ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছ নিষিদ্ধ | বিবিধ নিউজ

ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছ নিষিদ্ধ

পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের স্বার্থে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার পূরণে সরকারি, বেসরকারি সংস্থা ও ব্যক্তি পর্যায়ে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচীতে আগ্রাসী প্রজাতির ইউক্যালিপটাস এবং আকাশমনি গাছের চারা রোপণ, উত্তোলন ও বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হলো।

#গাছ

ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছ। ছবি : সংগৃহীতইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছ। ছবি : সংগৃহীত

আগ্রাসী প্রজাতির ইউক্যালিপটাস এবং আকাশমনি গাছের চারা রোপণ, উত্তোলন ও বিক্রয় নিষিদ্ধ করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।

বৃহস্পতিবার (১৫ মে) পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের বন- ১ অধিশাখার উপসচিব তুষার কুমার পাল স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ কথা জানানো হয়েছ।

প্রজ্ঞাপন বলা হয়, পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের স্বার্থে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার পূরণে সরকারি, বেসরকারি সংস্থা ও ব্যক্তি পর্যায়ে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচীতে আগ্রাসী প্রজাতির ইউক্যালিপটাস এবং আকাশমনি গাছের চারা রোপণ, উত্তোলন ও বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হলো।এই আগ্রাসী প্রজাতির গাছের চারা রোপণের পরিবর্তে দেশিয় প্রজাতির ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা রোপণ করে বনায়ন করতে হবে।

এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও জানানো হয়েছে।

সারা বিশ্বে প্রায় ৭০০ প্রজাতির ইউক্যালিপটাস আছে। বৈজ্ঞানিক ভাষায় একে ডাকা হয় ইউক্যালিপটাস ওবলিকোয়া। এই গাছের কিছু গুণাগুণ থাকলেও সাথে আছে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব।

ইউক্যালিপটাস হলো এমন একটি গাছ যা মাটি থেকে অতিমাত্রায় পানি শোষণ করে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটায়।

মাটির গুণাগুণের কারণে এটি বর্তমানে আমাদের দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চল এবং দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে বেশি রোপণ করতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু একটি ইউক্যালিপটাস গাছ তার আশপাশের প্রায় ১০ ফুট এলাকার ও ভূগর্ভের প্রায় ৫০ ফুট নিচের পানি শোষণ করে প্রস্বেদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রকৃতিতে ছেড়ে দেয়।

এই প্রক্রিয়াটি ২৪ ঘণ্টাই চলতে থাকে। ফলে দ্রুত মাটিতে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। এতে আশপাশের অন্য প্রজাতির গাছও জন্মাতে পারে না। গাছটি মাটিকে শুষ্কও করে ফেলে। ফলে মাটির উর্বরতা কমে যায়।

অবাক করা বিষয় হচ্ছে- গাছটি কেটে ফেললেও মাটির উর্বরতা ফিরে আসতে দীর্ঘ সময় লাগে। এমনকি এ গাছের ফুল ও ফল ঝরে পড়লে সেখানে পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দেয়।

এই গাছের ফুল এবং পাপড়িগুলো বাতাসে ছড়িয়ে পড়লে মানুষের শ্বাসনালীতে ঢুকে শ্বাসকষ্ট এবং হার্টের অসুখ সৃষ্টি করে। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, বাংলাদেশের জলবায়ুর জন্য অত্যন্ত বিপদজ্জনক গাছ হলো ইউক্যালিপটাস।

ইউক্যালিপটাসের পাতায় এক ধরনের অ্যান্টিসেপটিক থাকায় এর নিচে ছোট গাছ বাড়তে পারে না। মারা যায় পোকা মাকড়ও।

যেখানে একসঙ্গে সব ধরনের ছোট বড় গাছ ফসল এবং জলাশয় আছে সেই পরিবেশে এই গাছটি ব্যাপক ক্ষতিকারক।

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রোপণকৃত ইউক্যালিপটাস গাছের কারণে সেসব এলাকার ফসল ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেন এত বেশি ইউক্যালিপটাস?

গাছটি বেশি দেখা যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। সরকারি-বেসরকারি বেশিরভাগ স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে এই গাছ রয়েছে। রাজশাহী, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাসমূহ ও আশপাশের জেলাসমূহের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইউক্যালিপটাস গাছ সবচেয়ে বেশি।

প্রশ্ন হলো, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ইউক্যালিপটাস গাছ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেন? বাস্তবতা হলো, সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের অনেকেই এখনো দেশি ও বিদেশি গাছ আলাদা করতে পারে না।

তাই গাছের উপকার-অপকার সম্পর্কে অনেকেই ওয়াকিবহাল নয়। ক্ষেত্রবিশেষে কিছু কিছু বিদেশি গাছ এদেশের পথে-প্রান্তরে দেশি গাছের মতো করে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে সত্য, তবু বিদেশি গাছ দেশি গাছের মতো সামগ্রিক পরিবেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে না।

বিদেশি প্রজাতির ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছ এখন সবখানেই দেখা যায়! ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছের ক্ষতিকর প্রভাব অনেক।

ইউক্যালিপটাস গাছ প্রচুর অক্সিজেন শোষণ করে এবং নাইট্রোজেন ত্যাগ করে। প্রচুর পানি শোষণ করার ফলে এই গাছ আশপাশের জমির পানি শুষে নেয়।

এই গাছ কৃষিজমির গুণাগুণ ও উর্বরতা শক্তি নষ্ট করে। ইউক্যালিপটাস গাছের পাতা ও ডালপালা পচতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়, ফলে অজৈব পদার্থের মতো এই গাছের ঝরা পাতা জমির ক্ষতি করে।

ইউক্যালিপটাস গাছ অক্সিজেন শুষে নেওয়াসহ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় আশপাশের অন্যান্য গাছের খাদ্য তৈরির স্বাভাবিক প্রক্রিয়াও ব্যাহত হয়। এই গাছে পাখিও বসতে চায় না!

১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে ইউক্যালিপটাস গাছ বাংলাদেশে আনা হয় এবং সরকারি উদ্যোগেও সামাজিক বনায়নের আওতায় রোপণ করা হয়।

আকাশমনি ও ইউক্যালিপটাস গাছে কোনো ফল হয় না, শুধু দ্রুত সময়ে কাঠের আশায় এটা লাগানো হয়ে থাকে। কিন্তু দেশি গাছে ফল ও কাঠ দুটোই হয়। ইউক্যালিপটাস গাছে অন্য গাছের তুলনায় অতিরিক্ত তেল থাকায় এটা বেশ দাহ্যও বটে।

এই গাছের আবাসভূমি অস্ট্রেলিয়াতেও একে অগ্নি সৃষ্টিকারী হিসেবে ধরা হয়। জীববৈচিত্র্য রক্ষাসহ, প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্যের স্বার্থে ইউক্যালিপটাস গাছ রোপণ বন্ধ করা জরুরি।

২০০৮ সালে সরকার ইউক্যালিপটাস গাছের চারা উত্পাদন ও বিপণন নিষিদ্ধ করেই দায় সেরেছে। ফলে এখনো বন্ধ হয়নি ইউক্যালিপটাস গাছের চারা উত্পাদন, বিপণন ও রোপণ।

শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগে দেশি গাছের পরিচিতি ও গুরুত্ব তুলে ধরতে হবে। বিদেশি নয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দেশি গাছ লাগাতে হবে।

বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষা ও পরিবেশদূষণ রোধে দেশি গাছের বীজ সংরক্ষণ, দেশি গাছ উত্পাদন ও বিপণনে দেশের নার্সারিসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিয়োগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

#গাছ