জুলাই অভ্যুত্থানের পর নতুন মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা-অনুমোদন বেড়েছে | Aliya madrasa নিউজ

জুলাই অভ্যুত্থানের পর নতুন মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা-অনুমোদন বেড়েছে

একই সময়ে সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পাঠদানের অনুমোদনের হার খুবই কম এবং একটা নির্দিষ্ট অঞ্চলের মধ্যে ঘটেছে।

#মাদরাসা #কওমি মাদরাসা

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর গত আট মাসে হু হু করে বেড়ে চলছে নতুন মাদ্রাসা স্থাপনের আবেদন এবং পুরনো আবেদন অনুমোদনের পদক্ষেপ গ্রহণ। এগুলো সরকার নিয়ন্ত্রিত আলিয়া মাদ্রাসার হিসেব। সরকারের নিয়ন্ত্রন বহির্ভুত কওমি মাদ্রাসার কোনো হিসেব পাওয়া যায়নি। মাদ্রাসার এই হিসেব-নিকেষের মধ্যে একই সময়ে সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পাঠদানের অনুমোদনের হার খুবই কম এবং একটা নির্দিষ্ট অঞ্চলের মধ্যে ঘটেছে। শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র জাতীয় প্রিন্ট পত্রিকা দৈনিক আমাদের বার্তার অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

জুলাই অভ্যুত্থানের পর নতুন মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা-অনুমোদন বেড়েছে

বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই পর্যন্ত আট মাসে নতুন দাখিল মাদ্রাসা স্থাপনের আবেদন হয়েছিল একটি। অন্যদিকে অভ্যুত্থানের পর আট মাসে নতুন মাদ্রাসা স্থাপনের আবেদন করা হয়েছে ১৮টি। এছাড়া অভ্যুত্থানের আগের আট মাসে পূর্ববর্তী সময়ে দাখিল মাদ্রাসাকে আলিম মাদ্রাসায় উন্নীত করার আবেদন ছিল তিনটি, আর পরের আট মাসে আলিম মাদ্রাসায় উন্নীত করার আবেদন ছিল ১২টি।

২০১১ থেকে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ১৩ বছরে দেশে নতুন মাদ্রাসা স্থাপন হয়েছিল ৫৪টি। এর মধ্যে ২০২১ থেকে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত নতুন মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১০টি। আর গত ৫ আগস্টের পর অভ্যুত্থানের আগে-পরে বিভিন্ন সময় করা আবেদনের প্রেক্ষাপটে অন্তত ৮২টি নতুন মাদ্রাসাকে পাঠদানের অনুমতি দেয়ার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

আরো পড়ুন: কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক

যেকোনো নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদানের অনুমতি দেয়ার আগে সংলগ্ন এলাকায় জিপিএস ম্যাপের ভিত্তিতে নিকটতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দূরত্ব পরিমাপ করে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড। এজন্য শিক্ষা বোর্ডগুলোর চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এ জিপিএস ম্যাপ সরবরাহ করে শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস)। ব্যুরো সূত্রে জানা গেছে, গত চার মাসে ব্যানবেইস এ ধরনের ১০৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জিপিএস ম্যাপ সরবরাহ করেছে। ব্যানবেইসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮২টিই মাদ্রাসা। এর মধ্যে ৫৮টির আবেদন করা হয়েছে গণ-অভ্যুত্থানের পর।

জুলাই অভ্যুত্থানের পর নতুন মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা-অনুমোদন বেড়েছে

জুলাই অভ্যুত্থানের পর নতুন মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা-অনুমোদন বেড়েছে

এছাড়া ৫ আগস্টের পর ২১টি সাধারণ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। এর সবগুলোই ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন।

আরো পড়ুন: কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে

মাদ্রাসা শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ১৬ বছরে মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জাতীয়করণ, উপবৃত্তি ও এমপিওভুক্তিতে নানা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। অভ্যুত্থানের পর এ শঙ্কা কমে যাওয়ায় নতুন মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার সাহস তৈরি হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীণ ব্যানবেইসের সর্বশেষ শিক্ষা পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে মোট মাদ্রাসার সংখ্যা ৯ হাজার ২৫৬। ২০১১ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত ১৩ বছরে প্রতিষ্ঠা হয়েছে ৫৪টি। এর মধ্যে ২০২০ পর্যন্ত ১০ বছরে নতুন প্রতিষ্ঠা হয়েছে ৪৪টি। আর ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসার সংখ্যা ১০।

নাম না প্রকাশের শর্তে মাদ্রাসা অধিদপ্তর ও মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মাদ্রাসার আবেদন জমা হলেও ইতিবাচক ফলাফল আসত না। গত বছর নতুন মাদ্রাসার আবেদন সংখ্যা ছিল খুবই কম। তবে অভ্যুত্থানের পর নতুন বেশকিছু আবেদন জমা হয়েছে এবং বোর্ড থেকেও দ্রুততার সঙ্গে এসব আবেদনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনসংখ্যা যাচাই, ক্যাচমেন্ট এরিয়ায় নিকটস্থ মাদ্রাসার দূরত্ব সংগ্রহসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

ব্যানবেইসের হিসাবে করোনার পর মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে মাদ্রাসায় ভর্তি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৪১ লাখ ২৬ হাজার ৬২৬ জন, যা দুই দশকের মধ্যে সর্বাধিক।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান, দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, করোনাকালে সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তুলনায় মাদ্রাসাগুলো কম সময় বন্ধ ছিল এবং সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষাব্যয় অনেক বেশি। মূলত এই দুই কারণে করোনার পরে মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী সংখ্যা বেড়েছে।

এছাড়া করোনার অভিঘাতে অনেক অভিভাবক হঠাৎ উপার্জনশূন্য হয়েছেন এবং তারা তাদের সন্তানদের থাকা ও খাওয়া নিশ্চিত করতে মাদ্রাসায় পাঠিয়েছেন, যোগ করেন তিনি।

দেশে মাদ্রাসা শিক্ষার প্রধান ধারা দুটো। একটা আলিয়া ও অপরটি কওমি। সরকার নিয়ন্ত্রিত আলিয়া মাদ্রাসাগুলো ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি এনসিটিবি প্রণীত কারিকুলাম অনুযায়ী শিক্ষাদান করে। নতুন আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করতে হলেও সরকারি নিয়মনীতি অনুসরণ করতে হয়। ব্যানবেইসের শিক্ষা পরিসংখ্যানে এসব মাদ্রাসার তথ্য প্রতি বছর হালনাগাদ করা হয়।

অপরদিকে কওমি মাদ্রাসা নিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য সরকারের কাছে নেই। এছাড়া এ ধরনের মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। দেশে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম বর্তমানে ছয়টি বোর্ডের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। অভ্যুত্থানের পর কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে বলে জানিয়েছেন এসব বোর্ড-সংশ্লিষ্টরা।

#মাদরাসা #কওমি মাদরাসা