শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে: অধ্যাপক মামুন | বিবিধ নিউজ

শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে: অধ্যাপক মামুন

আমাদের সমাজ সত্যিকার অর্থে শিক্ষিত এবং সভ্য হতে চায়, তবে চিন্তাধারার এই মুক্তি অপরিহার্য। এই চিন্তার মুক্তিই আমাদেরকে সত্যিকার অর্থে সভ্য এবং মানবিক সমাজ গড়তে সাহায্য করবে।

#বিশ্ববিদ্যালয় #ছাত্র আন্দোলন #শিক্ষা #শিক্ষক

সমাজের অগ্রগতির জন্য সংকীর্ণ মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন বলে মন্তব্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বলেছেন, মানুষকে বিচার করতে হবে তার কাজ, নীতি এবং মানবিকতার ভিত্তিতে, শুধুমাত্র তার পরিচয় দিয়ে নয়। যদি আমাদের সমাজ সত্যিকার অর্থে শিক্ষিত এবং সভ্য হতে চায়, তবে চিন্তাধারার এই মুক্তি অপরিহার্য। এই চিন্তার মুক্তিই আমাদেরকে সত্যিকার অর্থে সভ্য এবং মানবিক সমাজ গড়তে সাহায্য করবে। আর এইজন্যই শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।

শুক্রবার (৯ মে) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে অধ্যাপক মামুন এ কথা বলেন।

অধ্যাপক মামুন লিখেছেন, কোন একটি বিতর্কিত ইস্যুতে একজন মানুষের অবস্থান যদি শুধুমাত্র তার দলীয় পরিচয় বা ধর্মীয় বিশ্বাস দেখেই অনুমান করা যায়, এবং এই অনুমান বারবার সত্যি হয়ে একটি প্যাটার্নে ফেলা যায় —তাহলে সেই মানুষটির চিন্তাভাবনার গভীরতা এবং বিচারশক্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলা অমূলক নয়। আমাদের সমাজে এমনটা এখন অনেকের ক্ষেত্রেই সত্যি হচ্ছে এবং এর সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। অনেক ক্ষেত্রেই কারো রাজনৈতিক মতাদর্শ বা ধর্মীয় পরিচয় জানলেই তার যে কোনো বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি কী হবে, তা সহজেই অনুমান করা যায়। এটি শুধু একটি ব্যক্তির চিন্তাধারার সংকীর্ণতাকেই তুলে ধরে না, বরং তার শিক্ষার প্রকৃত মান এবং মননের গভীরতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে দুঃখজনকভাবে এটি একটি সাধারণ প্রবণতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন অনেক মানুষ আছেন, যার সাথে কখনো দেখা হয়নি, কখনো পরিচয়ও হয়নি, শুধুমাত্র রাজনৈতিক বা ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে তাকে পছন্দ কিংবা অপছন্দ করে ফেলা হচ্ছে—এমনকি শত্রুও মনে করা হচ্ছে। এটা কেমন ধরনের মানসিকতা? একজন মানুষকে তার চিন্তাধারা, কাজ, নীতি এবং মানবিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে বিচার না করে, শুধু তার পরিচয়ের ভিত্তিতে তাকে ভালো বা খারাপ ভাবা কি সত্যিই মানবিকতার নিদর্শন হতে পারে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলেন, পদার্থবিজ্ঞান বলে, একটি সিস্টেমের ফলাফল যদি শুধুমাত্র তার শুরুর অবস্থা বা ইনিশিয়াল কন্ডিশনের ওপর নির্ভরশীল হয়, তাহলে সেই ফলাফলকে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয় না। কারণ, প্রতিটি ভিন্ন শুরুর অবস্থার জন্য ভিন্ন ফলাফল আসবে। পদার্থবিজ্ঞানের মূল আইন, সূত্র বা ফলাফল কিন্তু কখনো তার শুরুর অবস্থা বা কোথায় কিভাবে শুরু হয়েছে, তার ওপর নির্ভর করে না। এগুলো ইউনিভার্সাল—সময়, স্থান বা শুরুর অবস্থার পরিবর্তনে এর সত্যতা বদলায় না।

তিনি আরও বলেন, ঠিক তেমনই, যদি মানুষের চিন্তাধারা, মতামত এবং অবস্থান কেবল তার জন্ম, পরিবার, জাতি বা ধর্ম দ্বারা নির্ধারিত হয়, তবে সেটিকে কখনো স্বাধীন চিন্তার নিদর্শন বলা যাবে না। একজন মানুষ কেবল তখনই প্রকৃত শিক্ষিত, সভ্য এবং নৈতিক হতে পারেন, যখন তার মন-মানসিকতা, বিচারবোধ এবং আচরণ কেবলমাত্র দলীয় বা ধর্মীয় পরিচয়ের বাইরে গিয়ে তার ব্যক্তিগত মূল্যবোধ, মানবিকতা এবং সত্যের ভিত্তিতে গঠিত হয়।

#বিশ্ববিদ্যালয় #ছাত্র আন্দোলন #শিক্ষা #শিক্ষক