দীর্ঘ এক বছর বন্ধ থাকার পর, অবশেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সুইমিংপুলের কার্যক্রম পরীক্ষামূলকভাবে পুনরায় শুরু হয়েছে।
সোমবার (৫ মে) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, "দীর্ঘদিন পর সুইমিংপুলের কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে পেরে আমরা আনন্দিত। তবে, আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
প্রাথমিকভাবে সীমিত আকারে কার্যক্রম পরিচালিত হবে এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার, লাইফ গার্ড নিয়োগ ও অন্যান্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ করার পরই শিক্ষার্থীদের জন্য পুরোদমে সুইমিং এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করা হবে।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা চাই না আর কোনো দুর্ঘটনা ঘটুক। তাই, সুইমিংপুলের নিরাপত্তা সংক্রান্ত সকল দিক কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।"
উপাচার্য সুইমিংপুল পরিচালনা কমিটির সদস্যদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার এবং শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও সুইমিংপুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, "গত বছরের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পর আমরা সুইমিংপুলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছি। ইতোমধ্যে কিছু সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং লাইফ গার্ড নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের কাছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে।"
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা।
তিনি বলেন, "সুইমিং একটি গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক চর্চা এবং শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে সহায়ক। তবে, নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো আপস করা হবে না।
আমরা আশা করি, খুব শীঘ্রই শিক্ষার্থীরা একটি নিরাপদ পরিবেশে সুইমিং করার সুযোগ পাবে।"
এছাড়াও অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. শরীফ হোসেন, প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ, শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এস এম মোস্তফা আল মামুন এবং ভারপ্রাপ্ত পরিচালক এস এম জাকারিয়াসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২২ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিংপুলে গোসল করতে নেমে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী সোয়াদ হক মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন।
এই দুঃখজনক ঘটনার পরই সুইমিংপুলের কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সুইমিংপুলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনা এবং সংস্কারের উদ্যোগ নেয়।
সুইমিংপুলের পুনরায় কার্যক্রম শুরু হওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা আনন্দিত। তারা আশা করছেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে সুইমিং এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হবে এবং তারা নিরাপদে সুইমিং করার সুযোগ পাবে।
তবে, একইসাথে তারা কর্তৃপক্ষের কাছে সুইমিংপুলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, সুইমিংপুলের সংস্কার কাজ পর্যায়ক্রমে চলবে এবং খুব শীঘ্রই পর্যাপ্ত সংখ্যক লাইফ গার্ড নিয়োগ করা হবে।
এছাড়াও, সুইমিং করার সময় শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় নিয়মাবলী কঠোরভাবে অনুসরণ করার নির্দেশনা দেওয়া হবে।
পরীক্ষামূলক কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পরই শিক্ষার্থীদের জন্য সুইমিংপুলের দরজা পুরোপুরি খুলে দেওয়া হবে।