদনপর্যায়ে ১৫ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছিল। সমালোচনার মুখে পরে তা কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়।
তবে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষাখাত সংশ্লিষ্টরা কলমের ওপর সব ধরনের ভ্যাট ও শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। অবশেষে অন্তর্বর্তী সরকার সেই দাবি মেনে নিয়ে বলপয়েন্ট কলমের ওপর সব ভ্যাট-শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। এতে শিক্ষার অন্যতম প্রধান উপকরণ বলপয়েন্ট কলমের দাম কমবে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে বলপয়েন্ট কলমের ওপর সব ধরনের ভ্যাট ও শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে দেশে উৎপাদিত সব ধরনের বলপয়েন্ট কলমের দাম কমতে পারে।
সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে চাই যে, ২০১৫ সালের পর এখন পর্যন্ত বেতন কাঠামো প্রণীত না হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবারের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি।
বয়স্ক ভাতাসহ কয়েকটি ভাতা বাড়ছে
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বেশ কয়েকটি ভাতার হার বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাজেট বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, দরিদ্র, প্রান্তিক ও ঝুঁকিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য হ্রাস, সামাজিক বৈষম্য হ্রাস এবং জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন নিশ্চিত করতে এবারের বাজেটে সুবিধাভোগীর সংখ্যা এবং মাথাপিছু বরাদ্দ উভয়ই বৃদ্ধি করার দিকে নজর দিয়েছি। এ প্রেক্ষাপটে আগামী অর্থবছর থেকে বেশ কিছু ভাতার হার বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করছি।
তিনি বলেন, এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হলো- বয়স্ক ভাতার মাসিক হার ৬০০ টাকা হতে ৬৫০ টাকায়, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলাদের মাসিক ভাতা ৫৫০ টাকা হতে ৬৫০ টাকায়, প্রতিবন্ধীদের মাসিক ভাতা ৮৫০ টাকা হতে ৯০০ টাকায় এবং মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির আওতায় প্রদত্ত মাসিক ভাতার হার ৮০০ হতে ৮৫০ টাকায় বৃদ্ধি।
এছাড়া, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য মাসিক ভাতার হার ৬৫০ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করছি।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য মোট ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করছি, যা জিডিপির ১২.৭ শতাংশ। এর মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।
যা গত অর্থ বছরের তুলনায় এবারের বাজেট সাত হাজার কোটি টাকা কম। এর আগে আজ দুপুরে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিয়োগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।