মাউশি অধিদপ্তরে ক্ষমতা হস্তান্তর জটিলতা, শিক্ষা ক্যাডারে ক্ষোভ  | এমপিও নিউজ

মাউশি অধিদপ্তরে ক্ষমতা হস্তান্তর জটিলতা, শিক্ষা ক্যাডারে ক্ষোভ

পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ধবংসের জন্য দায়ী সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির পছন্দে এই অধ্যাপককে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিকল্পনা শাখার পরিচালক করা হয় ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের শুরুতে। ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পরও তিনি টিকে আছেন। শুধু টিকেই নেই, গত বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ইতিহাসে এক মন্দ নজির স্থাপন করেছেন এই অধ্যাপক।

অথচ তারাই খবরদারি করেন শাসন করেন বেসরকারি হাইস্কুল ও কলেজ প্রধান, উপ-প্রধান ও সহকারি প্রধানদের। বিধান না মানলে শাস্তিও দেন। কিন্তু নিজেরাই বিধান মানেননি। এমন নজিরবিহীন অঘটনের জন্ম দিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে কর্মরত বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের একজন অধ্যাপক। যিনি স্মরণকালের নিন্দিত শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির খুবই পছন্দের লোক হিসেবে শিক্ষা প্রশাসনে পরিচিত। পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ধবংসের জন্য দায়ী সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির পছন্দে এই অধ্যাপককে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার পরিচালক করা হয়েছিলো ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের শুরুতে। ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পরও তিনি টিকে আছেন। শুধু টিকেই নেই, গত বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ইতিহাসে এক মন্দ নজির স্থাপন করেছেন এই অধ্যাপক। নাম যার এ কিউএম শফিউল আজম।

শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র ডিজিটাল পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকম-এর অনুসন্ধানে জানা যায়, অধ্যাপক হলেও গত ১৭ বছরে একদিনও শ্রেণিকক্ষে যাননি শফিউল আজম। ১৭ বছরের পুরো সময়টাই কাটিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল ও কথিত বিদেশে পড়াশোনায়।

গত বৃহস্পতিবার ছিলো মহাপরিচালকের চলতি দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক এ বিএম রেজাউল করীমের শেষ কর্মদিবস। বিধান, রেওয়াজ ও নজির হলো মহাপরিচালক অবসরে গেলে বা বদলি হলে বা মারা গেলে পরিচালক কলেজ ও প্রশাসন তৎক্ষণাৎ ওই দায়িত্ব পান। এরপর মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেয় আর্থিক ক্ষমতাও দেবে নাকি নতুন কাউকে মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেবে নাকি চলতি দায়িত্বে দেবে।

মাউশি অধিদপ্তরের একাধিক সাবেক মহাপরিচালক এবং কলেজ ও প্রশাসন শাখার পরিচালক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে নিশ্চিত করেছেন, মহাপরিচালকের অবর্তমানে কলেজ ও প্রশাসন পরিচালক দায়িত্ব পাবেন। ডাইরেক্টর কলেজও যদি কোনো কারণে না থাকেন বা বিদেশে থাকেন সেক্ষেত্রে পরিচালক মাধ্যমিক ওই দায়িত্ব পাবেন। তারা আরো বলেন, মাধ্যমিক ও কলেজ ডাইরেক্টর পদ দুটো ২য় গ্রেডের। আর এই পদ দুটো অধিদপ্তরের বেইজ বা জন্ম থেকেই রয়েছে। ফিনান্স ও প্রকিউরমেন্ট,পরিকল্পনা ও উন্নয়ন এবং মনিটরিং উইং যথাক্রমে সেকায়েপ ও সেসিপ প্রকল্প থেকে আত্তীকৃত ও অর্ধআত্তীকৃত হয়ে অধিদপ্তরে যুক্ত হয়েছে অথবা ঝুলে আছে।

তারা বলেছেন, ক্ষমতা হস্তান্তরের এই মন্দ নজির ক্যাডারের মধ্যে তীব্র নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান প্রধানরাও হাসিঠাট্টা করছেন।

বৃহস্পতিবারের ওই অঘটনের পর নানা প্রতিক্রিয়ার অংশ হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বড় আমলাদের বিভিন্ন সেক্টর থেকে টেলিফোনে জানানো হয়। ক্ষমতা হস্তান্তরে মারাত্মক ভুল হয়েছে মর্মে তথ্য-প্রমাণ হাজির করেছেন একজন পরিচালক। সব তথ্য নিয়ে তিনি আজ রোববার সকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ নানা দপ্তরে হাজির হবেন বলেও জানা গেছে।

বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদের সভাপতি ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, যারা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রশাসন দেখেন, অধ্যক্ষের অবর্তমানে ক্ষমতা পাওয়া ও দেওয়া নিয়ে বিধান ঠিক করে দেন। আবার সেই বিধান ভঙ্গ হলে শাস্তিও দেন। অথচ শিক্ষা ক্যাডারের অধ্যাপক হয়েও তারাই অনিয়ম করছেন, মন্দ নজির স্থাপন করছেন।

বেসরকারি শিক্ষক নেতা হাবিবুর রহমান বলেন, অতীতে আমরা দেখেছি মাউশি অধিদপ্তরের পরিচালক কলেজ ও প্রশাসন ভিকারুননিসা কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগে অনিয়ম করে বিতর্কিত হয়েছেন। পতিত অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী মাউশি অধিদপ্তরের ওই পদে থেকে বিতর্কিত কাজ করায় নিয়োগ বোর্ডে ডিজির প্রতিনিধি মনোনয়নের বিধানটাই বদলাতে হয়েছিলো। মাত্র দুই বছর আগের এই ঘটনা শিক্ষা প্রশাসনের সবার মনে থাকার কথা।

জানা গেছে, শিক্ষা ক্যাডারের সর্বোচ্চ এই পদটিতে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন অনেক অধ্যাপক।

বরাবরের মতোই মুখে ও ফেসবুকে ক্যাডারের মর্যাদা রক্ষার কথা বলেও কখনো ছাত্রদলের বনি আমিন (গত বছর তার ইডেন কলেজে থাকা শিক্ষা ক্যাডার স্ত্রী মারা গেছেন), কখনো বেদরকারি অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদারের বাড়ীতে ছোটাছুটি, কখনো অসরকারি জাকির হোসেনের পিছু নেওয়া আবার কখনো অমিত কুমার বন্দনার ধারাবাহিকতায় পাঁচ আগস্টের পরে অনেকেই প্রথম ধাপে শিশিরে পা ও গলা ভিজিয়েছিলেন অনেকেই। দৈনিক শিক্ষাডটকম-এ শিশিরের আমলনামা প্রকাশ ও নতুন পদ থেকে পতিত হওয়ার পর অন্য পীর ধরেছেন অনেকেই। সেই পীরের অন্যতম হলো ঢাকার মিরপুরের নবম শ্রেণির কেজি স্কুলের একজন কথিত অধ্যক্ষ। যাকে এনসিটিবির প্রাথমিক শাখার সদস্য ‘শিক্ষাবিদ’ তকমা দিয়েছেন গত তিন মাসে। গত সপ্তাহে আমাইতে একজন বয়োবৃদ্ধকে প্রধান অতিথি করে শোডাউন করেতে সক্ষম হয়েছেন নুরে আলম। মাউশি মহাপরিচালক ও এনসিটিবির চেয়ারম্যান ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে থাকা মর্যাদা রক্ষা কমিটির অনেক সদস্যই এবার কেজি স্কুলের শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষের পেছনে ছুটছেন অতি গোপনে। ডিআইএর সাবেক সালাম ও কালামও ছুটছেন নুরে আলমের পেছনে। ধান্দা মাউশি অধিদপ্তরের পরিচালক অথবা এনসিটিবি অথবা ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের বড় পদ।

তবে, বরাবরের মতোই তক্কে তক্কে আছে দৈনিক শিক্ষাডটকম ও দৈনিক আমাদের বার্তার রিপোর্টাররা।