ঢাকা কলেজের হলে নবীন ছাত্রদের সিট বরাদ্দে জটিলতা | কলেজ নিউজ

ঢাকা কলেজের হলে নবীন ছাত্রদের সিট বরাদ্দে জটিলতা

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে আগের সব সিট বাতিল করে গত বছরের ১৯ আগস্ট ১১টি নির্দেশনা সংবলিত ঢাকা কলেজের ছাত্রাবাসমূহের সিট বরাদ্দের নীতিমালাসমূহ প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ।

#কলেজ #ঢাকা কলেজ #শিক্ষার্থী #শিক্ষক

ঢাকা কলেজে চলমান শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলে সিট বরাদ্দে জটিলতা দেখা দিয়েছে। ভর্তির দীর্ঘ ছয় মাস পরেও কলেজ প্রশাসন অনার্স ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের সিট বরাদ্দে নেয়নি কোনও কার্যকর উদ্যোগ। নীতিমালা অনুযায়ী, মাস্টার্স পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থীদের হলে সিট বাতিল করেনি কর্তৃপক্ষ। ফলে নীতিমালা নিয়েও উঠেছে বিতর্ক।

কলেজ প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে আগের সব সিট বাতিল করে গত বছরের ১৯ আগস্ট ১১টি নির্দেশনা সংবলিত ঢাকা কলেজের ছাত্রাবাসমূহের সিট বরাদ্দের নীতিমালাসমূহ প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ। এরপর একযুগের অধিক সময় পর স্ব স্ব বিভাগ কর্তৃক সিট বরাদ্দের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩ সেপ্টেম্বর হলে ওঠেন শিক্ষার্থীরা।

নীতিমালার ৬ নম্বর নির্দেশনায় বলা হয়, মাস্টার্স পরীক্ষার ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষার ১৫ দিনের মধ্যে ছাত্রাবাস ত্যাগ করতে হবে। অন্যথায় তার ছাত্রাবাসের সিট বাতিল হয় যাবে। কিন্তু মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ হলেও নীতিমালা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেই কলেজ কর্তৃপক্ষের।

আবার ছাত্রাবাসের ৫ নম্বর নির্দেশনায় বলা হয়েছে, অর্থবছরের শুরুতে (জুন-জুলাই) ছাত্রাবাস ফি পরিশোধ করে ছাত্রদেরকে আবাসিক হল কার্ড সংগ্রহ করতে হবে। তবে বর্তমান হলে অবস্থানরত মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা গত বছরের আগস্টে হল ফি পরিশোধ করেছেন।

মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের দাবি, হল ফি পূর্বে পরিশোধ করায় নতুন অর্থবছর অর্থ্যাৎ জুন মাস পর্যন্ত তাদের হলে অবস্থান করার অধিকার রয়েছে। এদিকে নতুন শিক্ষার্থীরা নীতিমালা মেনে দ্রুত সময়ের মধ্যে হলে সিট বরাদ্দের জন্য কলেজ অধ্যক্ষ বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারস্পরিক দ্বন্দ্বের আশঙ্কা করছেন অনেকে।

ছাত্রাবাসের নীতিমালা প্রণয়ন ও বিতর্কের বিষয়ে ঢাকা হল কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক আনোয়ার মাহমুদ বলেন, জুলাই বিপ্লবের পরে যারা হলে উঠেছিল, তাদের জন্য আমরা তাৎক্ষণিক কিছু নীতিমালা করেছিলাম। যেহেতু সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্রিয়া চলমান সেহেতু হলের নীতিমালা যুগোপযোগী করার জন্য কাজ অব্যাহত রয়েছে। যে নীতিমালা আছে, আমরা যদি সেটা আলোকেও এবার বরাদ্দ দিই, তাহলেও কোন সমস্যা হবে না।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বলছি, মাস্টার্সের জন্য ছাত্রাবাসে এক বছরের জন্য সিট বরাদ্দ। সে পরীক্ষা দিক বা পরীক্ষা না দিক অথবা ফরম ফিলাপ করুক অথবা না করুক মাস্টার্সের জন্য সিট বরাদ্দ এক বছর। ইতোমধ্যে সাউথ হলে এ বিষয়ে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলে দেওয়া হয়েছে, মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের ৩০ মের মধ্যে হলত্যাগ করতে হবে। সব ছাত্রাবাসে এরকম নোটিশ অতি শিগগিরই দেবে।’

কলেজের হল প্রশাসনের তথ্যমতে, সাতটি হলে অনার্সের শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত আসনভিত্তিক ধারণক্ষমতা ৮৫০টি। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হলে বরাদ্দকৃত মাস্টার্সের আসন সংখ্যা ৫৭টি। এর মধ্যে দক্ষিণ ছাত্রাবাসে থাকেন সবচেয়ে বেশি মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। হল প্রশাসন বলছে, বর্তমানে হলে অবস্থানরত মাস্টার্সের ৫৭ জন শিক্ষার্থীর বাতিলকৃত আসনে নতুন শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা আসন বরাদ্দ পাবেন।

ইসলামিক ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ইদ্রীস বলেন, আমার মতে, হলের ক্ষেত্রে কলেজ প্রশাসন দুইটা পদ্ধতিতে কাজ করতে পারে। তারা শিক্ষাবর্ষ অনুযায়ী বের করে দিতে পারে। এবার যেমন ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ বের হয়ে যাবে, এর পরের বছর ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ এবং পরে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ। এই শিক্ষাবর্ষগুলোর শিক্ষার্থীদের এ সময়ের মধ্যে মধ্যে অনার্স বা মাস্টার্স শেষ হোক বা না হোক, তাদের হল ছেড়ে দিতে বাধ্য থাকবে। এভাবে শিক্ষাবর্ষ অনুযায়ী প্রতি বছর হল থেকে বের করে দেওয়ার প্রক্রিয়া চালু থাকুক।

তিনি আরও বলেন, অনার্সের ক্ষেত্রে যদি হলে চার বছরের জায়গায় ছয় বছর মেয়াদ থাকে, তাহলে মাস্টার্সের ক্ষেত্রে কেন হলে মেয়াদ এক বছর করা হলো। অনার্সে যদি কেউ দুই বছর গ্যাপ দেয় তাহলে সে অতিরিক্ত দুই বছর আবাসিক সুবিধা ভোগ করছে। মাস্টার্সের ক্ষেত্রে কোনও শিক্ষার্থী এক বছর গ্যাপ দিয়েছে সেক্ষেত্রে আরও এক বছর তার সুযোগ আছে, তাহলে সে কেন আবাসিক সুবিধা পাবে না? আমি মনে করি মাস্টার্সের ক্ষেত্রে যদি এক বছরের আবাসিক সুবিধা দেওয়া হয়, তাহলে অনার্সের ক্ষেত্রে চার বছরের বেশি নয়।

ছাত্রাবাসে দ্রুত আসন বরাদ্দের দাবি জানিয়ে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শাহিন আলম বলেন, ঢাকা কলেজের ছাত্রাবাসে সিট বরাদ্দের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার অভাব বড় সমস্যা। এর ফলে সিট পাওয়ার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা বিঘ্নিত হয় এবং ছাত্রদের মধ্যে অসন্তোষ ও বিভ্রান্তি তৈরি হয়। নতুন শিক্ষাবর্ষে সিট বরাদ্দের সময় দেখা দেয়া জটিলতাও। এটি নীতিহীনতার সরাসরি ফলাফল।

তিনি আরও বলেন, আমি একজন নবীন শিক্ষার্থী হিসেবে মনে করি, ছাত্রাবাস ব্যবস্থাপনায় অবিচল নীতি থাকা জরুরি। যেখানে কলেজ প্রশাসন শিক্ষার্থীদের মেধা, আর্থিক অবস্থা, দূরত্ব, বিশেষ চাহিদা ইত্যাদি বিবেচনায় এনে স্পষ্ট মানদণ্ড নির্ধারণ করবে। একইসঙ্গে, একটি স্বচ্ছ আবেদন ও নির্বাচন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা উচিত, যাতে ছাত্ররা আগে থেকেই তাদের সুযোগ-সুবিধা ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবগত থাকতে পারে। এ বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া জরুরি, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের জটিলতা এড়ানো যায় এবং ছাত্রদের মধ্যে ন্যায়বোধ ও আস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়।

সঠিকভাবে সিট বরাদ্দের ক্ষেত্রে সংশয়ের কথা জানিয়ে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ইংরেজী বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম শান্ত বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পূর্বে আমরা দেখেছি যে, হলগুলো ছাত্রলীগের টর্চার সেলে রূপান্তরিত হয়েছিল। যারা তাদের মিটিং মিছিলে যেত, কেবল তারাই হলে সিট পেত। হলে সিট দেওয়ার ব্যপারে প্রশাসন সে সময়ে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতো। কিন্তু বর্তমানে নতুন শিক্ষার্থীদের হলে সিট দেওয়ার ব্যাপারে প্রশাসনের উদাসীনতা লক্ষ্য করা যায়। অতীতের মতো কোনও ছাত্র সংগঠন যেন এই রকম অনিয়মে জড়িত না হয়। প্রশাসনের মাধ্যমে যোগ্য ছাত্রদের যেন সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়।

দ্রুত নীতিমালা অনুযায়ী সিট বরাদ্দ করা হবে উল্লেখ করে দক্ষিণ ছাত্রাবাসের হল প্রভোস্ট অধ্যাপক আনোয়ার মাহমুদ বলেন, গত বছর কোনও ধরনের জটিলতা ও ঝামেলা ছাড়াই ছাত্রদের ছাত্রাবাসে উঠানো হয়েছিল। আমাদের যা সিট থাকবে, সেটা বিভাগ অনুপাতে দিয়ে দেব। একজন ছাত্রকে বিভাগ সবচেয়ে ভালো চেনে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সিট বরাদ্দের ক্ষেত্রে বিভাগ থেকে সুপারিশের মাধ্যমে হল বরাদ্দ হয়। সেক্ষেত্রে বিভাগ ঠিক করে দেবে, কে যোগ্য এবং সে ছাত্রাবাসে সিট পাবে। বিভাগ সিলেকশন অনুযায়ী ছাত্রাবাসে সিট বরাদ্দ হবে, এখানে কারও কোন সুপারিশ আমরা শুনব না।

এ বিষয়ে ঢাকা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পারভীন সুলতানা হায়দার বলেন, মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা জুন মাস পর্যন্ত থাকতে চেয়েছে, জুলাইয়ে চলে যাবে। ঢাকা কলেজের হলের শিক্ষার্থীদের জন্য সুনির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন আছে। আর মাস্টার্সের ছাত্ররা শুধু এক বছরই হলে থাকতে পারবে। সে ইয়ার গ্যাপ দিক কিংবা পরীক্ষায় ফেল করুক যাই হোক না কেন, এক বছর পর তাকে হল ছাড়তে হবে। মাস্টার্সের যে কয়জন ছাত্র চলে যাবে, সে কয়টি সিট নতুন শিক্ষার্থীরা পাবে।

তিনি আরও বলেন, অনার্সের শিক্ষার্থীদের যদি কোনো কারণে ইয়ার গ্যাপ হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া হতে পারে। তবে মাস্টার্সের ক্ষেত্রে এক বছরের বেশি সময় থাকার কোনো সুযোগ নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় হলে সিটের বরাদ্দের প্রক্রিয়াটি অনলাইন ভিত্তিক করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সামনে আমরা ভেবে দেখব হলে সিট বরাদ্দসহ পুরো বিষয়টা অনলাইনে আনতে। তবে এটা করতে কিছুটা সময় লাগবে।

#কলেজ #ঢাকা কলেজ #শিক্ষার্থী #শিক্ষক