ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসের পানিতে কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব মিলেছে। সম্প্রতি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা পানির স্যাম্পলের উপর সাত ধরনের পরীক্ষা করা হয়। এতে মারাত্মক ব্যাকটেরিয়া কলিফর্মের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
কবি জসিম উদ্দীন হল, জগন্নাথ হল, শ্যাডো, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, কার্জন হলের পানিতে এই ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান মিলেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগ এবং মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের আবাসিক ছাত্র শাহরিয়ার মোহাম্মদ ইয়ামিন ক্যাম্পাসের ১০টি পয়েন্ট থেকে পানির স্যাম্পল নিয়ে মহাখালীর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে পরীক্ষা করান। এর মধ্যে থেকে পাঁচটি পয়েন্টের পানি পরীক্ষা করে তা থেকে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া কলিফর্মের (ফেকাল) অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
শাহরিয়ার মোহাম্মদ ইয়ামিন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ফেসবুক গ্রুপে সবাইকে জানানোর জন্য ক্যাম্পাস থেকে সংগৃহীত পানির স্যাম্পল টেস্টের ফলাফল বর্ণনা করে বলেন, কিছুদিন আগে আমি স্বপ্রণোদিত হয়ে আামাদের ক্যাম্পাসের খাবার পানির মান টেস্ট করার জন্য ক্যাম্পাসের বেশ কয়েকটি পয়েন্ট থেকে পানির স্যাম্পল সংগ্রহ করি। প্রত্যেকটা স্যাম্পলের উপর মূলত সাত ধরনের টেস্ট হয়। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ছিলো কলিফর্ম (ফেকাল) ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি নির্ণয় করা।
তিনি বলেন, ‘কলিফর্ম’ হলো একধরনের ব্যাকটেরিয়া, যা সাধারণত মানুষের ও প্রাণীর মল, মূত্র এবং অন্যান্য বর্জ্য পদার্থে পাওয়া যায়। কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি ইঙ্গিত দেয় যে, পানিতে ফেকাল দূষণ ঘটেছে এবং তা পানির মাধ্যমে রোগ সৃষ্টিকারী প্যাথোজেনিক জীবাণুর উপস্থিতি নির্দেশ করে। রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী এমন বিভিন্ন প্যাথোজেন যেমন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও প্রোটোজোয়ার সম্ভাব্য উপস্থিতির সংকেত দেয়। কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার উৎস হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, স্যুয়ারেজ বা নর্দমার মিশ্রন, গবাদি পশুর খামারের বর্জ্য, অপর্যাপ্ত বা লিকেজযুক্ত সেপটিক ট্যাংক, দূষিত খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থা ইত্যাদি জায়গা থেকে এই ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার উৎপত্তি হয়।
তিনি আরো বলেন, কলিফর্মযুক্ত (ফেকাল) পানি বা খাদ্য গ্রহণ করলে ডায়রিয়া, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস, কলেরা এবং অন্যান্য পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি থাকে। ক্যাম্পাসের পানিতে দুই থেকে সর্বোচ্চ ১৪ মাত্রার কলিফর্মের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। যদিও এটি খুব বেশি দূষিত নয়, তবুও এর উপস্থিতি রোগজীবাণু থাকার সম্ভাবনা তৈরি করে যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
বিশেষত, সংবেদনশীল ব্যক্তিদের (শিশু, বয়স্ক বা দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি) জন্য এটি বিপজ্জনক। তাই এক্ষেত্রে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। এটা থেকে উত্তরণের জন্য নিয়মিত পানি ফুটানো, ক্লোরিন ট্যাবলেট ব্যবহার, ফিল্টার ব্যবহার খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন তিনি।