দক্ষিণ আফ্রিকার পূর্বাঞ্চলীয় ইস্টার্ন কেপ প্রদেশে ভারী বৃষ্টি ও তুষারঝড়ে সৃষ্টি হওয়া ভয়াবহ বন্যায় স্কুলশিক্ষার্থীসহ প্রায় ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া নিখোঁজ শিশুদের খোঁজে অভিযান চলছে।
বুধবার (১১ জুন) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
এদিকে পূর্বাঞ্চলীয় ইস্টার্ন কেপ প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অস্কার মাবুয়ানে বলেছেন, ঘণ্টায় ঘণ্টায় মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ।
এর আগে, গত মঙ্গলবার সকালে মথাতা শহরের একটি সেতু পার হওয়ার সময় একটি বাস পানির তোড়ে ভেসে যায়। বাসে থাকা চারজন শিশু, চালক ও কন্ডাক্টরসহ ছয়জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
মাবুয়ানে জানান, বাসটি পরবর্তীতে একটি নদীর পাড়ে পাওয়া গেলেও এর ভেতরে কেউ ছিল না। এখনো চারজন শিশুর খোঁজে উদ্ধার অভিযান চলছে।
স্থানীয় এক কর্মকর্তা টিভি চ্যানেল নিউজরুম আফ্রিকাকে জানান, বাসচালকসহ আটজনের মরদেহ পাওয়া গেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থা এসএবিসি জানিয়েছে, তিনজন শিশু জীবিত উদ্ধার হয়েছে—তারা গাছে উঠে বন্যার পানি থেকে বাঁচার চেষ্টা করছিল।
জানা গেছে, বাসটিতে মোট ১৩ জন ছিলেন, যাদের মধ্যে ১১ জনই স্কুলশিক্ষার্থী।
এছাড়া বুধবার সকালে প্রাদেশিক মুখ্যমন্ত্রী দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং মথাতা শহরের কাছে ডেকোলিগনি গ্রামে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি বলেন, শত শত মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে অস্থায়ী আশ্রয়ে রাত কাটাচ্ছেন।
মাবুয়ানে স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রশংসা করে বলেন, বন্যা শুরু হতেই যারা প্রতিবেশীদের সতর্ক করেছে ও নিখোঁজদের খোঁজে সহায়তা করছেন, তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।
তিনি আরও জানান, ইস্টার্ন কেপের ৫৮টি স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বিশেষ করে ওআর টাম্বো, আমাথোলি ও আলফ্রেড নজো জেলার তিনটি এলাকায়।
ইস্টার্ন কেপের পাশের প্রদেশ কোয়াজুলু-নাটালেও দুর্যোগ দেখা দিয়েছে। সেখানে ৬৮টি স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এখনো কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। বৃষ্টি ও তুষারঝড়ের পাশাপাশি প্রবল বাতাসে গত মঙ্গলবার থেকে প্রায় ৫ লাখ বাড়ি বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ সংস্থা এসকম জানিয়েছে, বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরায় চালুর চেষ্টা চলছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা নিহতদের পরিবারকে শোক জানিয়ে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, শীতকালীন আবহাওয়ার ভয়াবহতা যখন তীব্র হচ্ছে, তখন আমাদের আরও সতর্কতা, সহানুভূতি ও সহযোগিতা দরকার।
এই ভয়াবহ শীতপ্রবাহ সবচেয়ে বেশি আঘাত হেনেছে ইস্টার্ন কেপ ও কোয়াজুলু-নাটাল প্রদেশে। উল্লেখ্য, ইস্টার্ন কেপই দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার জন্মস্থান। এছাড়া দুর্যোগের কারণে দুটি প্রদেশের বড় কিছু মহাসড়কও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যাতে আর প্রাণহানি না ঘটে। উদ্ধারকাজ এখনও চলছে।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ আফ্রিকায় জুন থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত শীতকাল থাকে, এ সময় তাপমাত্রা প্রায়ই হিমাঙ্কের নিচে নেমে যায়। এই সময়টায় বরাবরই তুষারপাত ও বন্যা হয়ে থাকে, তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এখন বৃষ্টিপাত আরও তীব্র ও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।
এর আগে গত ৩০ এপ্রিল থেকে ২ মের মধ্যে আকস্মিক বন্যা ও নদীর পানি উপচে পড়ায় প্রায় ৪ হাজার ৫০০ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অন্তত ১৮ জন আহত হন।