কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজের হীরক জয়ন্তী | মতামত নিউজ

কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজের হীরক জয়ন্তী

কলেজের স্বানামখ্যাত শিক্ষার্থীর অন্যতম নৌবাহিনী সাবেক প্রধান ভাইস এডমিরাল (অব.) জেড ইউ আহমদসহ আরো অনেক বিশিষ্টজন।

এ বছর কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজের হীরক জয়ন্তী। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর স্মৃতিধন্য জনপদ কাপাসিয়া। বৃহত্তর ঢাকার গাজীপুর-কে জেলা ঘোষণার আগে বলা হতো ঢাকা সদর নর্থ। গাজীপুর জেলায় ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ।

শীতলক্ষ্যা বিধৌত ও নদী দ্বারা বিভক্ত কাপাসিয়া, প্রায় ৬০ শতাংশ শিক্ষিত অধ্যুষিত ‘শিক্ষা উপজেলা’ নামে খ্যাত। জ্ঞানতাপস ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ কলেজটি উদ্বোধনকালে বলেছিলেন ‘তিনটি ÔMÕ: man, money, mentality হলে সব হয়’। অথচ বিগত সরকারের বৈষম্যমূলক ও পক্ষপাতদুষ্ট পদক্ষেপে ঐতিহ্যের পাদপীঠ কাপাসিয়া কলেজের স্বপ্ন থাকলো অধরা ও অনালোকিত।

মাত্র ১৮ টাকা ফাণ্ড নিয়ে কাপাসিয়া কলেজের যাত্রা শুরু হয়। টিনের কৌটাকে দানবাক্স বানিয়ে বা ‘ডিব্বা হাতে’ ফান্ড সংগ্রহে গিয়ে অনেকে গাজীপুর জেলার শ্রীপুরের বরমী ও কিশোরগঞ্জের ভৈরবে লাঞ্ছিত হয়েছিলেন- কথাগুলো আজো কিংবদন্তিতুল্য।

কলেজের স্বানামখ্যাত শিক্ষার্থীর অন্যতম নৌবাহিনী সাবেক প্রধান ভাইস এডমিরাল (অব.) জেড ইউ আহমদসহ আরো অনেক বিশিষ্টজন। যাদের অবদান চিরস্মরণীয়:

১। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহামদ।

২। সাবেক মন্ত্রী ফকির আব্দুল মান্নান।

৩। ডা. মো. ছানাউল্লাহ্, সাবেক এমপি।

৪। সাবেক মন্ত্রী ব্রি.জে. আ.স.ম হান্নান শাহ্।

৫। মরহুম ছাদির মোক্তার।

৬। কাপাসিয়া পাইলট স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক সৈয়দ এহসান উদ্দিন আহমদ।

৭। প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ আলতামাছুল ইসলাম।

৮। কলেজের প্রথম ছাত্র মো. আতাউর রহমান।

গুণবান অসংখ্য ব্যক্তিবর্গ কলেজ প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ও আছেন। তারা কেউ নামের কাঙাল নন; বরং সনামে, সুনামে খ্যাত। এখানে আমার অপারগতার দায় ক্ষুদ্র পরিসর ও সীমাবদ্ধতা। বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও শাহ জালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর একেএম মাজহারুল ইসালামের নেতৃত্বে গঠিত সুযোগ্য গভর্নিং বডির নিবিড় তত্ত্বাবধানে কাপাসিয়া কলেজ বর্তমানে প্রাণচঞ্চল।

উপজেলা সদরে অবস্থিত কলেজটির জমির পরিমাণ ১৯ একর ১০ শতক। কলেজে এইচএসসি, ডিগ্রি (পাস) ও ৪ বিষয়ে অনার্স মিলে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। কলেজে ১টি তিন তলা, ৩ টি দুই তলা, ১ টি এক তলা ডরমেটরি ভবন, ১ টি নান্দনিক শহীদ মিনার রয়েছে। আর আছে অত্যাধুনিক চার তলা তথ্য প্রযুক্তি ভবন, তথ্য প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের বিভিন্ন গবেষণাগার এবং একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি। বিস্তীর্ণ খেলার মাঠ, বড় বড় ৩ টি পুকুর, ঈদগাহ্ ময়দান, সুরম্য মসজিদ, মন্দিরসহ শিক্ষার্থীদের আলাদা কমন রুমও বিদ্যমান। কলেজের আর্থিক অবস্থাও সন্তোষজনক।

সবুজ-শ্যামলে মনোরম কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ গাজীপুর জেলার প্রাচীন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কলেজটি কাপাসিয়া উপজেলা সদরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত সবচেয়ে সমৃদ্ধ ও একমাত্র পূর্ণাঙ্গ ডিগ্রি কলেজ।

বিগত সরকারের জাতীয়করণের মহা-মহড়ার সোনালি অধ্যায়ে অনেক কলেজ যখন আনন্দের জোয়ারে ভেসেছে, তখন নিরবে-নিভৃতে কাপাসিয়া সদরবাসী ও কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজের জন্য রচিত হয় এক বিবর্ণ আখ্যান!

২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চিঠিতে কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ সরকারিকরণের সদয় সম্মতি ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হয়। অথচ কলেজটি জাতীয়করণ হয়নি।

১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দ হতে আমি কাপাসিয়া কলেজে কর্মরত আছি। জীবন যৌবন ফুরিয়ে কেবল অবসরের অতলান্তে হারিয়ে যাওয়ার অপেক্ষা এখন। অন্যদিকে ছয় দশকের পথপাড়ি দিয়েও কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ জাতীয়করণ না হওয়ায় আমাদের সবারই লাঞ্ছিত-বঞ্চিত বোধ করাই তো স্বাভাবিক!

লেখক: বিভাগীয় প্রধান ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, কাপাসিয়া, গাজীপুর