বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বিধিমালা সংশোধন করছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এটি হলে পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বর, ফলাফল নিজের আইডিতে (ইউনিক আইডি) দেখতে পারবেন চাকরিপ্রার্থীরা।
চিকিৎসক ও প্রভাষক নিয়োগে বিশেষ বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে যাচ্ছে পিএসসি। ৪৮তম বিসিএস হবে বিশেষ বিসিএস। ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল আগামী জুন মাসে প্রকাশ হতে পারে।
গত রোববার পিএসসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম বলেন, নিয়োগপ্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, জবাবদিহিমূলক করার অংশ হিসেবে প্রত্যেক চাকরি-প্রার্থী তার প্রাপ্ত নম্বর, ফলাফল নিজের আইডিতে (ইউনিক আইডি) দেখতে পাবেন। এ বিষয়ে কমিশন নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন চলছে এ-সংক্রান্ত বিধিমালা সংশোধনের কাজ। আশা করছি, এটি ৪৭তম বিসিএস থেকেই কার্যকর করা সম্ভব হবে।’
তিনি বলেন, এই ইউনিক আইডি দিয়ে পিএসসির ক্যাডার ও নন-ক্যাডার উভয় পদেই আবেদন করতে পারবেন প্রার্থীরা। এতে বারবার আবেদন করার জটিলতা কমবে।
পিএসসি সূত্র জানায়, প্রত্যেক আবেদনকারীকে একটি আইডি দেওয়া হবে, যা ইউনিক আইডি নামে পরিচিত হবে। বিসিএস কর্মকর্তা নিয়োগে তিন ধাপে প্রার্থী বাছাই করা হয়। এগুলো হলো প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা। এখন বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর শুধু প্রার্থী আবেদন করলে লিখিত পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর জানতে পারেন। ইউনিক আইডি হলে কোন কোন পরীক্ষার (প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক) প্রাপ্ত নম্বর প্রার্থীরা দেখতে পাবেন, এ বিষয়ে শিগগির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন।
গত ডিসেম্বরে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মোবাশ্বের মোনেম বলেছিলেন, একবার প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীকে দুই থেকে তিনবার লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
এর আগের কমিশন আইডি থাকা প্রার্থীদের একবার আবেদনেই চাকরির বয়স থাকা পর্যন্ত সব বিসিএসে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার চিন্তাভাবনা জানিয়েছিল।
চিকিৎসক ও প্রভাষক নিয়োগে বিশেষ বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে পিএসসি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, শিক্ষা ক্যাডারে প্রভাষক পদে ৬৮৩ জন এবং স্বাস্থ্য ক্যাডারে ৩ হাজার ৩০ জনকে চিকিৎসকের এন্ট্রি পদে নিয়োগের জন্য বিশেষ বিসিএস আয়োজন করতে পিএসসিকে জানানো হয়েছে।
চিকিৎসক ও প্রভাষক নিয়োগের বিশেষ বিসিএসের বিষয়ে পিএসসির চেয়ারম্যান বলেন, ৪৮তম বিসিএস হবে বিশেষ বিসিএস। এই বিসিএস আয়োজনের জন্য বিধিমালা সংশোধনের কাজ চলছে। বিধিমালা সংশোধনের প্রজ্ঞাপন জারি হলেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। তবে চিকিৎসক ও প্রভাষক নিয়োগের জন্য একটি, না আলাদা বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
সর্বশেষ ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে ২৬তম বিসিএসের (বিশেষ) মাধ্যমে ১ হাজার ৪৭ জন প্রভাষক নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে সাধারণ বিসিএসের সঙ্গে শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ দেওয়া হলেও শিক্ষার জন্য আলাদা বিসিএস নেওয়া হয়নি। বিশেষ ৩৯তম ও ৪২তম বিসিএসের মাধ্যমে প্রায় ৯ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়।
৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল আগামী মাসের (জুন) মধ্যে প্রকাশ করার প্রস্তুতি চলছে। চলতি মে মাসেই এই বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা শেষ হবে। পিএসসির চেয়ারম্যানও আগামী ৩০ জুনের মধ্যে ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করার আশাবাদ জানিয়েছেন।
৪৪তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, এই বিসিএসে বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৭১০ কর্মকর্তা নেওয়া হবে। এর মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারে ২৫০ জন, পুলিশ ক্যাডারে ৫০, পররাষ্ট্র ক্যাডারে ১০, আনসার ক্যাডারে ১৪, নিরীক্ষা ও হিসাবে ৩০, কর ক্যাডারে ১১, সমবায়ে ৮, রেলওয়ে পরিবহন ও বাণিজ্যিকে ৭, তথ্যে ১০, ডাকে ২৩, বাণিজ্যে ৬, পরিবার পরিকল্পনায় ২৭, খাদ্যে ৩, টেকনিক্যাল ক্যাডারে ৪৮৫ এবং শিক্ষা ক্যাডারে ৭৭৬ জন নেওয়া হবে।
সাংবিধানিক সংস্থা পিএসসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম বলেন, দ্রুততম সময়ে ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে। ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা নিতে আবার কাজ শুরু করেছে কমিশন।