মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) থেকে সরাসরি ইএফটিতে নাম অন্তর্ভুক্তকরণের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন জোরপূর্বক পদত্যাগ ও হেনস্তার শিকার শিক্ষকরা।
পদ-বঞ্চিত প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষক জোটের ব্যানারে বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) শিক্ষা ভবনের সামনে এ মানববন্ধন করেন তারা।
শিক্ষকরা বলেন, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিস্ময়কর অভ্যুত্থানের পর দেশে এক নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে। অথচ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একশ্রেণির সুবিধাভোগী শিক্ষকের প্ররোচণায় বহিরাগত স্বার্থান্বেষী মহল স্বীয় স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভুল বুঝিয়ে কর্মরত অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষকবৃন্দকে অপমান, অপদস্ত, হেনস্তা ও মারধর করে জোরপূর্বক পদত্যাগ করায়। কোথাও অপসারণ, বরখাস্ত, কর্মস্থলে বাধা ও বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জানা যায়, প্রায় দুই হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তিন হাজার শিক্ষক হেনস্তার শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে এ পর্যন্ত ৬ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। প্রায় ৫ শতাধিক আহত ও অসুস্থ হয়েছেন। মিথ্যা-মামলার কবলে পড়ে অনেকে জেল-হাজতে আছেন। তারা পদ-বঞ্চিত হয়ে বেতন-ভাতাদি না পেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। পবিত্র রমজান মাসের রোজা পালনেও চরম কষ্ট করছেন।
আরো বলেন, দেশের সেই সংকট মুহূর্ত থেকে প্রায় সব বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই পদ দখল ও লুটপাট করতে সুবিধাবাদী শিক্ষক এবং স্বার্থান্বেষী দুর্বৃত্তরা অবিরাম ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। এতে যেমন লেখাপড়া বিঘ্নিত হচ্ছে তেমনি আইন-শৃঙ্খলার বিপর্যয় ঘটছে। এসব বিশৃঙ্খলাকারী শিক্ষক ও বহিরাগত দুর্বৃত্তদের অন্যায় কর্মকাণ্ড দিনদিন বেড়েই চলেছে। তাদেরকে আইনের আওতায় এনে বিচার করে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। নতুবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনোভাবেই সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসবে না। শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মনোযোগী হতে পারবে না।
গত ২৭ আগস্ট ২০২৪ তারিখ ও ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখ শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যেসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অপকর্মের অভিযোগ আছে তা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। বেআইনি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণকারী এবং শৃঙ্খলাভঙ্গকারীদের চিহ্নিত করে প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৪/০১/২০২৫ ও ২০/০১/২০২৫ তারিখ সরকার হেনস্তার শিকার ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষকগণের বেতন-ভাতা চালুর প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারি আদেশ বাস্তবায়নের জন্য একাধিকবার পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। অথচ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ/প্রধান শিক্ষক বারবার সরকারি আদেশ অমান্য করে চলেছেন। তারা হেনস্তার শিকার শিক্ষকদের ইএফটিতে নাম যুক্ত করছে না। প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত ভাতাদি চালু করছে না। প্রতিষ্ঠানে প্রবেশে বাধা প্রদান করছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এক অরাজক পরিবেশ তৈরি করেছে। সাধারণ শিক্ষকদের জিম্মি করে তারা রাম রাজত্ব কায়েম করেছে। শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে, তহবিল তছরুপ ও লুটপাট শুরু করেছে। এ কারণে পদ-বঞ্চিত শিক্ষকেরা কর্মস্থলে যেতে পারছে না।
সমস্যা সমাধান প্রস্তাব নিম্নরূপ-
>> ঈদের পূর্বেই পদ-বঞ্চিত শিক্ষকদের বেতন-ভাতাদি চালু রাখার জন্য মাউশির ইএমআইএস সেল থেকে সরাসরি ইএফটিতে নাম অন্তর্ভুক্ত করা।
>> সরকারি আদেশ অমান্য করায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক/অধ্যক্ষকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
>> সসম্মানে স্বপদে বহাল করে কর্মস্থলের নিরাপত্তা বিধান করা।
>> অনতিবিলম্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বার্থলোভী ও শৃঙ্খলাভঙ্গকারীদের উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করা।
>> পদ-বঞ্চিত প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষকদের সমমানের এমপিওভুক্ত স্কুলে শূন্যপদে বদলির ব্যবস্থা করা।
বর্তমান সরকার ছাত্র-জনতার এই বিস্ময়কর অভ্যুত্থানে নতুন করে স্বপ্ন দেখার ও দেশ গড়ার কাজে সুযোগ দিয়ে সকল প্রকার নৈরাজ্য ও বৈষম্য দূর করে উক্ত প্রস্থাবনা বাস্তবায়নে যথা বিহিত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জোর অনুরোধ করেন তারা।