জাল সনদে শিক্ষক হওয়ার অভিযোগ তদন্তে কমিটি | স্কুল নিউজ

জাল সনদে শিক্ষক হওয়ার অভিযোগ তদন্তে কমিটি

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ সরকারি কলোনি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে জাল সনদ দিয়ে চাকরি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

#জাল সনদ #প্রধান শিক্ষক #তদন্ত কমিটি #শিক্ষার্থী

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ সরকারি কলোনি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে জাল সনদ দিয়ে চাকরি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড।

গত বুধবার (২ জুলাই) চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রফেসর মো. আবুল কাসেম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সীতাকুন্ড উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে আহবায়ক করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন- চট্টগ্রামের পাহাড়তলী ওয়ার্লেস ঝাউতলা কলোনি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নিজাম উদ্দিন ও হালিশহরের গরিবে নেওয়াজ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম।

কমিটিকে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

অভিযোগ চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ সরকারি কলোনি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাল সনদ ও ভুয়া অভিজ্ঞতা সনদে চাকরি করছেন। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারি আগ্রাবাদ সরকারি কলোনি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে যোগদানের সময় ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে ইউজিসি কর্তৃক বন্ধ ঘোষিত আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের এম.এ (ইংরেজী) পাশের জাল সনদ দাখিল করে এমপিও ভুক্ত হন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম।

তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনারারী শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করেছেন মর্মে জাল-জালিয়াতির আশ্রয় গ্রহনণ করে তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্যাডে স্বহস্থে লিখিত ভুয়া অভিজ্ঞতা সনদ তৈরি করেন। উক্ত অভিজ্ঞতা সনদ ব্যবহার করে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ ও চাকরি বিধিমালা ১৯৭৯ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২৪ অক্টোবর, ১৯৯৫ তারিখের শাঃ ১১/বিবিধ-৫/৯৪ (অংশ-৬)/৩৯৪ নং স্মারকে জারিকৃত পরিপত্রের বিধি ৫,৭ (৩,৭) ১৪ (১,২) এবং (বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন ভাতাদির সরকারি অংশ প্রদান এবং জনবল কাঠামো সম্পর্কিত নীতিমালা-১৯৯৫) পরিশিষ্ট-ক বর্ণিত এমপিওভুক্ত শিক্ষক হিসেবে ১২ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা ছাড়াই পরস্পর যোগসাজশে দুর্নীতির মাধ্যমে ২০০২ খ্রিষ্টাব্দের ১ মে সীতাকুণ্ডের ক্যাপ্টেন শামসুল হুদা উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকরি নেন। শিক্ষা বিভাগের তৎকালীন অসাধু কর্মকর্তাদের সহায়তায় পরস্পর যোগসাজসে ভুয়া অভিজ্ঞতা সনদ দাখিল করে প্রতারণা ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সরাসরি 'সহকারী প্রধান শিক্ষক' হিসেবে এমপিওভুক্ত হন। যা বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক/কর্মচারী নিয়োগ ও চাকরি বিধিমালা ১৯৭৯ এবং জনবল কাঠামো-১৯৯৫ এর পরিপন্থী। সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে এমপিওভুক্ত হওয়ার মাত্র আট মাস পর ভুয়া অভিজ্ঞতা সনদে সরাসরি 'সহকারী প্রধান শিক্ষক' পদে নিয়োগ গ্রহণের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে সিন্ডিকেট চক্রের পরিকল্পনা মাফিক গত ২০০২ খ্রিষ্টাব্দের ৮ জানুয়ারি চট্টগ্রামের পাহাড়তলী বালিকা বিদ্যালয়ে 'সহকারী প্রধান শিক্ষক' পদে যোগদান করে কর্মস্থল পরিবর্তন করেন। ক্যাপ্টেন শামসুল হুদা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ মাসের এমপিওভুক্ত শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা সনদ দাখিল করে তিনি জাতীয় বেতন স্কেল ১৯৯৭ এর ৯ম গ্রেডে (৪৩০০-৭৭৪০ স্কেলে) এমপিওভুক্ত হন যা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নং-শা-৩/১জি-৬৫/৯৪-শিক্ষা তারিখ:০৯-০২-১৯৯৫ এর পরিপন্থী। উপর্যুক্ত পরিপত্র মোতাবেক ৮ মাস এমপিওভুক্ত চাকরির অভিজ্ঞতায় কোন ক্রমেই ৯ম গ্রেডে বেতন/ভাতা পেতে পারেন না। চাকরিতে প্রথম এমপিওভুক্তির তারিখ হইতে একই বেতন স্কেলে একনাগাড়ে ৮ বছর সন্তোষজনক চাকরির মেয়াদ পূর্ণ হলে স্ব স্ব বেতন গ্রেডের পরবর্তী বেতন গ্রেডে স্কেল পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন।

মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম পাহাড়তলী বালিকা বিদ্যালয়ে কর্মরত থাকা অবস্থায় একই সঙ্গে ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত চান্দগাও থানার অন্তর্গত মোহরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকরি করেন।

একই সাথে কয়েকমাস দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার পর তিনি পাহাড়তলী বালিকা বিদ্যালয়ে স্থায়ী হন। দীর্ঘ সময় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করার পর ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে সাজানো নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকের পদ বাগিয়ে নেন। পাহাড়তলী বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্তব্যরত অবস্থায় ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষ ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে পাশ দেখিয়ে ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে ইউজিসি কর্তৃক বন্ধঘোষিত আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির এম এ (ইংরেজি) পাশের ভুয়া সনদ দাখিল করে বিদ্যালয়টিকে কলেজে রূপান্তর করে রাতারাতি অধ্যক্ষ বনে যান।

পাহাড়তলী বালিকা বিদ্যালয়ে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে ফ্যাসিলিটিজ ডিপার্টমেন্ট এবং শিক্ষা অধিদপ্তরের অসাধু সিন্ডিকেট চক্রসহ বিভিন্ন ভুঁইফোড় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স-মাস্টার্সের ভুয়া সনদ বাণিজ্যের সাথেও জড়িয়ে পড়েন তিনি। এসব সিন্ডিকেটের সাথে মিলে মিশে একাকার হয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সনদ বাণিজ্য, শিক্ষক/কর্মচারী এমপিওভুক্তির তদবির বাণিজ্য, ডাবল শিফট/শাখা খোলা/ ভুয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন করিয়ে দেওয়ার মত গর্হিত কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠেছে মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে।

#জাল সনদ #প্রধান শিক্ষক #তদন্ত কমিটি #শিক্ষার্থী