মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন আজ | জম্মদিন নিউজ

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন আজ

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবী জুড়ে মানবিক মূল্যবোধের চরম সংকটময় মুহূর্তে বাংলা কথাসাহিত্যে যে কয়জন লেখকের হাতে বৈপ্লবিক ধারা সূচিত হয়, তাদের মধ্যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় অন্যতম।

বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন আজ। তিনি ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে বিহারের সাঁওতাল পরগনা,বর্তমান ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দুমকা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। পৈতৃক বাড়ি ঢাকার বিক্রমপুরের লৌহজং এ। তার প্রকৃত নাম প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবী জুড়ে মানবিক মূল্যবোধের চরম সংকটময় মুহূর্তে বাংলা কথাসাহিত্যে যে কয়জন লেখকের হাতে বৈপ্লবিক ধারা সূচিত হয়, তাদের মধ্যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় অন্যতম। তার রচনার মূল বিষয়বস্তু ছিলো মধ্যবিত্ত সমাজের কৃত্রিমতা, শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম, নিয়তিবাদ ইত্যাদি।

মাত্র ৪৮ বছরের জীবনে তিনি রচনা করেন ৪২টি উপন্যাস ও দু’শতাধিক ছোট গল্প। তার রচিত পুতুলনাচের ইতিকথা, দিবারাত্রির কাব্য, পদ্মা নদীর মাঝি ইত্যাদি উপন্যাস ও অতসী মামি, প্রাগৈতিহাসিক, ছোটবকুলপুরের যাত্রী ইত্যাদি গল্প সংকলন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ বলে বিবেচিত হয়। বাংলা ছাড়াও তার রচনাসমূহ বহু বিদেশি ভাষায় অনুদিত হয়েছে।

পিতার বদলির চাকরির সূত্রে মানিকের শৈশব, কৈশোর ও প্রথম যৌবনের ছাত্র জীবন অতিবাহিত হয় বাংলা-বিহার-ওড়িশার দুমকা, আরা, সাসারাম, কলকাতা, বারাসাত, বাঁকুড়া, তমলুক, কাঁথি, মহিষাদল, গুইগাদা, শালবনি, নন্দীগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, টাঙ্গাইল প্রভৃতি শহরে। তার মা নীরদাসুন্দরীর আদি নিবাস ছিলো পূর্ববঙ্গের গাউদিয়া গ্রামে।

এই গ্রামটির পটভূমি তিনি রচনা করেন তার প্রসিদ্ধ উপন্যাস ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’য়। পূর্ব বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণের কারণে ওই সব মানুষের জীবনচিত্র সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণা ছিলো মানিকের। তাই ওই অঞ্চলের সাধারণ মানুষের জীবনচিত্রকে তার সাহিত্যে অপূর্ব দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন। পদ্মার তীরবর্তী জেলেপাড়ার পটভূমিতে রচনা করেন ‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাসটি।

জীবনের প্রথম ভাগে তিনি ফ্রয়েডীয় মতবাদ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। এ ছাড়া মার্কসবাদও তাকে যথেষ্ট প্রভাবিত করেছিলো।

তার অধিকাংশ রচনাতেই এই দুই মতবাদের নিবিড় প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। তার প্রথম গল্পগুচ্ছ অতসী মামি ও অন্যান্য সংকলনে সব কয়টি গল্প এবং প্রথম উপন্যাস ‘দিবারাত্রির কাব্য’ মধ্যবিত্ত জীবনভিত্তিক কাহিনী নিয়ে গড়া। এছাড়া গ্রামীণ হতদরিদ্র মানুষের জীবনচিত্রও তার বেশ কিছু লেখায় দেখতে পাওয়া যায়।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্যে বস্তুবাদের প্রভাব লক্ষণীয়। মনুষ্যত্ব ও মানবতাবাদের জয়গানই তার সাহিত্যের মূল উপজীব্য। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের ভাঙাগড়ার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবকে তিনি তার সাহিত্যে চিত্রায়িত করেছেন। সমাজের শাসক ও পুঁজিপতিদের হাতে দরিদ্র সমাজের শোষণ-বঞ্চনার স্বরূপ তুলে ধরেছেন সাহিত্যের নানান চরিত্রের আড়ালে।

তার ছোটগল্প অতসী মামী, প্রাগৈতিহাসিক, সরীসৃপ, সমুদ্রের স্বাদ, হলুদ পোড়া, আজ কাল পরশুর গল্প, ফেরিওয়ালা ইত্যাদি। পদ্মানদীর মাঝি ও পুতুলনাচের ইতিকথা উপন্যাস দুটি তার বিখ্যাত রচনা। এ দুটির মাধ্যমেই তিনি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। পরবর্তীতে পদ্মানদীর মাঝি চলচ্চিত্রায়ণ হয়েছে।

শেষ জীবনে তিনি চরম অর্থ কষ্টে ভুগেছেন। কিন্তু তবুও সাহিত্যকেই তিনি তার পেশা হিসেবে আঁকড়ে ধরে রেখেছিলেন। ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩ ডিসেম্বর আটচল্লিশ বছর বয়সে বিংশ শতাব্দীর বাঙলা ভাষার অন্যতম শক্তিশালী এ কথাসাহিত্যিক পরলোকগমন করেন।