ভারতীয় সেনা সর্বাধিনায়ক অনিল চৌহান। ছবি: সংগৃহিত
পাকিস্তানের সাথে সাম্প্রতিক যুদ্ধে যুদ্ধবিমান খোয়া যাওয়ার কথা অবশেষে স্বীকার করলো ভারত। দেশটির সেনা সর্বাধিনায়ক অনিল চৌহান সিঙ্গাপুরে একটি টিভি চ্যালেনকে দেয়া সাক্ষাতকারে যুদ্ধ বিমান ধ্বংসের কথা স্বীকার করেছেন।
তবে স্বীকার শব্দটার চেয়ে এক্ষেত্রে সাংবাদিক তার কাছ থেকে সত্যটা আদায় করে ছেড়েছেন বললেও ভুল হবে না। শনিবার প্রভাবশালী ভারতীয় গণমাধ্যম শতাব্দী প্রাচীণ ‘দ্য স্টেটসম্যান’ গ্রুপের বাংলা সংবাদপত্র দৈনিক স্টেটসম্যান ’‘ভারতের যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছিল পাকিস্তান, মানলেন সেনা সর্বাধিনায়ক’’ শিরোনামে একটি খবর প্রকাশ করে।
যা দৈনিক শিক্ষার পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো।
পহেলগামে জঙ্গি হামলার প্রত্যাঘাতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ পাকিস্তানের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি সামনে এসেছিল। পাক সেনাবাহিনীর পাল্টা হামলায় ভারতের ক্ষতির বিষয়টি এতদিন সামনে আসেনি। এবার ভারতীয় সেনা বাহিনীর সেনা সর্বাধিনায়ক কার্যত স্বীকার করে নিলেন, ভারতের যুদ্ধবিমান পাকিস্তান ধ্বংস করেছিল।
শনিবার সেনা সর্বাধিনায়ক (চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ বা সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান সম্প্রতি সাংগ্রিলা বৈঠকে যোগ দিতে সিঙ্গাপুরে গিয়েছেন। শনিবার সেখানেই তিনি ব্লুমবার্গ টিভিকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে ভারত-পাকিস্তানের সংঘাত এবং ভারতের যুদ্ধবিমান নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সরাসরি উত্তর না দিলেও তাঁর বক্তব্যে ভারতীয় যুদ্ধবিমান ধ্বংসের কথা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যমের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
এদিন সাক্ষাৎকারে সিডিএস অনিলকে প্রশ্ন করা হয়, ‘জেনারেল, ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘাতের বিষয়ে একটি প্রশ্নের উত্তর এখনও মেলেনি। পাকিস্তান কি ভারতের যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছিল? এক বা একাধিক?’
সেই প্রশ্নের উত্তরে জেনারেল অনিল চৌহান সরাসরি ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলেননি। উত্তরে ভারতের সেনা সর্বাধিনায়ক বলেন, ‘আমাদের কাছে যুদ্ধবিমান ধ্বংসটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কেন সেটা ধ্বংস হল, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।’
সাংবাদিক এরপর আরও জোর দিয়ে প্রশ্ন করতে থাকেন, ‘তার মানে অন্তত একটি যুদ্ধবিমান পাকিস্তানি হামলায় ধ্বংস হয়েছিল?’
উত্তরে সংক্ষেপে ‘হ্যাঁ’ বলে অনিল ভারতীয় সেনার কৌশল ব্যাখ্যায় জোর দেন। তিনি বলেন, ‘ইতিবাচক দিক হল, আমরা আমাদের কৌশলগত ভুলটা তখনই বুঝতে পেরেছি এবং তা শুধরে দু’দিন পর আবার সেই কৌশল প্রয়োগ করেছি। সব যুদ্ধ বিমান আবার আমরা উড়িয়েছি এবং দূরের লক্ষ্যবস্তুকে নিশানা করেছি।’
ওই সাংবাদিক ফের প্রশ্ন করেন, পাকিস্তান দাবি করেছে, ভারতের অন্তত ছ’টি যুদ্ধবিমান তাদের হামলায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। সেটা কি সত্যি?
সেই প্রশ্নের জবাবে অনিল বলেন, ‘একেবারেই নয়।’ তবে কতগুলি যুদ্ধবিমান পাকিস্তানি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা নিয়ে আর কিছু বলেননি অনিল। ভারতের সেনা সর্বাধিনায়ক এরপর আবার বলেন, ‘বিমান ধ্বংসের তথ্যটি গুরুত্বপূর্ণ নয়। কেন তা ধ্বংস হল এবং তারপর আমরা কী করলাম, আমাদের কাছে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।’
প্রসঙ্গত গত ২২ পহেলগামে নৃশংস জঙ্গি হামলার প্রত্যাঘাতের জেরে ভারত-পাক সংঘাত শুরু হয়। চারদিনের মাথায় দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলেও সেই সংঘর্ষে ভারতের দিকে কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিয়ে কৌতূহল ছিল বিভিন্ন মহলে।
কারণ, পাকিস্তান বার বার দাবি করেছে, ভারতের একাধিক যুদ্ধবিমান তাদের হামলায় ধ্বংস হয়েছে। এমনকি, রাফাল যুদ্ধবিমানও ধ্বংস হয়েছে বলে দাবি করেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সেনা কর্তারা। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সেনাকর্তা, নানা জায়গায় একাধিকবার ভারতের যুদ্ধবিমান ধ্বংসের কথা দাবি করে এসেছেন। এবার ভারত কার্যত তা মেনে নিল।
যদিও ভারতের তরফে প্রথমে সেই বিষয়ে কোনও তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। সংঘর্ষবিরতির পরের দিনই বায়ুসেনার ডিরেক্টর জেনারেল অফ এয়ার অপারেশন (ডিজিএও) একে ভারতীকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি সেই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেননি।
ভারতী বলেছিলেন, ‘ক্ষয়ক্ষতি যে কোনও যুদ্ধেরই অংশ। কিন্তু প্রশ্ন হল, আমরা কি আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছতে পেরেছি? উত্তর হল, হ্যাঁ।’ তবে ডিজিএও তখন বলেন, ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে তিনি এখনই বিস্তারিত তথ্য দিতে পারবেন না। তিনি সে দিন কেবল একটি তথ্যই নিশ্চিত করেছিলেন, ভারতের সমস্ত পাইলট নিরাপদে ফিরে এসেছেন।