দীর্ঘ ৭৪ দিন পর খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলেও গত এক সপ্তাহ ধরে ক্লাসে ফেরেননি শিক্ষকরা। শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাসে ফিরবেন না বলে জানিয়েছেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরোদমে কবে নাগাদ ক্লাস শুরু হবে তা নিয়ে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তা বাড়ছে। পাশাপাশি সেশনজট বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাড়ে সাত হাজার শিক্ষার্থী।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ৬ মে সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষক সমিতির দাবির সঙ্গে সংগতি রেখে প্রশাসন বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সভায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষকদের সাইবার বুলিংয়ের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। পাশাপাশি ওই সহিংসতার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শৃঙ্খলা কমিটির মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, ক্লাসরুমগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। শিক্ষকরা ক্লাসে না ফেরায় নেই শিক্ষার্থীরাও। ধুলা জমেছে চেয়ার-টেবিল, বেঞ্চ ও মেঝেতে। ক্যাম্পাসের সড়কেও উপস্থিতি নেই শিক্ষার্থীদের। হলের শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই নিজ নিজ কক্ষে অবস্থান করছেন।
এদিকে, লাঞ্ছিত করার ঘটনায় প্রতিদিনই শিক্ষকদের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইছেন শিক্ষার্থীরা। তবে কোনো লাভ হচ্ছে না। শিক্ষকরা অনড় রয়েছেন তাদের দাবিতে। এতে শিক্ষার্থীরা সময়মতো কোর্স শেষ করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। কারণ, কুয়েটে আগে থেকেই প্রায় দেড় বছরের সেশনজট রয়েছে। তার ওপর গত আড়াই মাস কোনো ক্লাস ও পরীক্ষা হয়নি।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, আমরা ভুলত্রুটির জন্য এরই মধ্যে একাধিকবার শিক্ষকদের কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়েছি। আমরা চাই দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী রাহাতুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রতিনিয়তই শিক্ষকদের কাছে যাচ্ছি। স্যারদের বলেছি, আমাদের যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের মাফ করে দিন। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশে অনিচ্ছাকৃত যে কোনো ভুলের জন্য আমরা ক্ষমা চাচ্ছি। আমরাও ওই সময়ের ঘটনার বিচার চাই। স্যারদের সঙ্গে কোনো অন্যায় কেউ করলে সেটারও বিচার চাই। আমরা চাচ্ছি, বিচার প্রক্রিয়া চলতে থাকুক, পাশাপাশি ক্লাসটাও চলুক। না হলে বড় ধরনের সেশনজটে পড়তে হবে।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে সংঘর্ষে আহত হন শতাধিক শিক্ষার্থী। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। গত ১ মে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) অধ্যাপক হযরত আলীকে কুয়েটের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সিন্ডিকেট সভায় গত রোববার থেকে আবার শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।
গত ৫ মে সাধারণ সভায় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফারুক হোসেন ক্যাম্পাসে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সঙ্গে জড়িত এবং শিক্ষকদের লাঞ্ছনাকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের দাবি জানান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সাত কর্মদিবসের কথা বলেছিলাম। আশা করছি, এর আগেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।সার্বিক বিষয়ে কুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক আবদুল্লাহ ইলিয়াছ আক্তার বলেন, উপাচার্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে সংকট নিরসনের চেষ্টা করছেন। পরিস্থিতি এখন শান্ত, তবে ক্লাস হচ্ছে না। শিক্ষার্থী বা শিক্ষকদের কোনো মুভমেন্ট নেই।