অষ্টাদশ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় ফেল করা প্রার্থীরা সোমবার সকালে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে ঢুকে পরেছেন বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ–এনটিআরসিএ’র কাযালয়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে নয়টার আগে থেকেই এনটিআরসিএ অফিসে্র সামনে জড়ো হতে থাকেন ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার ভাইভায় ফেল করা শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি লিখিত পরীক্ষায় পাস করলেও তাদের উদ্দেশ্যমূলক ভাবে ভাইভায় ফেল করানো হয়েছে।
ফল প্রকাশের পর থেকেই এই ফেল করা ২০ হাজারের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছে। ১৫ই জুন রোববার চার পাঁচ’শ প্রার্থী এনটিআরসিএ অফিসের সামনে বিক্ষোভ করে। এসময় তারা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নূরে আলম সিদ্দিকীর কাছে একটি স্মারকলিপি দেন। পরে তা সিদ্ধান্তের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায় এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ।
রোববারই কয়েক দফায় আন্দোলনকারীরা কর্তৃপক্ষে সময় বেধে দিলেও তাতে কোন সুরাহা হয়নি। ফলে সোমবার সকাল থেকে ফের এনটিআরসিএ অফিসের সামনে আন্দোলন শুরু করেন নিবন্ধন পরীক্ষায় চুড়ান্ত ভাবে উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থরা।
সোমবার সকাল থেকে নিবন্ধন প্রত্যাশীরা আক্রমনাত্মক ভূমিকায় গেলে নিরাপত্তা জোরদার করে কর্তৃপক্ষ।
অষ্টাদশ শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভাইভা বা মৌখিক পরীক্ষায় বসার জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন ৮৩ হাজার ৮৬৫ জন প্রার্থী। গত ৪ জুন চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হলে তাদের মধ্য থেকে ৬০ হাজার ৫২১জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হন।
আরো পড়ুন: শিক্ষক নিবন্ধন: সনদের দাবিতে ফেল করা প্রার্থীদের অবস্থান
অনুত্তীর্ণ ২০ হাজার প্রার্থীর একাংশ রোববার সকাল থেকে এনটিআরসিএ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে তাদের উত্তীর্ণ ঘোষণা করে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ দেওয়ার দাবি জানায়। তারা আজও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
অনুত্তীর্ণ প্রার্থীদের দাবি, তারা প্রিলিমিনারি ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও ভাইভায় ভালো করলেও তাদের ‘ফেল করানো হয়েছে’। তাই তারা শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার সনদ দাবি করছেন।
মাদরাসার আইসিটি প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য নিবন্ধিত হতে অষ্টাদশ শিক্ষক নিবন্ধনের ভাইভায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হতে না পারা সিরাজগঞ্জের প্রার্থী মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ভাইভায় ২৩ হাজার প্রার্থী ফেল করেছে।
যাদের মধ্যে প্রায় তিন হাজার ভাইভায় অনুপস্থিত ছিলেন বা তাদের পদের সঙ্গে শিক্ষাগত যোগ্যতার সামঞ্জস্য নেই। বাকি ২০ হাজার প্রার্থীকে ভাইভায় ফেল করানো হয়েছে। আগে আমরা দেখেছি, এনটিআরসিএ ভাইভায় ফেল করায় না। সেখানে আমাদের ২০ হাজার প্রার্থীকে ফেল করানো হয়েছে।
আমার দাবি ও আমাদের সবার দাবি, আমাদের সনদ দিতে হবে। এনটিআরসিএ চাকরি দেয় না, তারা একটা সনদ দেয় সে সনদপ্রাপ্তরা শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে যদি আমরা চাকরি নাও পাই, ওই সনদ দিয়ে আমরা নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পেতে পারব।
আরবি প্রভাষক পদে নিবন্ধিত হতে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিলেও উত্তীর্ণ হতে না পারা ঠাকুরগাঁওয়ের প্রার্থী সাব্বির হোসেন বলেন, এ শিক্ষক নিবন্ধনে প্রথম পর্যায়ে প্রায় ১৯ লাখ প্রার্থী আবেদন করেছিলেন। পরে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ৪ লাখ ৭৯ হাজার প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়ে লিখিত পরীক্ষায় বসেন। তাদের মধ্য থেকে মাত্র ৮৩ হাজার ৮৬৫ জন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। আমরা প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়েছি, আমরা যোগ্য।
তিনি বলেন, আমাদের দাবি, আমাদের যে ২০ হাজার প্রার্থীকে ভাইভায় অকৃতকার্য করা হয়েছে, আমাদের সকলের দাবি, সকলকে সনদ দিতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান পদের দায়িত্বে থাকা সদস্য মুহম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী গতকাল বলেন, শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার বিধিমালা অনুযায়ী ফল পুনর্নীরিক্ষণের সুযোগ নেই।
প্রার্থীরা অভিযোগ তুলেছেন, এনটিআরসিএ ভাইভাতে তাদের মনগড়া নম্বর দিয়ে ফেল করিয়েছে। তারা তাদের দাবি জানিয়ে আমাদের স্মারকলিপি পাঠিয়েছে, সেটি আমরা আমাদের কর্তৃপক্ষ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে পাঠিয়ে দিয়েছি।
নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, তারা অভিযোগ তুলছেন এনটিআরসিএর বিরুদ্ধে। যেহেতু আমাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ, আমাদের এ ক্ষেত্রে কিছু করার নাই। আমরা মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানিয়েছি। মন্ত্রণালয় প্রার্থীদের দাবি আমলে নিয়ে এনটিআরসিএর বিরুদ্ধে তদন্ত করে দেখতে পারে আমরা কি আসলেই মনগড়া নম্বর দিয়েছি কি-না।
২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ২ নভেম্বর ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। এ পর্যায়ে রেকর্ডসংখ্যক প্রায় ১৯ লাখ প্রার্থী আবেদন করেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয় ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ মার্চ।
এরপর গত বছরের ১৪ অক্টোবর লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। তাতে ৮৩ হাজার ৮৬৫ জন উত্তীর্ণ হন, পাসের হার ছিল ২৪ শতাংশ। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এনটিআরসিএ শিক্ষক নিবন্ধন সনদ দিচ্ছে। তবে শুরুর ১০ বছর শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা ছিল সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটির হাতে।
২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ ডিসেম্বর সরকার এনটিআরসিএকে সনদ দেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশের ক্ষমতাও দেয়। এরপর পাঁচটি গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে চলতি বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ১ লাখ ৩২ হাজার ৮৯৮ জন শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করেছে এনটিআরসিএ।