ছবি : সংগৃহীত
কালবৈশাখী ঝড়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলায় নাসিরাবাদ দুলাহার উচ্চবিদ্যালয়ের ছাউনি (ঘরের চালা) উড়ে গেছে। ফলে দেখা দিয়েছে শ্রেণিকক্ষের সংকট। তাই খোলা আকাশের নিচেই চলছে পাঠদান কার্যক্রম। এতে বিঘ্নিত হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাসিরাবাদ দুলাহার উচ্চবিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ১৭২ জন। বিদ্যালয়ে দুটি পাকা ভবন এবং তিনটি মাটির তৈরি ঘর। মাটির তৈরি তিনটি ঘরের চারটি কক্ষ এবং পাকা দুটি ভবনের দুটি কক্ষ শ্রেণিকক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু গত শুক্রবার রাতে কালবৈশাখী ঝড়ে মাটির তৈরি দুটি ঘরের চালা দুমড়ে-মুচড়ে উড়ে গেছে। এতে সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে পারছে না। এদিকে দুটি পাকা ভবনের কক্ষগুলোতেও ভারী বৃষ্টির পানি ঢুকেছে। তাই বাধ্য হয়ে খোলা আকাশের নিচেই পাঠদান করাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নিলা খাতুন বলে, ‘আধুনিকতার এই যুগে দীর্ঘদিনের তৈরি মাটির ঘরেই চলছিল শিক্ষা কার্যক্রম। এখন মাটি ক্ষয়ে ক্ষয়ে পড়তে শুরু করেছে। এতে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। গত শুক্রবার কাল বৈশাখী আমাদের শ্রেণি কক্ষের টিনের চালা উড়িয়ে নিয়ে গেছে। তিন দিন ধরে খোলা আকাশের নিচেই প্রখর রোদের মধ্যে ক্লাস করতে হচ্ছে। জানি না কত দিন ক্লাস করতে হবে।’
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মারুফা খাতুনের ভাষ্য, ‘বরেন্দ্র এলাকা বলে আমরা কখনো ছাদের নিচে ক্লাস করতে পারিনি। শিক্ষার পরিবেশ ভালো না হওয়ায় আমরা অনেক পিছিয়ে পড়ছি।’
নবম শ্রেণির ছাত্র রিমন আলী বলে, ‘রোববারও আমরা খোলা আকাশের নিচে রোদের মধ্যে ক্লাস করেছি। এখন ঝড়-বৃষ্টি হলে তো ক্লাসই করা যাবে না। এতে করে আমাদের লেখাপড়ার অনেক ক্ষতি হচ্ছে।’
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অখিল চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে মাটির তৈরি ঘরে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলে আসছে। অধিকাংশ বিদ্যালয়ে নতুন নতুন ভবন হলেও এই বিদ্যালয়টিতে জরাজীর্ণ অবস্থা। দুটি পাকা ভবনের একটি ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে এবং আরেকটি ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত। এমন অবস্থায় গত শুক্রবার রাতে কালবৈশাখী ঝড়ে বিদ্যালয়ের দুইটা ঘরের টিনের চালা উড়ে গেছে এবং দরজা, জানালা, ফ্যান, টেবিল, চেয়ার, বেঞ্চ ও বিদ্যুতের মিটারসহ বিভিন্ন আসবাবের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মেরামত বা সংস্কার করার মতো টাকাও নেই বিদ্যালয়টির তহবিলে।’
প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, ‘গত শনিবার (১৭ মে) ভাঙা শ্রেণিকক্ষগুলোতেই ক্লাস করা হয়েছে। কিন্তু রোববারের (১৮ মে) ভারী বৃষ্টিতে শ্রেণিকক্ষে পানি জমে গেছে। যার ফলে খোলা আকাশের নিচে রোদেই ক্লাস করাতে হচ্ছে। তাই বিদ্যালয়টি মেরামত বা সংস্কার করে পাঠদান উপযোগী করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
জেলা শিক্ষা অফিসের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা (রুটিন দায়িত্ব) রুবিনা আনিস বলেন, ‘স্কুলের টিনের চালা উড়ে যাওয়ার ফলে খোলা আকাশের নিচে ক্লাস চলছে—এটা তো আমার জানা নেই। আমি এখনই নাচোল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’