কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) আইন বিভাগের স্নাতকোত্তর ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হওয়ার এক বছর পার হলেও ফলাফলের মুখ দেখেননি শিক্ষার্থীরা। অভিযোগ রয়েছে, এক সমন্বয়ককে সুবিধা দিতে ইচ্ছাকৃতভাবে ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব করা হচ্ছে। ফল প্রকাশ না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা চাকারির জন্য আবেদন করতে পারছেন না বলে জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে মাস্টার্স অব ল (এলএল.এম) ২য় সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয় গত বছরের ১৯ মার্চ। শেষ হয় ২৮ মার্চ। ডিফেন্স ও ভাইভা নেওয়া হয় গত সাত অক্টোবর। ভাইভা আরও আগে নেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীরা বললেও পরীক্ষা কমিটির প্রধান সহকারী অধ্যাপক আবু বকর সোহেল বিভিন্ন সমস্যার কথা বলে গড়িমসি করেন বলে জানা যায়।
ভাইভা শেষ হওয়ার সাত মাস হতে চললেও ফলাফল পাননি শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী, চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষ হওয়ার আট থেকে দশ সপ্তাহের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করার কথা রয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও কুমিল্লা জেলার আহ্বায়ক মো. সাকিব হোসাইনকে ফেল করেও ছাত্রত্ব রাখতে ফলাফল প্রকাশে গড়িমসি করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রাসেদুল ইসলাম বলেন, শুনেছি কয়েকজন শিক্ষার্থীকে একটি করে কোর্সে ফেল করানোর জন্য ফলাফল আটকে রাখা হয়েছে, যাতে তারা ক্যাম্পাসে থেকে রাজনীতি করতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহপাঠী জানান, সমন্বয়ক মো. সাকিব হোসাইন শিক্ষকদের অনুরোধ করেছেন তাকে ফেল করাতে, যাতে ক্যাম্পাসে থেকে রাজনীতি করতে পারেন এবং শিক্ষকদের রাজনৈতিক সুবিধা দিতে পারেন। এছাড়াও রেজাল্ট হলে তাকে হল ত্যাগ করতে হবে। হলে থাকার সুবিধার্থেই এমন ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়েছেন।
এই বিষয়ে জানতে সমন্বয়ক মো. সাকিব হোসাইনকে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তার সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।
ফলাফল প্রকাশ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে এক শিক্ষার্থীরা বলেন, রেজাল্টের কারণে আমরা চাকরিতে আবেদন করতে পারছি না। এছাড়াও উচ্চ শিক্ষার জন্য বাইরে আবেদন করতে পারছি না। এভাবে আমাদের বিড়ম্বনার মধ্যে ফেলার কোনো মানে হয় না।
এ বিষয়ে পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান মু. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, যে অভিযোগটি এসেছে তা মিথ্যা। আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ফলাফল আটকে রাখিনি। ফল প্রকাশ না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা থিসিস ডিফেন্সের জন্য আমাদের কাছে সময় চেয়েছিল। এছাড়াও এক্সটার্নাল শিক্ষকের কাছে খাতা যাওয়ার কারণে এবং বিভিন্ন সমস্যার কারণে দেরি হয়েছে। আমরা রেজাল্টগুলো পেয়ে তা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে পাঠিয়েছি।
বিভাগীয় চেয়ারম্যান মু.আলী মুর্শেদ কাজেম বলেন, ওই সময়ে বিভাগীয় চেয়ারম্যান ছিলেন পরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত। আমি সম্প্রতি বিভাগীয় চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। দায়িত্ব নেওয়ার পর মিটিংয়ে ফলাফলের বিষয়টি আমি উত্থাপন করেছি। অভিযোগ সম্পর্কিত কোনো তথ্য তার কাছে নেই বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে পরীক্ষানিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ নুরুল করিম চৌধুরী বলেন, বিষয়গুলো আমাকে দেখে জানাতে হবে। আপনি অন ‘ডে’ তে আসুন আপনাকে জানাতে পারব। এখন জানাতে পারছি না।
উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মাসুদা কামাল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য বিভাগগুলোতে যথাসময়ে পরীক্ষা ও ফলাফল প্রকাশিত হচ্ছে। আইন বিভাগের ফলাফল প্রকাশ না হওয়ার বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। যেহেতু এখন জেনেছি, অতিদ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।