বেসরকারি মেডিক্যালে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন।
রোববার (১৫ জুন) বেলা ১১টার দিকে শিক্ষার্থীদের ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরে প্রবেশ করেন।
ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা বলেন, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ভর্তি কার্যক্রম শেষ হলেও এখনো প্রায় ৬০০টি আসন ফাঁকা রয়েছে। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) ডা. রুবীনা ইয়াসমিন গণমাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। অথচ এ পর্যন্ত দ্বিতীয় দফার কোনো ভর্তি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়নি। আসন ফাঁকা থাকাকালীন এই নীরবতা এক গভীর প্রশ্নের জন্ম দেয়-এটা কাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য?
সরকার চিকিৎসা শিক্ষার আসন সংখ্যা নির্ধারণ করেছে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রয়োজন বিবেচনা করে। সেক্ষেত্রে অনুমোদিত আসন পূর্ণ না হলে চিকিৎসা ব্যবস্থার ভবিষ্যত পরিকল্পনাই প্রশ্নের মুখে পড়ে। এটা শুধু একাডেমিক নয়, জাতীয় স্বার্থে আঘাত।
অন্যদিকে, এই ৬০০ ফাঁকা আসনের বিপরীতে রয়েছে হাজারো ছাত্রছাত্রীর অব্যক্ত কান্না, অনিশ্চয়তা আর স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা। অনেকে অনিচ্ছাকৃত ভুলের কারণে প্রথম দফায় ভর্তি হতে পারেনি-কেউ আবেদন করতে গিয়ে ভুল করেছে, কেউ নিশ্চায়ন করতে ভুল করেছে, কেউ হয়তো অর্থসংকটে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভর্তি ফি জমা দিতে পারেনি। এমন অনেক মেধাবী ছাত্রছাত্রী আছে, যাদের মেধাতালিকায় অবস্থান ছিল উচ্চে, তারাও এখনো অপেক্ষায়। কিন্তু সেই গল্পগুলো আজ স্তব্ধ হয়ে আছে এক নিষ্ঠুর ব্যবস্থার সামনে, যেটি শুধু বলে- পোর্টাল বন্ধ।
প্রতিবার ডিজিএমইতে যোগাযোগ করলে বলা হয়, মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেই। অথচ আমরা জানি, প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রিত এই পোর্টাল কোনো অলঙ্ঘনীয় সীমানা নয়। এটা খুলে দেওয়া এক ক্লিকের ব্যাপার মাত্র যদি সদিচ্ছা থাকে। তাহলে প্রশ্ন আসে-এই পোর্টাল কি এতটাই শক্তিশালী যে, সেটি শত শত তরুণ-তরুণীর ভবিষ্যতের চেয়ে বড় হয়ে যায় প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের।
তারা বলেন, বিষয়টি শুধু শিক্ষার্থী বা পরিবারের না, এটি রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনার ওপর সরাসরি আঘাত। সরকার তো দেশের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নের জন্য প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক মেডিক্যাল সিট নির্ধারণ করে। সেই হিসাব-নিকাশের ভেতরেই এসব আসন রয়েছে। তাহলে এগুলো পূর্ণ না হলে ক্ষতি কার? ক্ষতি রাষ্ট্রের, ক্ষতি সমাজের, ক্ষতি আমাদের সবার।
আরও বলেন, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসের ছাত্র অভ্যুত্থান কোনো সাধারণ রাজনৈতিক পরিবর্তন ছিল না। এটা ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে দেশের তরুণ প্রজন্মের আপসহীন অবস্থান। তাদের বুকের রক্ত, চোখের জল, নিঃশব্দ রাতের চিৎকার-এসবের বিনিময়ে এই দেশ এক নতুন পথে যাত্রা শুরু করে। তখন সবাই বলেছিল-এইবার সত্যের জয় হবে, ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা হবে। তবে আজ যখন শত শত শিক্ষার্থী এক ন্যায্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়, তখন প্রশ্ন উঠতে বাধ্য-এই সরকার কি সেই শিক্ষার্থীদের কথা ভুলে গেছে, যাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে এই নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছিল? হাজারো স্বপ্ন, শত শত সম্ভাবনা আজ থেমে আছে শুধুমাত্র একটি পোর্টাল খোলা হয়নি বলে এটা কি নতুন বাংলাদেশের চিত্র?
অথচ অতীতে এমনটা হয়নি। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষেই দ্বিতীয় দফায় ৮৫৫টি এবং তৃতীয় দফায় ৩২৮টি আসনের জন্য নতুন করে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল। এমনকি ক্লাস শুরুর পরেও ভর্তি নেওয়া হয়েছিল (স্মারক নং: ৫৯.১৪.০০০০.১০৩.৩১.০০১.২৪.৮৭৪ এবং ৫৯.১৪.০০০০.১০৩.৩১.০০১.২৪.৮৫২)। তাহলে এবার কেন ব্যতিক্রম?
আমরা আরও বিস্মিত হই, যখন দেখি, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত ৪৫% কোটা বজায় আছে, অথচ দেশের শিক্ষার্থীরা সুযোগ পাচ্ছে না। বাস্তবতাই হলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব নীতিমালায় বলা আছে, যদি বিদেশি শিক্ষার্থীদের আসন ফাঁকা থাকে, তাহলে তা দেশি শিক্ষার্থীদের দিয়ে পূরণ করতে হবে। তাহলে এখন সেই নীতি কার্যকর হচ্ছে না কেন?
এদিকে যারা প্রথম দফায় আবেদন করতে পারেনি, কেউ নিশ্চায়ন করতে ভুল করেছে, কেউ সময়মতো ভর্তি ফি দিতে পারেনি তাদের জন্য কোনো বিকল্প নেই। অথচ এদের অনেকেই ছিল অত্যন্ত মেধাবী, অনেকেই চূড়ান্ত মেধাতালিকার উপরের দিকে ছিল। আমরা নিজের চোখে দেখেছি, কতজন ছাত্রছাত্রী দুশ্চিন্তায়, ঘুমহীন রাত কাটাচ্ছে, কত পরিবার অপেক্ষা করছে একটা আশার মুখ দেখার জন্য।
এই ৬০০টি আসন কোনো সংখ্যা নয়-এগুলো ৬০০টি জীবন্ত সম্ভাবনা। যদি মেধা, মানবিকতা, এবং রাষ্ট্রীয় সদিচ্ছা থাকত, তাহলে এই সুযোগগুলো এখনো অগ্রাহ্য হতো না।
শিক্ষার্থীরা বলেন, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কাছে আমাদের জিজ্ঞাসা-এই ফাঁকা আসন পূরণ না করে, কাকে সন্তুষ্ট রাখছেন আপনারা?