সরাসরি নিবন্ধনে পরীক্ষার সুযোগ কওমি মাদরাসার জন্য ভালো | শিক্ষাবিদের কলাম নিউজ

সরাসরি নিবন্ধনে পরীক্ষার সুযোগ কওমি মাদরাসার জন্য ভালো

ইংলিশ মিডিয়ামে একটি বিষয় বহুদিন যাবত অনুসরণ করা হচ্ছে, যেটি আমাদের দেশের কওমি মাদরাসা শিক্ষায় চালু করা যেতে পারে। প্রস্তাবের মধ্যে সাধারণ ধারা ও কারিগরি শিক্ষাক্রম যুগোপযোগী করারও পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন কৌশল তুলে ধরা হয়েছে। কওমি শিক্ষার্থীদের বিষয়ে প্রস্তাবে বলা হয়েছে, কোনো কওমি মাদরাসা যদি সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবোর্ড ( আলিয়া মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড) থেকে পরীক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি নিতে পারে তাহলে সংশ্লিষ্ট মাদরাসার যোগ্য ও ইচছুক শিক্ষার্থীরাও রেজিষ্ট্রেশন ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন এবং পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা পরবর্তীতে যে কানো কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচচশিক্ষা গ্রহণের জন্য বিবেচিত হবেন। এটি আমরা সর্বান্তকরণে সমর্থন করি।

#মতামত #মাছুম বিল্লাহ

ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি কালচার গড়ে উঠেছে যেটিকে প্রশংসা করা যাবে না, তবে এটি একটি বাস্তব অবস্থা। এই মাধ্যমে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের দেখা যায় অষ্টম শ্রেণির পরে আর শ্রেণিকক্ষ কিংবা বিদ্যালয়ে যাননা।

সরাসরি নিবন্ধনে পরীক্ষার সুযোগ কওমি মাদরাসার জন্য ভালো

বাংলা মাধ্যমে যেমন এসএসসি পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের সাথে একটি সম্পর্ক থাকে, ইংলিশ মিডিয়ামে সেটি শক্তভাবে গড়ে ওঠেনি। শিক্ষার্থীরা অষ্টম শ্রেণির পরে প্রতিষ্ঠিত কিছু কোচিং কিংবা শুধু বিষয় শিক্ষকের কাছে পড়াশুনা ও বিষয়গুলো অনুশীলন করতে থাকেন ‘ও’ লেভেল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য।

এজন্য তারা ব্রিটিশ কাউন্সিল কিংবা অন্যকোন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করে থাকেন। এই রেজিস্ট্রেশনের জন্য পাসপোর্ট প্রয়োজন হয় এবং তারা তাই পাসপোর্টও করে ফেলেন।

আরো পড়ুন:

কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে

কওমি মাদরাসা শিক্ষার্থীরাও পাক সরাসরি নিবন্ধনে বোর্ড পরীক্ষার সুযোগ

ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াশুনা করা বেশ ব্যয়বহুল। তাই অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের আরও দুই বছর প্রতিষ্ঠানে পড়িয়ে অর্থ খরচ করতে চান না। সামর্থ্যবানরাও তাদের সন্তানদের প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে আর সময় নষ্ট করতে চান না। এটি কিন্তু প্রকৃত স্কুলিং নয়! কারণ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা সামাজিকীকরণসহ শিক্ষক শিক্ষার্থী সম্পর্ক, বিদ্যালয়ের অন্যান্যদের সাথে সম্পর্ক গড়া ও ভাব আদান-প্রদান, সমাজকে বুঝার সুযোগ পেয়ে থাকেন।

কিন্তু বিদ্যালয় ছেড়ে দেয়ার কারণে তারা এসব বিষয়ে পিছিয়ে থাকেন। তবে, শুধু নিবন্ধন করে ’ও’ লেভেল এবং ‘এ’ লেভেল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারার বিষয়টি পজিটিভ। কারণ শিক্ষার বিষয় শুধু প্রতিষ্ঠানের নিয়মকানুনের মধ্যে আটকে না রেখে শিক্ষার্থীদের নিকট উন্মুক্ত রাখা ভালো।

আরো পড়ুন: কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক

এই বিষয়টিই আমাদের দেশের কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে চালু করার একটি প্রস্তাব করা হয়েছে। কওমি শিক্ষার্থীদের উচচশিক্ষায় প্রবেশের সুযোগ অবারিত করার লক্ষেই প্রস্তাবটি করা।

এমন পরিকল্পনা, পর্যবেক্ষণ, যুক্তি ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার খসড়া প্রস্তত করেছে ডিআইইএ নামে পরিচিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিবদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর। সম্প্রতি দৈনিক আমাদের বার্তায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানলাম, ডিআইএর পরিচালক কওমি মাদরাসা শিক্ষার্থীদেরকে বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে নিবন্ধন করিয়ে দাখিল ও আলিম পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়ার প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের সচিবের বিবেচনার জন্য পাঠিয়েছেন।

বিষয়টি আমরা শক্তভাবে সমর্থন করি এবং এর মধ্যে একটু নতুনত্বের ছাপও পরিলক্ষিত।

ইংলিশ মিডিয়ামে একটি বিষয় বহুদিন যাবত অনুসরণ করা হচ্ছে, যেটি আমাদের দেশের কওমি মাদরাসা শিক্ষায় চালু করা যেতে পারে। প্রস্তাবের মধ্যে সাধারণ ধারা ও কারিগরি শিক্ষাক্রম যুগোপযোগী করারও পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন কৌশল তুলে ধরা হয়েছে।

কওমি শিক্ষার্থীদের বিষয়ে প্রস্তাবে বলা হয়েছে, কোনো কওমি মাদরাসা যদি সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবোর্ড ( আলিয়া মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড) থেকে পরীক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি নিতে পারে তাহলে সংশ্লিষ্ট মাদরাসার যোগ্য ও ইচছুক শিক্ষার্থীরাও রেজিষ্ট্রেশন ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন এবং পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা পরবর্তীতে যে কানো কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচচশিক্ষা গ্রহণের জন্য বিবেচিত হবেন। এটি আমরা সর্বান্তকরণে সমর্থন করি।

দেশের একমাত্র শিক্ষা বিষয়ক প্রিন্ট জাতীয় পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’র অনুসন্ধানে জানা যায়, বর্তমানে কওমির নিয়মিত শিক্ষার্থীরা সাধারণ ধারার আলিয়া মাদরাসার নিয়মিত ছাত্র না হলে শুধু নিবন্ধন করে দাখিল ও আলিম পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন না।

কেউ গোপনে নিবন্ধন করে ধরা পড়লে সংশ্লিষ্ট কওমি মাদরাসা থেকে বহিস্কার করা হয়। এক্ষেত্রে নিবন্ধনকারীর প্রকৃত শিক্ষা পদ্ধতি থেকে স্খলন ঘটেছে বলে ধরে নেয়া হয়। বিষয়টিতে পরিবর্তন আসা উচিত এবং সে লক্ষ্যেই ডিআইএ-র পরিচালক মহোদয় এই চমৎকার প্রস্তাবটি মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছেন।

আমরা আশা করি, মন্ত্রণালয় বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেবেন এবং কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের উচচশিক্ষার পথ উন্মুক্ত করবেন।

বাংলাদেশের মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা বিশেষ করে কওমি শিক্ষাকে আধুনিক ও সময়োপযোগী কারিকুলামের সঙ্গে সমন্বয় না করা হলে অর্থাৎ মূলধারায় না আনলে একটা বৃহৎ জনগোষ্ঠী অদক্ষ থেকে যাবেন।

ধর্মীয় শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে জাতীয় কারিকুলামের সঙ্গে সমন্বয় করে আধুনিক দক্ষতা, মূল্যবোধ, মানসিকতা তৈরি করার উপযোগী বিষয় সংযুক্ত করা হলে বৃহৎ জনগোষ্ঠী অদক্ষ থেকে যাবেন।

ধর্মীয় শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে জাতীয় কারিকুলামের সঙ্গে সমন্বয় করে আধুনিক দক্ষতা, মূল্যবোধ, মানসিকতা তৈরি করার উপযোগ বিষয় সংযুক্ত করা হলে বৃহৎ এ জনশক্তি কর্মশক্তিতে যুক্ত হবে। জাতীয় উন্নয়নে তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে। বর্তমানে কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের ফরমাল এডুকেশন বলতে আমরা যা বুঝি তার মধ্য দিয়ে যাচেছন না এবং মূলধারা থেকে বিচিছন্ন।

তাদের মধ্যে যদি কেউ সাধারণ ধারার মাদরাসা থেকে ডিগ্রি নিয়ে মূলধারায় আসতে চান, সেটি অপরাধের চোখে দেখা হয়। বিষয়টি দু:খজনকও। সেই দু:খজনক বিষয়টির প্রতি ডিআইএ এর নজর পড়া এক ধরনের পজিটিভ সাইন।

বাংলাদেশের কওমি মাদরাসা ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা সম্পর্কিত কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য কোন সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে নেই। তবে, দৈনিক শিক্ষাডটকম ও দৈনিক আমাদের বার্তা’র প্রধান সম্পাদক জনাব সিদ্দিকুর রহমান খান রচিত কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশণা গ্রন্থ থেকে জানা যায়, ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি ২০০৯ এর ৩ মার্চ ওয়াশিংটনে পাঠানো বার্তায় উল্লেখ করেছে, কওমি মাদরাসার সংখ্যা ২৩ থেকে ৫৭ হাজার।

ওই গ্রন্থ থেকে আরো জানা যায়, আওয়ামী লীগের একজন দলীয় সংসদ সদস্যের করা প্রশ্নের জবাবে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারিতে জাতীয় সংসদকে জানান, দেশে ১৯ হাজার ১৯৯টি কওমি মাদরাসা আছে।

তবে, তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বলেননি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন ব্যানবেইসের তথ্য অনুযায়ী ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে ১৩ হাজার ৯০২টি মাদারাসায় প্রায় ১৪ লাখ শিক্ষার্থী। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে ব্যানবেইসের জরিপ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান ৫ হাজার ২৫০টি।

লেখক: ক্যাডেট কলেজের সাবেক শিক্ষক

#মতামত #মাছুম বিল্লাহ